কী করতে চায় আ.লীগ-বিএনপি ও জামায়াত?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ১১:২১ এএম
কী করতে চায় আ.লীগ-বিএনপি ও জামায়াত?

ঢাকা: ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াত সমাবেশের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে ওইদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও পুরো ঢাকায় ছড়িয়ে থাকবেন তাদের নেতাকর্মীরা।

এরইমধ্যে বিএনপি বলেছে স্মরণকালের সেরা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ করতে চায় তারা। তবে নয়াপল্টনে দলটি অনুমতি পাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। অন্য কোথাও পাঠাতে চাইলেও বিএনপি যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকায় দশ লাখ নেতাকর্মীকে কর্মসূচিতে উপস্থিত করার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। আর একইদিনে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপথ আন্দোলনে থাকা ৩৬টির মতো দলও মাঠে থাকবে।

সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে দফায় দফায় বৈঠক করণীয় নির্ধারণ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। আপাতত ছুটিও বাতিল করা হয়েছে সদস্যদের।

জানা গেছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি, ঢাকা মহানগর ও দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। এছাড়া দেশের সব সাংগঠনিক বিভাগ, মহানগর ও জেলা ও উপজেলার পর্যায়েও হচ্ছে প্রস্তুতি সভা। এছাড়াও সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা।

গত ২৩ অক্টোবর প্রস্তুতি সভায় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান নেতাকর্মীদের বলেছেন, ‘২৮ অক্টোবর থেকে যেই মহাযাত্রা শুরু হবে, ছাত্রদল সেখানে অতীতের মতোই ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করবে।’

কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘সরকারের পতন অনিবার্য। মহাসমাবেশে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করলে এরা পালিয়ে রক্ষা পাবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

২৮ অক্টোবর ঘিরে বসে নেই আওয়ামী লীগও। ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগিতা, ভ্রাতৃপ্রতীম সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকাজুড়ে পাহারা দিতে বলছেন নেতারা।

নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাস্তা ছাড়বেন না। আক্রমণ করব না, এ পর্যন্ত করিনি, এ পর্যন্ত আমরা বিরোধী দলের ওপর। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ করব। কোনো ছাড় নয়।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘২৭ থেকে (২৭ অক্টোবর) চোখে ঘুম থাকবে না। প্রয়োজনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। যেখানে আমার অস্তিত্বের প্রশ্ন সেখানে ঘুম দিয়ে কি করব।’

আর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ওইদিন শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগমের ঘোষণা দিয়েছেন।

এছাড়াও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ঢাকায় বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রতিটি ওয়ার্ডে মিছিল করার কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের পর থেকে যুদ্ধাপরাধীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে রাজনীতির বাইরে চলে যাওয়া জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে আবারও আলোচনায় আসে জামায়াত। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারাও ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে অনড় বলে জানিয়েছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জামায়াত সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না। অনুমতি ছাড়া মাঠে নামলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর প্রশাসন অনুমতি না দিলেও যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করবে দলটি। মতিঝিল জায়গা না পেলেও তার আশপাশে যেকোনো জায়গায় শোডাউন করতে চায় দলটি।

উৎকণ্ঠায় নগরবাসী

একইদিন সব দলের নেতাদের ঢাকা দখলে নেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে জনমনে। বিশেষ করে রাজনীতির বাইরে থাকা নাগরিকদের উদ্বেগ যেন কয়েকগুন বেশি।

ঢাকার মনিপুর স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন, ’২৮ তারিখের আগে কি বাস চলাচল বন্ধ থাকবে?’ কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বরিশাল গিয়ে শুক্রবার আবার ফিরতে চেয়েছিলাম। বাস বন্ধ থাকলে তো সম্ভব হবে না।’

মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, ’২৮ তারিখ ছুটি নেব কিনা ভাবতেছি। সবাই মাঠে নামলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। আর মারামারি শুরু হলে কে বাঁচে, কে মরে তা কেউ জানে না। পরিবারের লোকজনও টেনশনে আছে।’

যারা কর্মসূচি দিয়েছেন তাদের মধ্যেও উদ্বেগ আছে ২৮ অক্টোবর ঘিরে। ঢাকার একটি সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, ‘ওইদিন কি হবে বুঝতেছি না। তবে মাঠে থাকার কড়া নির্দেশনা আছে। কর্মসূচি ঘোষণার পর বাসা ছাড়া। একেক দিন একেক জায়গায় ঘুমাচ্ছি।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। রোববার অথবা সোমবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে। এরপর আরও কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনায় আছে হাইকমান্ড। তবে এরপর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি টেনে নিতে চান নেতারা।

এমএস 

Link copied!