ঢাকা: বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির আজ শেষ দিন। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে পুলিশি হামলা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দলটির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলো এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে রাস্তায় যানবাহন চলাচল কিছুটা বেড়েছে। একইসাথে বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচলও।
এদিন রাজধানীর নর্দা কালাচাঁদপুর, কোকাকোলা, নতুন বাজার, বাঁশতলা, শাহজাদপুর ও উত্তর বাড্ডা এলাকায় সাধারণ দিনের মতোই গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় গণপরিবহন ছিল কিছুটা কম।
এদিকে দেশব্যাপী টানা তিন দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বুধবার ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ চলাকালে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে অন্তত ২১টি অগ্নিসংযোগের খবর পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫টি, ঢাকা বিভাগে ৭টি (সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ), চট্টগ্রাম (কর্ণফুলী, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড) এবং রাজশাহী (বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও রংপুর) বিভাগে ৪টি করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সারাদেশে ১০টি বাস, ৩টি কাভার্ডভ্যান, ৩টি ট্রাক, একটি পিকআপ, একটি মোটরসাইকেল, দুটি বাণিজ্যিক পণ্যের শোরুম ও একটি পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে অবরোধ কার্যকর করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। তারা ঢাকা, বগুড়া, ফেনী ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ে।
ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় সকাল ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অবরোধ চলাকালে বুধবার ঢাকার মুগদা এলাকার আইডিয়াল স্কুলের সামনে দুর্বৃত্তরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। অবরোধের সমর্থনে মিছিলের পিকেটাররা সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামে পৃথক ঘটনায় একটি বাস ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার জাহেদুর রহমান জানান, সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে দুর্বৃত্তরা একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া চট্টগ্রামনগরীর কোতোয়ালি থানাধীন কদমতলী এলাকা থেকে ককটেলসহ একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সকাল ১১টার দিকে সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবী ও ছাত্র সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে বিএনপির যুবদল- ছাত্রদল ও জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের সমর্থকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
বরিশালে মঙ্গলবার রাত ও বুধবার অবরোধকে কেন্দ্র করে বিএনপির সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সকালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বান্দা রোডে অবরোধের পক্ষে মিছিল করেছে ছাত্রদল। দূরপাল্লার কয়েকটি বাস শহর ছেড়ে গেলেও পরে যাত্রী সংকটের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের ট্রিপ বাতিল করে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দিতে দেখা গেছে।
খুলনায় অবরোধের দ্বিতীয় দিন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শহরের রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে কম ছিল।
অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনার খবর না পাওয়ায় রংপুরে শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালন করা হয়েছে।
বগুড়ায় অবরোধের সমর্থকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, ভাঙচুর ও যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সমর্থকরা রাস্তায় ব্যারিকেড বসানোর চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে বিএনপির অন্তত ছয় নেতাকর্মী আহত হন। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তারা রেলগেট এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করার সময় পুলিশ হঠাৎ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। অবরোধ চলাকালে জেলায় তিনটি কাভার্ডভ্যান ও একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।
অবরোধকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিএনপির ৪৬ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন দিনে জেলায় বিএনপি-জামায়াতের ১৫৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় নাশকতার একটি মামলা করা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর রামপুর এলাকায় দুটি আন্তঃজেলা বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ছিল লক্ষণীয়।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :