ঢাকা : বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে নির্বাচনী ট্রেনের কথা বলেছেন তা গন্তব্যে পৌঁছাতে দেবে না মুক্তিকামী জনতা। সুমতি হলে তার আগেই সরকারের ফ্যাসিবাদ মডেলের নির্বাচনী মডেল থামিয়ে জনগণের দাবি মেনে নিন। অন্যথায় এক্সিডেন্ট অথবা পতন অনিবার্য।’
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘দেশ-বিদেশের সবাই শেখ হাসিনার আসন্ন অভিনব ভোট ডাকাতির ফর্মূলা আগে ভাগেই জেনে গেছে। সহযোগী নির্বাচন কমিশন রকিব ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ১৫৪ জনকে বিজয়ী করে রেকর্ড গড়েছেন। হুদা কমিশন ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ব্যালটে সিল দিয়ে ভোট ডাকাতির অভূতপূর্ব রেকর্ড তৈরি করেছে বিশ্বে। এবার ফ্যাসিবাদের দোসর কাজী হাবিবুল আওয়াল সরকারের “চুজ অ্যান্ড পিক” করা হবে ভোটের রাতে ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে। বাংলাদেশে যে তথাকথিত নির্বাচনের পায়তারা চলছে তা ভোটারদের নয়, জনগণের জন্য নয়, এটা হতে চলেছে সরকারের আরেকটি কদর্য রাজ্যাভিষেকের উৎসব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ট্রেনের সব যাত্রীতো নৌকা আর আওয়ামী লীগের গণবিচ্ছিন্ন লোকজন। নগদ টাকায় ক্রয় করা কতিপয় উচ্ছিষ্টভোগী বেঈমান গণশত্রুকে ছলে বলে কৌশলে ভাগিয়ে নিয়ে সঙ্গে ট্রেনে তুলেছে। ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোটের খোয়াবে যারা এলাকায় গেলে ভোটবঞ্চিত মানুষের গণধোলাইয়ের শিকার হতে পারে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ ইউরোপ-আমেরিকা নিশ্চিত হয়েছে যে, আরেকটি তামাশার পাতানো নির্বাচনরঙ্গ মঞ্চস্ত করতে চলেছে এই সরকার। এ কারণে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে এই ভূয়া নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। অন্য সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’
রিজভী বলেন, ‘গোটা বিশ্ব যখন বাংলাদেশের ভোটাধিকার বঞ্চিত, গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে সরব তখন গত ১৫ বছর ধরে বিনা ভোটে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতাদখল করে থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। রাশিয়া-চীনেতো গণতন্ত্র নেই। আমাদের কাছের প্রতিবেশী ভারত, যে রাষ্ট্রটি গণতান্ত্রিক এবং গণতন্ত্রের ঐতিহ্য আছে। সেই ভারত সরকার সরাসরি কিভাবে একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়?’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে জাতীয় নির্বাচনকে দূরে রাখতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পেছনে সুকৌশলে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিয়ে চিহ্নিত মাফিয়া চক্রকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার গত একযুগে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড় লাখেরও বেশি মামলা দিয়েছে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসব ভুয়া মামলায় ৫০ লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ধরণের অনাচার বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারবাহিনী এবং তাদের সহযোগী সঙ্গী রাজাকারবাহিনীর চরিত্রে গড়ে ওঠা আওয়ামী হানাদার বাহিনীর নির্যাতন নিপীড়নে সারাদেশে বিএনপির দুই কোটির বেশি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের চেয়েও বিচার বিভাগের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর। মিথ্যা কিংবা গায়েবি মামলা দিয়ে পুলিশ যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফাঁসাচ্ছে একইভাবে কতিপয় বিচারকও বিরোধী দলকে ফাঁসাতে আদালতকে ব্যবহার করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে এখন শুধু গায়েবি মামলাই নয়, গায়েবি বিচারও চলছে। বিএনপি নেতাকর্মী যারা কয়েকবছর আগে ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকেও কারাদন্ড দেয়া হচ্ছে। এর মানে, গায়েবি মামলার যেমন কোনো তদন্ত হচ্ছে না অপরদিকে আদালতে মামলার কোনো শুনানিও হচ্ছে না।’
সারা দেশে নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপির ৩১৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১২টি, আসামি করা হয়েছে ১৩১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এছাড়া গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ৬ হাজার ৩৯০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ২১৮টি, মোট আসামি ২৫২০০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ৮৫৭ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।’
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :