বিবিসির প্রতিবেদন

টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : আর মাত্র পাঁচদিন পর ৭ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, কিন্তু এই নির্বাচনের ফলাফল ইতিমধ্যেই নিশ্চিত বলছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি নিউজ।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও প্রতিপক্ষ দলগুলোকে নিয়ে সোমবার (১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় এবং তাদের অনেক নেতাকে কারাগারে পাঠানোর কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই টানা চতুর্থ সংসদীয় মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে।

বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে বিশ্বাস করেন না তারা।

বিএনপির আরও অভিযোগ যে ব্যালটে প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগ, এবং যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের সহযোগী।

বিএনপির সিনিয়র নেতা আব্দুল মঈন খান বিবিসিকে বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র মারা গেছে। জানুয়ারিতে আমরা যা দেখতে যাচ্ছি তা একটি জাল নির্বাচন।

উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র বিবিসিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বছরের পর বছর ধরে ক্রমশ স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও তার প্রশাসনকে জবাবদিহি করছে না।

যদিও বিএনপির এই অগণতান্ত্রিক সরকারের অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেন, জনগণের ভোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন নির্ধারিত হয়। এই নির্বাচনে বিএনপি ছাড়াও অনেক রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।

তবে বিবিসি জানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে একসময় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্রতম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের। ২০০৯ সাল থেকে তার নেতৃত্বে অবিশ্বাস্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে এই অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল নাগাদ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়েছে এবং বি গত ২০ বছরে আড়াই কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।

তবে মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে লড়াই করছে জনগণ। গেল নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় ৯.৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন থেকে বর্তমানে ২০ বিলিয়নে নেমে এসেছে যা তিন মাসের আমদানির জন্য যথেষ্ট নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমালোচকরা বলছেন যে প্রধানমন্ত্রীর শাসনামলে অর্থনৈতিক সাফল্য পেলেও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সমালোচককারী এবং গণমাধ্যমে তার দমনমূলক কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ চিহ্নিত হয়েছে।

বিবিসি আরও জানায়, আগস্টে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১৭০ জনেরও বেশি বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনাকে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিচারিক হয়রানি’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন।

এছাড়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কারণে হাজার হাজার সমর্থকসহ বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ ‘কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগে" গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, এমনকি লাখ লাখ দলীয় কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

যদিও সরকার এটা অস্বীকার করে।

বিবিসি আরও বলছে যে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং অন্যান্য অপব্যবহার বেড়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি বিরোধী সমর্থকদের গ্রেপ্তারকে সরকারের ‘হিংসাত্মক স্বৈরাচারী ক্র্যাকডাউন’ বলে অভিহিত করেছে।

একসময় বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন এমন একজন নেতার এই পরিবর্তনকে অসাধারণ বলছে বিবিসি।

উদাহরন হিসেবে ১৯৮০-এর দশকে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য বিরোধী নেতাদের সাথে গণতন্ত্রের পক্ষে রাস্তায় বিক্ষোভের বিষয়টু তুলে ধরেছে বিবিসি।

ওই সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সেই বিক্ষোভকে ‘যুদ্ধরত বেগম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু বেগম জিয়া বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে কার্যকরভাবে গৃহবন্দী এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতার সম্মুখীন, ফলে বিএনপির গতিশীল নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলছে বিবিসি।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ক্যারেন মেলচিওর বলেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের উচিত বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে জবাবদিহি করা। বাংলাদেশ থেকে পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’

বিবিসি জানায়, প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করে থাকে। কারণ দিল্লি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তার উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যে সড়ক ও নদী পরিবহনের সুবিধা চায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই শেখ হাসিনা সীমান্ত এলাকায় ভারতের উত্তর-পূর্বে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে কাজ করার কারণে এখনও দিল্লির প্রচুর সমর্থন পাচ্ছেন।

বিবিসি বলছে, আপাতত শেখ হাসিনার ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার বলে মনে হচ্ছে। তবে তার কর্তৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ শীঘ্রই অন্যান্য মহল থেকে দেখা দিতে পারে।

অর্থনীতির সংকট এড়াতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। তাই নির্বাচনের পর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারকে কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিবিসি আরও বলছে, নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার বিরোধীরা হয়তো দাঁড়াবে না, কিন্তু তার কঠোর নীতির কারণে জনগণের যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে তা শেখ হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগের জন্য প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

এমটিআই

Link copied!