জিএম কাদের

দল টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম
দল টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, আমি আগেই বুঝেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। তিন বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। তবে ভোট ভালো হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিষ্কার বুঝেছি, তিনটি বিদেশি বড় শক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তারা নয়, আরও বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ছিল। অনেকটা চাপে পড়ে, অনেকটা বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদেরও নির্বাচনে যেতে হয়েছে।

 

শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের এ দাবি করেন। 

গত বছরের ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মতামত দেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ভোটে অংশ নেয় দলটি। মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। দলের তৃণমূলের নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কেন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তা বর্ধিত সভায় জানিয়েছেন জিএম কাদের। এ সময় তিনি নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিও ব্যাখ্যা করেন।

জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন বন্ধ করে কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করছে। নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছিল। ভোটে না গেলে ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা সন্দেহ ছিল, তাই নির্বাচনে গিয়েছি। আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন সুষ্ঠুভাবে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। মনে হয়েছে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি বিভিন্নভাবে নানা দিকে নিচ্ছিলেন। আর বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল তারা সফল হবে না। আন্দোলন চলাকালে তৃতীয় শক্তি এসে সরকার পরিবর্তন করে, এমন ইতিহাস বাংলাদেশে নেই। ফলে বিএনপির ১ কিংবা ১০ লাখ বা ১ কোটি লোক নিয়ে রাস্তায় নামলেও বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না, তা বুঝতে পেরেছিলাম।

তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনে পরাস্ত হয়ে জাতীয় পার্টিকে দোষ দিচ্ছে। তবে এটা ঠিক নির্বাচন ভালো হয়নি। সরকার জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত দল হিসাবে দেখতে চায়, যা কখনও সম্ভব নয়। জাতীয় পার্টি কখনোই অনুগত বিরোধী দল হবে না। গৃহপালিত বিরোধী দল হবে না। 

জাতীয় পার্টি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিলেও চাপের মুখে তা পালটাতে বাধ্য হন দাবি করে জিএম কাদের বলেন, কোন্দল করে দল ভেঙে দেওয়া হবে-এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সবাইকে (দলের প্রার্থী) জানিয়ে দিলাম নির্বাচনে যাব না। কিন্তু ১৭ ডিসেম্বর সকালে আমার ওপরে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে চাপ আসল। প্রত্যক্ষভাবে সেটা বলব না, কিন্তু পরোক্ষভাবে হলো, আমাদের দলের ভেতরে কোন্দল তৈরি করে দল ভেঙে দেওয়া হবে। আর তখন আমার মতো ওয়েল ইনফর্মড নেতা দেশে কমই ছিল। আমি জেনে গিয়েছিলাম, কিছু শক্তিশালী দেশ এই সরকারকে জয়ী করতে চায়। তাই আমি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে সরকার আমাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশনে গেল।

আওয়ামী লীগ প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র কায়েম করছে বলেও মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, জনগণ ভোট দিতে চায় না, এটা হচ্ছে বিরাজনীতিকরণ। এসব করে আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক দলের চরিত্র হারিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের স্পেস দেওয়া হচ্ছে না। ক্ষমতা সব এককেন্দ্রিক। উনার (প্রধানমন্ত্রী) ইচ্ছায় ভোট হয়। কেউ ভোট করলে উনার অনুমতি নিয়ে করতে হবে। এভাবে চললে দেশে কোনো দলই টিকবে না। এখন এমন অবস্থা করা হয়েছে যে, রাজনীতি করলে হয় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে হবে।

প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে জাতীয় পার্টির জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা বর্ধিত সভায় যোগ দেন। এছাড়াও দলের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বর্ধিত সভায়। চেয়ারম্যান, মহাসচিব, কো-চেয়ারম্যানরা ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যরা। ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, উপদেষ্টা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা ছিলেন সামনের সারিতে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাসের মাথায় এসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর কলেবরের এই সভায় মাঠের নেতারা তাদের মান-অভিমানের কথা তুলে ধরেন। অনেকে এ সময় ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামী দিনে জাতীয় পার্টির করণীয় সম্পর্কেও মতামত দেন। পবিত্র কুরআন থেকে তেলায়াতের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। এরপর শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি স্বাগত বক্তব্য দেন। 

আইএ

Link copied!