ঢাকা : ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে রোববার (১ সেপ্টেম্বর)। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পরে মুক্ত পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সুযোগ পাচ্ছে দলটি। যদিও বন্যার কারণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে।
সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’- এই চারটি মূলনীতির ভিত্তিতে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। নানা চরাই-উত্তরাই পেরিয়ে দেশের বৃহৎ দলের একটি বিএনপি। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নানা সংকটের মুখেও ভাঙেনি দলটি।
৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে–রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় ঢাকাসহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে দলের মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় নেতাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, জোহরের নামাজের পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা, সম্প্রতি ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদ নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবাইকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এখন গণতন্ত্রকে নির্বাসন থেকে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। আইনের শাসন, মতপ্রকাশ, সংবাদ পত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেড়যুগব্যাপী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার হোক বাংলাদেশকে নিপীড়ন-নির্যাতনসহ সব পৈশাচিকতা মুক্ত একটি সুস্থির-শান্তিময় নাগরিক অধিকার সুরক্ষার দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
দেশজুড়ে যেন আর কখনোই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো ঘৃণ্য বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি না হয়। জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।
এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন, বন্যার কারণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত টাকা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। তবুও এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বেশ ব্যতিক্রমী ভাবেই দেখছেন নেতারা।
বিএনপির নেতাদের ভাষ্য, গত ১৬ বছর যে নির্যাতন করা হয়েছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ওপর হয়নি। ফলে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ মিলেছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ার পর অন্তর্বতী সরকার এসেছে। তাদের কাছে আশা করছি একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করবে। গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেখানে বিএনপিও সাধ্যমত সহযোগিতার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য এখানে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করা।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশে একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে যাওয়া। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করা। পাশাপাশি দৃঢ় জনমত তৈরি করা। সবচেয়ে গূরত্বপূর্ণ হলো–দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও সন্দেহ-সংশয় ও সমন্বয়হীনতা পাশ কাটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকা। সে লক্ষ্যে এরমধ্যেই কাজ শুরু করেছে দলটি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর চার ইস্যুতে সর্বাধিক মনোযোগ বিএনপির। এগুলো হচ্ছে—আন্দোলনে হতাহতদের খোঁজ নেওয়া এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপকভিত্তিক ত্রাণ বিতরণ; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি; নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের খোঁজখবর নিচ্ছে বিএনপি। দলটির পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) এবং বিশেষ সেল ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
দেশের পূর্বাঞ্চলে হঠাৎ বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি শতাধিক আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন।
গত ২৯ আগস্ট রংপুর সাংগঠনিক বিভাগের অধীনে থাকা জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি মতবিনিময় সভায় বিএনপিতে কোনো দুষ্কৃতকারীর ঠাঁই নেই উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেছেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথ পরিস্কার করতে চায় দলটির সিনিয়র নেতারা। ফলে কৌশলের অংশ হিসেবে অন্তবর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দিয়ে এই সময়ের মধ্যে দলের পুনর্গঠন, মামলা প্রত্যাহার এবং বিশেষত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরিয়ে আনার পথ পরিষ্কার করতে চান নেতারা। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার এবং নির্বাচন নিয়েও নিজস্ব মতামত রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :