ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপি ও জামায়াতের ‘দুই ধরনের অবস্থান’ ফুটে উঠল। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করলেও জামায়াত বলেছে, ‘নির্বাচনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার’।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার এই সংলাপ শুরু হয় বিএনপিকে দিয়ে। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আলোচনা শেষে জামায়াতের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি।”
তবে আলোচনা শেষে জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে দলটির আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, “এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছে। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা ‘বঞ্চিত’ হয়েছে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন আমরা সেই বিষয়ে কথা বলেছি।”
জামায়াত কী কী প্রস্তাব করেছে, তা এখনি সামনে আনতে চান না দলটির আমির। জানান, আগামী বুধবার তা প্রকাশ করা হবে। “৯ অক্টোবর আমরা আমাদের চিন্তা জাতির সামনে তুলে ধরব, এই মুহূর্তে কী কী সংস্কার প্রয়োজন, সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে কী কী আমাদের লাগবে; আমরা মনে করি, নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপির মত জামায়াতও রোডম্যাপ চায় জানিয়ে শফিকুর বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছি। একটি সংস্কারের ও অন্যটি নির্বাচনের। সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ।”
গত ৮ আগষ্ট সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করে শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো কথা বলছে না। সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের কথা বলা আছে। দৈব দুর্বিপাকে সেটি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়ার সুযোগ আছে।
৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর মির্জা ফখরুল বিভিন্ন দলের নেতাদেরকে নিয়ে প্রথমে সেনাপ্রধান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি সংবিধান ভেঙে দেবেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
শুরুতে বিএনপি নির্বাচন প্রশ্নে ‘যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও গত ২৪ আগষ্ট থেকে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, তারও বিরোধিতা করছেন মির্জা ফখরুল। তার অবস্থান হল, ‘সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’। দেশ দ্রুত গণতন্ত্রে না ফিরলে ‘অন্য ব্যবস্থা’ ঢুকে পড়বে, এমন আশঙ্কার কথাও বলেন তিনি।
তবে বিএনপি যখন থেকেই ভোটের দাবি তুলে আসছে, তখন থেকেই জামায়াত আমির এর বিরোধিতা করছেন।
গত ২৬ অগাস্ট ঢাকায় এক আলোচনায় বিএনপিকে ধুয়ে দিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, দলটির এক আলোচনায় বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এখন জাতি বহুমুখী সংকটে, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে, আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, পা হারা, হাত হারা, চোখ হারা, কী কষ্টের মধ্যে তারা আছে। আবার ইতিমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে।
যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে… রাজনীতি তো জনগণের জন্য তাদের তো উচিত এই বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই সময়টায় ওখানে না দাঁড়িয়ে যদি নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির করলে জাতি তা কবুল করবে?”
এর প্রতিক্রিয়ায় ২৮ অগাস্ট জামায়াতকে পাল্টা জবাব দিয়ে ফখরুল বলেন, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করে।
নাম উল্লেখ না করে দুই যুগের জোটসঙ্গীকে সেদিন ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলেও আক্রমণ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যে বিশ্বাস করে না, সেই ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না।
নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াতের যে এখনও কোনো তাড়াহুড়া নেই সেটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তৃতীয় দফা সংলাপেও ফুটে উঠেছে।
শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত সংস্কারকে এক নম্বরে গুরুত্ব দিচ্ছে। সংস্কারের টাইমলাইন কী হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দুইটা বিষয় দেশবাসীর কাছে চেয়েছি এবং সরকারের কাছে জানিয়েছি। একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের, আরেকটা নির্বাচনের। সংস্কার সফল হলে নির্বাচন সফল হবে। দুইটা বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
জামায়াত আমির বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবে জাতিকে। আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে, এটা নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করব। ‘এক্সট্রা’ দেরি হবে না। এভাবে আমরা সামনে আগাতে চাই।”
অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে বলেও আশার কথা বলেন তিনি। সংস্কার প্রশ্নে দলের অবস্থান তলে মির্জা ফখরুল একাধিকবার বলেছেন, তারা মনে করেন, এসব করবে নির্বাচিত সংসদ।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :