ঢাকা: বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি শিগগির ঘোষণা করা হবে, এমনটি জানিয়েছেন দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। নতুন কমিটিতে জায়গা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন পদপ্রার্থীরা।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, কমিটিতে কাদের নেতৃত্বে আনা হবে হবে, তা নিয়ে কাজ চলছে। যেকোনো সময় কমিটি ঘোষণা করবে বিএনপির হাইকমান্ড।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা বেশি, অভিজ্ঞতা আছে, ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, যাদের কাছে জনগণের জানমাল ও সম্মান নিরাপদ, তাদেরই নেতৃত্বে আনা উচিত। তারা আশা করছেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে বিএনপির হাইকমান্ড।
তারা আরও বলছেন, দলীয় রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকে, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা কাম্য নয়। এক পক্ষ আরেক পক্ষের অপপ্রচারে লিপ্ত। এমন কাউকে দায়িত্বে আনা দরকার, যিনি তার তার অভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে উত্তর বিএনপিকে আরও সংগঠিত করতে পারবেন।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সাংগঠনিকভাবে দক্ষ অসংখ্য নেতা রয়েছে। সে তুলনায় উত্তরে নেতা কম। তাই দক্ষ নেতার হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভেঙে দেওয়া উত্তরের কমিটিতে পদ পাওয়া বেশ কয়েকজনকে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে। আগের কমিটির অনেকেই আবারও নেতৃত্বে আসতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরের নেতৃত্বে সাবেক আহ্বায়ক ও যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নাম শোনা যাচ্ছে। দুইবারের সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হকও রয়েছেন আলোচনায়।
এ ছাড়া সভাপতি বা আহ্বায়ক পদে আলোচনায় রয়েছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এমএ কাইয়ুম, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও এ জি এম শামসুল হক।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় রয়েছেন আহসান উল্লাহ চৌধূরী হাসান, ফয়েজ আহমেদ ফরু, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, এস এম জাহাঙ্গীর, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ফখরুল ইসলাম রবিন, গোলাম কিবরিয়া মাখন ও এ বিএম রাজ্জাক।
এর মধ্যে আক্তার হোসেন, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন আগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
ছাত্রনেতা মশিউর রহমান সোহান বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা উত্তরের নেতৃত্বে দক্ষ ও যোগ্য সাংগঠনিক নেতা চান।
শেরেবাংলা নগর থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালামত খান সজিব বলেন, যিনি দলের বিভিন্ন পদে নেতৃত্বের পরীক্ষা দিয়েছেন, সব নেতা-কর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন, তাকেই আনা হোক।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসাইন মতি বলেন, অভিজ্ঞতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা আছে, ইমেজ ক্লিন, এমন নেতৃত্ব চান নেতা-কর্মীরা। নিশ্চয়ই হাইকমান্ড মাঠের নেতা-কর্মীদের গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব উপহার দেবে।
কেন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভূমিকা পালন করতে পারিনি, সেজন্য হয়তো কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
সভাপতি পদপ্রার্থী সাইফুল আলম নীরব বলেন, আমার দল যা ভালো মনে করবে, সেটিই করবে। আমি কনভেনার ছিলাম। তাই আমি সভাপতি পদ আশা করতেই পারি।
আমিনুল হক বলেন, আমি অতীতে সদস্যসচিব হিসেবে দলকে সুসংগঠিত এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছি। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা মাথা পেতে নেব। আশা করি দল যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবে।
পদপ্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, আশা করি আগামী কমিটিতে দল মূল্যায়ন করবে।
কফিলউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, তিন যুগ থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকিনি। সব কিছু বিবেচনা করে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।
ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি গঠনের কাজ চলছে। শিগগির ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কোনো কারণ উল্লেখ না করে আড়াই মাসের ব্যবধানে সাইফুল আলম নীরব ও আমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দলের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :