ঢাকা : রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি ঘিরে দেশে ‘নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট’ যেন সৃষ্টি না হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সে বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে ওঠার মধ্যেই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদও এই প্রতিনিধি দলে নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ছিলেন।
বৈঠক শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিএনপির তিন নেতা। বৈঠকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে কি না– সেই প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্পেসিফিক কোনো ব্যাপার না। আমরা বলেছি দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করব।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে আসছেন, তারই ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক।
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য যে সংস্কার চলছে সে কাজ জোরদার করার জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেইসব সংস্কার দ্রুত করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আলোচনা আমরা করছি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণ যে কষ্ট পাচ্ছে, তা দূর করার ব্যাপারে সরকারকে ‘আরো কঠোর ও কার্যকর ভূমিকা’ পালনের পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা।
তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে, নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তনের সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরো সুদৃঢ় করা দরকার।
এখানে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি পেশার সংগঠন, ছাত্র-যুব সংগঠন, সবার দৃঢ়তর ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। যাতে কেউ কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে না পারে, এভাবে সবাইকে হুশিয়ার থাকতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই সংস্কারগুলো করার দাবি তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জনগণের চলমান সংকটগুলো নিরসন করার, আন্দোলনের ‘মূল আকাঙ্ক্ষা’ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কথা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন।
আমরা বলেছি, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনো সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট করার চেষ্টা করে, তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব।
তুমুল গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না, সে বিষয়টি নিয়ে আড়াই মাস পর বিতর্ক তৈরি হয় রাষ্ট্রপতির একটি কথায়।
দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগের কথা শুনেছেন, কিন্তু কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
ওই বক্তব্য মানবজমিনের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি চাপে পড়েন। প্রথমে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দাবি করেন, সাহাবুদ্দিন ‘মিথ্যা’ বলে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকে বঙ্গভবনের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা পদত্যাগ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সন্ধ্যার পরপর বঙ্গভবনের সামনের অবস্থান ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে। তারপরও মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে বঙ্গভবনের বাইরে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বলছেন, সংসদ কার্যকর না থাকায় সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুযোগ আর নেই। তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। সরকার তাকে পদত্যাগ করতে বলতেও পারে। আবার বিষয়টি নিয়ে সরকার সুপ্রিম কোর্টের মতামতও চাইতে পারে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :