ঢাকা: ছাত্রলীগের পর এখন নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, নিষিদ্ধ হতে পারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ও সহযোগী জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে এই দলগুলির কয়েকটি সরাসরি সরকারের মন্ত্রিসভায় অংশ নিয়েছে। আবার কোনো কোনোটি নির্বাচনী সহযোগী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ও জোটের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পাশাপাশি দলটির অঙ্গসংগঠনগুলি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ও সহযোগী দলগুলোকে নিষিদ্ধেরও দাবি উঠেছে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের স্বৈরশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এবং এই দলগুলো সেই কাজে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগসহ এই দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার দাবি সম্প্রতি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষপটে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সরকার নিষিদ্ধি করেছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে। ওই দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেয়। এর পর রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও এ ধরনের চাপ আসতে পারে, এমন ধারণাও করা হচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়ে এসেছে।
গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র অধিকার পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২১ অক্টোবরর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্যানারে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। গত ১৯ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন, ১৪ দল ও অঙ্গসংগঠন এবং জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিবাদী দল আখ্যা দিয়ে সাংবিধানিকভাবে এসব দল নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। গত ২৩ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।
গত ১৪ আগস্ট ঢাকা কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি থেকে এবং অন্যান্য্য দুই একটি সংগঠন ও ফোরাম থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় এ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আদালতে দাবি জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গত ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ অন্য্যান্য আসামিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর দল হিসেবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে এ অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে ‘গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা’ হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি, সাম্যবাদী দলসহ ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ‘দল হিসেবে’ গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। এই প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রজ্ঞাপন অথবা আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগও এর জোট সঙ্গী দলগুলোও নিষিদ্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :