‘খালেদা জিয়া কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি’

  • পাবনা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ১২:১৬ এএম
‘খালেদা জিয়া কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি’

পাবনা: জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংসদ (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলহাজ হাসানুল ইসলাম রাজা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কখনও নীতির সঙ্গে আপস করেননি। জেল খেটে সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি আপসহীন নেত্রী।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে পাবনার চাটমোহর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আর আমরা কি করছি। ৫ তারিখ চলে যেতে না যেতেই চাটমোহরের টেম্পু স্ট্যান্ড, মাছের বাজার, গরুর হাট দখল। বিগত চার মাস ধরে চাটমোহরে চলছে দখলের রাজত্ব। চাটমোহরের মানুষ মুখ বুজে আছে, শক্ত কোনো মানুষ তারা পাচ্ছে না এর প্রতিবাদ করার। আমি রাজা এসে গেছি চাটমোহরের মাটিতে। থাকবো ইনশাআল্লাহ আমৃত্যু পর্যন্ত। আমি কথা দিচ্ছি সমাজের প্রতিটা স্তরে যেখানেই হবে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাজনীতির নামে অপরাজনীতি কর্মকাণ্ড, সেখানেই আমরা শক্ত হাতে প্রতিহত করবো।

রাজা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরের এত নির্যাতন, নিপীড়ন, অত্যাচার, নিষ্পেষণ, শোষণ, আয়না ঘর, গুম, খুনের মধ্যে আমি শেখ হাসিনার সরকারকে ট্যাক্স দেই নাই। গত চার মাস যাবত চাটমোহরের মাটিতে, কেউ অমুক দল, কেউ তমুক দল, কেউ অমুক নেতা, তমুক নেতা নিয়ে ব্যস্ত। হায়রে নেতা আর গ্রুপ। ভাইরে ভাই তোদের কাছে মাফ চাই। তোদের কাছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও ফেল মাইরে যাবি। তোরা এখনও এমপি হইস নাই, এখনই তোরা যে কাজ শুরু করুছু চাটমোহরের মানুষ কয়দিন পর তোদের ঝাড়ু দিয়ে তাড়াবে আর পিটাবে। আমি হাসানুল ইসলাম রাজা আপনাদের সাথে থেকে এর জন্য সংগ্রাম করবো।’

থানায় দালালে ভরে গেছে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সাধারণ মানুষের জন্য সেবা দেয়ার জন্য সদা প্রস্তুত ও আন্তরিক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন থানায় দুই থেকে আড়াইশ' মানুষ থানায় বসে থাকে। আমরা যদি প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ' মানুষ থানায় গিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দখল করে থাকি, তাহলে থানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে কাজ করবেন। এতে করে তাদের কাজে বিঘ্ন ঘটছে, আমরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

হাসানুল ইসলাম রাজা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সমাজে বিভিন্ন ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা চালিয়ে যাচ্ছি রাজনীতির নামে। রাজনীতির নামে বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতা কেউ এমপি হওয়ার বাসনায়, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার মোহে, কেউ নেতা হওয়ার মোহে, কেউ থানা বিএনপির সভাপতি হবেন, সাধারণ সম্পাদক হবেন, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হবেন, এই সমস্ত স্লোগান দিয়ে চাটমোহরের প্রত্যেকটা ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে রাজার মিছিলে কেউ যাবে না। তোমার যদি আমাকে হুমকি ধামকি দিতে আসো তাহলে রাজনীতিতে বড় ভুল করবে। আমি হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে চাটমোহরের সর্বস্তরের জনগণকে, যেখানেই সন্ত্রাস হবে, চাঁদাবাজি হবে, যেখানেই নিপীড়ন হবে, জমি দখল হবে, যেখানেই দুর্নীতি হবে সেখানেই আমি রাজা চাটমোহরের আপামর মানুষকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।

রাজা বলেন, যে দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর পুনরায় স্বাধীন হয়, সেই দেশের নাগরিক আর কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। সে দেশের মানুষ কোনো নিপীড়ন, নিষ্পেষণ, দুর্নীতিবাজকে আর প্রশ্রয় দেবে না বলে বিশ্বাস করি। আগামীদিনের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে প্রথমত হতে হবে সৎ। দুর্নীতি করে, চাকরি বাণিজ্য করে, ঘুষ বাণিজ্য করে, জমি দখল, চাঁদাবাজি করে, থানার দালালি করে বাংলাদেশের মাটিতে আপনারা কেউ বিএনপির রাজনীতি করতে পারবেন না, এটা অন্তত নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি।

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম কঠিন নির্বাচন। এ কথা আমার নয়। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা। তাই আগামী নির্বাচনে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের মানুষ আপনারা যারা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, আপনাদের মধ্যে যাকে সবচেয়ে বেশি সৎ, চরিত্রবান, যোগ্য ও আদর্শবান মনে করবে, যাকে নীতিবান মনে করবে, তাকেই তারা নেতা হিসেবে বেছে নেবে এবং তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে তাকেই পাবনা-৩ আসন থেকে মনোনয়ন দেবেন।

চাটমোহর পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম মাস্টার, আলামিন তালুকদার, রবিউল করিম, আবু হানিফ, রেজাউল করিম বাবু, মনিরুল ইসলাম চঞ্চল, নজরুল ইসলাম, গোলজার হোসেন, রাজিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন, শাহজাহান আলী মেম্বার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএনপি নেতা জহরুল ইসলাম মাস্টার।

এর আগে হাসানুল ইসলাম রাজা ঢাকা থেকে সড়ক পথে কাছিকাটা হয়ে চাটমোহরে আসলে তাকে আনন্দ মিছিল নিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তাকে নিয়ে একটি মিছিল পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়।

 

এসএস

Link copied!