মির্জা ফখরুল

দেশ গড়ার জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
দেশ গড়ার জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে

ঢাকা: ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

শুক্রবার সকালে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জাহেদা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আল আবদুল্লাহ, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আ ন ম গোলাম রব্বানী, দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার, পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা রাজনীতি করছি, আমাদের ব্যর্থতা ৫৩ বছরেও বাংলাদেশকে একটা সুখী, শান্তিময়, প্রেমময় দেশ গড়তে পারলাম না। আমরা রাজনীতি নিয়ে সংকীর্ণতায় ভুগি এবং নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছি। আমরা যে গর্বিত জাতি, কিছুদিন আগেও সেটা বলতে পারিনি। এখন আবার সেই আশা জেগে উঠেছে, আমরা একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। 

সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সুখী, সুন্দর, প্রেমময়, গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করবার, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আমাদের গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যের সাথে দেশটাকে নির্মাণ করার যে পথরেখা দেখাবে, এই জায়গায় আমাদের এখনো ব্যর্থতা আছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি, কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করি না। ১৫ বছর ভোট দিতে পারিনি। এ কেমন গণতন্ত্র, যেখানে মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশে পরপর গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যদি সহনশীলতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে সত্যিকার গণতন্ত্র লাভ হবে। আমরা অধিকার অর্জন করতে পারব।’

দেশে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ছেলেরা, রাজনৈতিক কর্মীরা জীবন দিয়েছেন। দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক-অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের ৮০০ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখের অধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কী ভয়ংকর অবস্থা আমরা পার হয়েছি। 

আজ নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি না, আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারছি না। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন জানাব, আসুন, আমরা উঠে দাঁড়াই। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে সুস্পষ্ট সত্য সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করি।’

তরুণদের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের তরুণেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে মতামত নিচ্ছে দেখে মনে হলো অমিত সম্ভাবনাময় আমাদের ছেলেমেয়েরা। তাঁরা দেশপ্রেমের কথা, পরিবর্তনের কথা বলছেন। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ নির্মাণ করবার একটা পথও তাঁরা দেখাতে পারেন। সুতরাং নেতিবাচক চিন্তা করলে হবে না। আমাদের পরস্পরকে সহনশীলতার মধ্য দিয়ে আনতে হবে, সম্মান করতে হবে। আমি যে রাজনৈতিক চিন্তাই করি না কেন, যদি দেশপ্রেম থাকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই আজকে যে সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগের যেন সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারি।’

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। সেই হিসাবে গত ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়নের ওপরে পাচার হয়েছে।

এরা তো এ দেশেরই মানুষ। রাজনীতির কথা বলেই তাঁরা এসেছিলেন। কিন্তু ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। সমস্ত ক্ষমতা ও রাষ্ট্রকে দখলে নিয়ে রাষ্ট্রে একটা ভয়ভীতি তৈরি করেছিলেন। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করব।’ 

এআর

Link copied!