ফাইল ছবি:
ঢাকা: পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, একটি মহল বর্তমান সংস্কার এবং নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলছে, এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। যারা সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, তাদের বলতে চাই- যেটি শেষ হয়ে যায়, সেটি সংস্কার নয়। কারণ সংস্কার কখনো শেষ হয় না। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের সম্মানে এ ইফতারের আয়োজন করে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধান যেটিকে ইচ্ছামতো কাটাছেঁড়া করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করে ফেলেছিল। বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে খেতাবি কিংবা পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে দিয়েই শুধু সংস্কার প্রক্রিয়া টেকসই, সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গণইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই ফ্যাসিবাবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সংশয় ও সন্দেহের জন্ম দেওয়া হচ্ছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবারও বলতে চাই- সরকারের এমন কোনো পক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। এমন পরিস্থিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারা দেশে ঘাপটি মেরে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। সুতরাং সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। কারণ নাগরিকরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হলে কোনো সংস্কারই কিন্তু টেকসই হবে না।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট মাফিয়া সরকারের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ায় এক অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সামনে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ এবং পেশাজীবীদের দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির স্বার্থেই পেশাজীবীদের সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পেশাজীবীদের মেধা ও অভিজ্ঞতা রাষ্ট্র উন্নয়ন পরিকল্পনায় কাজে লাগানোর সুযোগ অবশ্যই রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক সাংগঠনিক কাঠামোতে পেশাজীবীদের অনেকের পক্ষেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ হয়তো সীমিত। সেজন্য রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিশিষ্টজন এবং পেশাজীবীদের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি সংবিধানে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একটি রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীরা একে-অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্রে সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীর ভূমিকা দুর্বল থাকলে সুস্থ ও সবল রাজনীতি আশা করা যায় না, একইভাবে দেশের রাজনীতি রুগ্ন হলে সুশীল সমাজ ও পেশীজীবীরা যথাযথ দায়িত্ব, কর্তব্য এবং ভূমিকা পালনে সক্ষম হন না। দীর্ঘ দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী শাসনকাল এরই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমরা দেখেছি, পলাতক স্বৈরাচারের শাসনকালে একটি উল্লেখযোগ্য সুশীল ও পেশীজীবীর অংশ, সেই ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের স্বয়ংক্রিয় সহযোগী হিসেবে আভির্ভূত হয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিধি ব্যবস্থায় শেষপর্যন্ত রাজনীতিবিদদের হাতেই রাষ্ট্র পরিচালনায় ভার বর্তায়। তবে রাজনীতিবিদদের সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজ এবং পেশাজীবীর ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য। রাষ্ট্র এবং রাজনীতির ভালো-মন্দের অনেক কিছু নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতির ওপর। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং সমাজে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের ভূমিকা যতবেশি কার্যকর থাকে, রাজনৈতিক সরকারও ততবেশি দায়িত্বশীল এবং শক্তিশালী হয়।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :