ঢাকা : রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহনকে। এর আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সদিচ্ছা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে, সঙ্গে পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়ে রাজধানীর বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প।
তবে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও নতুন উদ্যমে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজধানীর গণপরিহন ব্যবস্থাকে।
এরই মধ্যে রাজধানীর ১৭০টি পরিবহন কোম্পানি আবেদন করেছে ডিটিসিএর নগর পরিবহন প্রকল্পে শামিল হতে। বর্তমানে কোম্পানিগুলোর যোগ্যতা ও রুট পুর্নবিন্যাসে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, ১৭০টি বাস কোম্পানি ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। মোটামুটি ঢাকার ১৭০টি কোম্পানিই রাজধানীজুড়ে বাস পরিচালনা করে। তাই আর কোনও আবেদন প্রত্যাশা করছি না। এই আবেদনগুলোই এখন যাচাই করা হচ্ছে। এর মাঝে যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে তারা থাকবে।
এছাড়া ঢাকায় বিদ্যমান বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৩৮৮টি রুটকে সমন্বয় করে ৪০ থেকে ৪৫টি রুটে পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। এই রুটগুলোয় গণপরিবহনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কয়েক মাস সময় লাগবে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার বাসগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সর্বপ্রথম ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর পেরিয়ে যায় এক যুগ।
২০১৬ সালে এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ঢাকার শতাধিক বাস রুট বাদ দিয়ে কেবল ৫টি রুটে ভাগ করে ৫ রঙের বাস চালানোর পরিকল্পনা হাতে নেন তিনি। কিন্তু ২০১৭ সালে তার মৃত্যুর পর সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সভাপতি করে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি’ করা হয়।
সেই বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুটের ২২টি কোম্পানির অধীনে ৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাস চালানোর প্রস্তাব দেয় ডিটিসিএ। কয়েক দফা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সভা করার পর ২০২১ সালে তিনটি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০টি বাস নিয়ে চালু হয় ‘ঢাকা নগর পরিবহন’। পরে বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়।
কিন্তু, ঢাকা নগর পরিবহনের পাশাপাশি একই রুটে অন্য কোম্পানির বাস চলতে থাকা, পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আলোর মুখ দেখছিল না উদ্যোগটি। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এই প্রকল্প সফলের স্বপ্ন দেখছে ডিটিসিএ।
গত ১১ নভেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৯তম সভা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, বাধ্যতামূলকভাবে ঢাকার সব বাস কোম্পানি বিলুপ্ত করে একটি কোম্পানির আওতায় চালাতে হবে।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা ১০-১২ জন সদস্য মিলিয়ে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই কমিটি বিজনেস মডেল এবং বাসগুলো কীভাবে চলবে, সেই বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করবে। আগামী ১১ ডিসেম্বর আবার মিটিং করবো। ঢাকার ৪২টি রুটের কোম্পানিগুলোর বাস নগর পরিবহন নামেই করবো। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন যোগ্যতায় বিবেচনা করে নির্বাচন করা হবে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে রুট পারমিটবিহীন ও রুট ভায়োলেশনকারী বাসগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে চালক ও সহায়কদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়া ডিটিসিএর প্রস্তুত করা প্রস্তাবনার সমন্বয়ে অচল রুট বাতিল ও নতুন রুটগুলোর পরিকল্পনা প্রয়োজনবোধে পরিমার্জন করা হবে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মাধ্যমে ১১০টিরও বেশি বাস স্টপ তৈরি করা হয়েছে।
জানা যায়, শুধু রাজধানীই নয়, রাজধানীর আশেপাশের গণপরিবহন ব্যবস্থা ঢালাওভাবে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী, রাজধানীর গণপরিবহন চলবে ঢাকা নগর পরিবহন নামে। শহরের বাইরের সঙ্গে সংযোগকারী পরিবহনের নাম হবে শহরতলী পরিবহন। ৩৪টি রুট নগরের ও ৮টি রুট শহরতলীর।
ডিটিসিএর সিদ্ধান্ত মোতাবেক, কোম্পানির নামে বাস রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, ব্যক্তি নামে আর কোনও বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট দেওয়া হবে না। কাউন্টার ও টিকিট ব্যতীত কোনও বাস চলবে না। টিকিটের সঙ্গে পরবর্তীতে র্যাপিড পাস ব্যবহারের সুযোগ রাখা হবে।
এছাড়া, নতুন করে বাস মেরামত করা হবে। বাসগুলোতে ধাপে ধাপে স্বয়ংক্রিয় দরজা লাগানো হবে, আসন বিন্যাস করা হবে এবং সিঁড়ির ধাপ বাড়বে।
এছাড়াও ক্যামেরা বসবে, ড্যাশক্যাম থাকবে। স্টপেজেও ক্যামেরা রাখা হবে। ড্রাইভার ও হেলপার নিয়োগ হবে কোম্পানি থেকে, কিন্তু তারা কোনও ভাড়া আদায় করবে না।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :