ঢাকা : তীব্র বায়ুদূষণের শহর হিসেবে ঢাকা মাঝে-মধ্যেই শীর্ষ অবস্থানে চলে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দূষণ চলতে থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন ঢাকার বাসিন্দারা।
এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি, চর্ম রোগ, ফুসফুসের ক্যানসার, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুতে ছয় ধরনের পদার্থ ও গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। এর মধ্যে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড, সিসা এবং দুটি ক্ষুদ্রতিক্ষুদ্র কনা, যেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলোর উপস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বায়ু মান যাচাই করা হয়। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই পদার্থগুলোই শরীরে প্রবেশ করে। ফলে শুরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোকতেল হোসেন বলেন, ‘বায়ুদূষণের মাধমে বায়ুবাহিত রোগ হতে পারে। শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ক্রনিক অ্যাজমা, ব্রংক্রাইটিস হতে পারে।
অন্যদিকে দূষিত বায়ুর মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ নাক ও মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসে অক্সিজেনের মাধ্যমে সারা শরীরের রক্ত এসে পিওর হয়ে সাপ্লাই হয়। যখন আমরা অক্সিজেন নিচ্ছি তখন বায়ুর মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষতিকর বস্তুগুলোও ফুসফুসে গিয়ে জমা হয়।
ফলে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যাবে, ইনফেকশন হতে পারে। ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা কমে যাবে, পরিণতিতে ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সময় এই ঝুঁকি আরো বেশি।
কারণ যখন ফুসফুস রক্ত সঠিকভাবে পরিষ্কার করতে না পারবে তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মৃত্যুঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে।
বিশেষ করে বয়স্ক, গর্ভবতী মা ও শিশুদের এই ঝুঁকি অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে যারা নিয়মিত মাস্ক পড়েন তারা একটু কম ঝুঁকিতে থাকবেন’।
তিনি বলেন, ‘যারা বাইরে বের হচ্ছে, তাদের শরীরে ক্ষতিকর ধূলিকণা লেগে যায় এতে চুলকানিসহ চর্ম রোগ হতে পারে, যদি কেউ নিয়মিত গোছল না করেন।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে উন্নয়ন কাজ বেশি হচ্ছে। চলছে রাস্তার উন্নয়নকাজ, বাড়ি স্থাপন, একই সঙ্গে ঢাকা শহরের আশপাশে গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা।
এসব কাজে বায়ুদূষণ রোধ বা কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিচ্ছে না, একই সঙ্গে তদারককারী প্রতিষ্ঠান গুলোর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে বায়ুদূষণে শীর্ষে উঠে আসছে রাজধানী ঢাকা।
বায়ুদূষণের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, কয়েকটি প্রধান উপায়ে বায়ুদূষণ হচ্ছে, সেগুলো হলো ঢাকা শহরে চলমান পুরনো গাড়ি। সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়নকাজ। শহরের আশপাশে ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ। শহরের ভেতরে জমা ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবাঁ) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এ সময় সবগুলো ইটের ভাটা চালু থাকে। কিন্তু তাদের বায়ুদূষণ রোধে যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা সেগুলো নেওয়া হয়না।
এছাড়া কুয়াশার কারণে শহরের বায়ু বাইরে বের হতে পারে না। ফলে ধুলাবালি ও ক্ষতিকর পদার্থ শহরের মধ্যেই থাকে। শীতের এই সময়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বেশি হয়। ফলে এর প্রভাব বায়ুর ওপর পড়ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বায়ুর মান নিয়ে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়াল। তাদের বায়ুমান সূচকে (একিউআই) গত ৫ ডিসেম্বর মারাত্মক বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে ওঠে ঢাকা শহর।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো ভারতে দিল্লি এবং তৃতীয় অবস্থানে ছিলো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। একিউআই সূচকে ৫০ এর নিচে স্কোর থাকাকে বলা হয় স্বাস্থ্যকর বায়ু। ৫১ থেকে ১০০ স্কোরের মধ্যে থাকলে বায়ুর মান গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া যায়।
১০১ থেকে ১৫০ হলে সাধারণ নগরবাসী বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। ওই দিন ঢাকার স্কোর ছিল ৩২৯। একিউআই স্কোর ৩০১ থেকে ৫০০ বা তারও বেশি হলে বাতাসের মান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :