ঢাকার সড়ক যেন নৌপথ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২১, ০১:১১ এএম
ঢাকার সড়ক যেন নৌপথ

ঢাকা : বর্ষা আসতে এখনো বাকি কয়েকদিন। কিন্তু এর আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। আর বর্ষা এলেই জলজটে নাকাল হতে হয় রাজধানীবাসীকে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। তখন আলোচনায় আসে ঢাকার জলাবদ্ধতার কারণ ও নিরসনের উপায়।

শনিবারও (৫ জুন) এদৃশ্যের ব্যতিক্রম হয়নি। ভোর না হতেই ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় অধিকাংশ সড়ক ও অলিগলি। সকালে কর্মজীবীরা ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন চরম বিপাকে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি জমে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। জলমগ্ন রাস্তা দেখে মনে হয় যেন নৌপথ। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশার সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। এই সুযোগে গন্তব্যে যেতে অনেককে বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে।

বৃষ্টিতে মতিঝিল, মগবাজার, কাকরাইল, বেইলিরোড, ধানমন্ডি, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার মহল্লার ভেতরের সড়ক ছাড়াও প্রধান সড়কেও হাঁটু পানি জমে যায়। আর যেসব এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছে ওইসব স্থানে পানি জমে দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।

খিলক্ষেত এলাকায় কুড়িল ফ্লাইওভারের যে লুপ নেমেছে, সেখানে হাঁটুর বেশি পানি জমে থাকায় দুপুরে গাড়িগুলো নামতেই পারছিল না। যে কারণে প্রধান সড়ক ফাঁকা হলেও ফ্লাইওভারের ওপর দীর্ঘ যানজট বেঁধে যায়। পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সড়কেও জমে যায় পানি। ভারি বৃষ্টির কারণে গতকাল বিকেল পর্যন্ত অনেক এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তিন ঘণ্টা পরপর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আপডেট করা হয়। এতে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৯ মি.লি., ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৬ মি.লি. ও দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫৬ মি.লি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আগামী ৮ জুনের পর থেকে আরো বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বাতাসের মিশ্রণের ফলে বজ্রমেঘ তৈরি হয়েছে এবং এই বজ্রমেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। ২৬ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর একটি বড় অংশই তলিয়েছে পানিতে।

যদিও ঢাকা মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দাবি করেন, বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকাবাসীকে তিনি জলজটমুক্ত করতে পেরেছেন। গতকাল মিরপুর-১০ নম্বরে রাড্ডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টারে ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী।

রাজধানীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার কারণে গত ১ জুন রাজধানীতে রেকর্ড পরিমাণ ৮৫ মিলি মিটার বৃষ্টি হলেও নগরবাসীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জলজট মুক্ত করতে পেরেছি। গতকাল বিকেল ৪টার দিকেও মিরপুর-১০ নম্বরের প্রধান সড়কের একটি বড় অংশে জলজটের কারণে যানজট হতে দেখা যায়।

যদিও গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা রাজধানীর সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে ‘বহুলাংশে’ মুক্তি দেবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু গত ১ জুন ও গতকালের বৃষ্টিতে সংস্থা দুটির দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখতে পায়নি ঢাকাবাসী।

কেন জলাবদ্ধতা থেকে মিলছে না মুক্তি : ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। আর শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত ছিল।

ওই সময় রাজধানীর মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনেও প্রায় ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। যে কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে আসছিল।

কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হাতে ছিল। এরপর পৌরসভা এ দায়িত্ব পালন করত। ১৯৮৮ সালে এটি ঢাকা ওয়াসাকে হস্তান্তর করা হয়।

জানা গেছে, ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের পর খালগুলো দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়। পাশাপাশি খালগুলোর শাখা-প্রশাখা, বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা পুরোপুরি শেষ হতে আরো সময় লাগবে বলে দাবি দুই সিটি করপোরেশনের। নির্ধারিত কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে রাজধানীবাসীকে বহুলাংশে রক্ষা করা যাবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল ভোর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র বজ্রপাতসহ কয়েক দফা ভারি বৃষ্টি হয়।

এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড়ো হাওয়া, সেইসাথে বজ্রপাতসহ হালকা থেকে ভারি এবং কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে তা মৌসুমি বায়ুর জন্য হচ্ছে না। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যেই মৌসুমি বায়ু মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূলে পৌঁছাতে পারে। এরপর চট্টগ্রাম এলাকা দিয়ে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা টেকনাফের কাছাকাছি চলে আসলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়বে।

তিনি জানান, মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিন এই বৃষ্টি চলবে। এরপর কয়েক দিন বিরতি দিয়ে ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করলে আবারো বৃষ্টি বাড়বে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখা যায়, দক্ষিণপশ্চিম মৌসুমি বায়ু ইয়াঙ্গুন উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে এবং তা আরো অগ্রসর হওয়ার জন্য আবহাওয়াগত পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!