সহকর্মীর ওপর কেন গুলি চালালেন কনস্টেবল কাউসার?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
সহকর্মীর ওপর কেন গুলি চালালেন কনস্টেবল কাউসার?

ঘাতক কনস্টেবল কাউসার আলী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীর বারিধারায় এক পুলিশ কনস্টেবলের গুলিতে আরেক কনস্টেবল নিহতের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কাউসার আলী নামের কনস্টেবল তার সহকর্মী মনিরুল ইসলামকে কেন হঠাৎ করে এভাবে গুলিতে বুক ঝাঁঝরা করে দিলেন সেটা নিয়ে চলছে অনুসন্ধান। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনরত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। এক পর্যায়ে কাউসার আলী অস্ত্র তাক করে গুলি ছোড়েন। সরাসরি বুকে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনিরুল ইসলাম। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, কাউসার আলী মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন।

শনিবার (৮ জুন) রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই সড়কে যান চলাচল।

ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে আসেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট, গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ সময় আইজিপি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণসহ সবকিছু শুনে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তের আগে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

ঘাতক কনস্টেবলকে থানায় নেওয়া হয়েছে এবং তাকে নিরস্ত্র করা হয়েছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মনিরুল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু গুলির খোসা ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কূটনীতিক এলাকায় একজন কনস্টেবলকে দিনে ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। এই ডিউটি করার কারণে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন কি-না, বা কাউসার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল কি-না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, সবগুলো বিষয়ে আমরা তদন্ত করব।

ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশার আরিফুল ইসলাম সরকার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। প্রাথমিকভাবে আমরা হামলাকারী পুলিশ সদস্যের ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি তিনি পাঁচ-ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। তার অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না। তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথা বলে এসব জেনেছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনিরুলকে গুলি করার পর অনেকটা নির্বিকার ছিলেন কনস্টেবল কাউসার। গেটে দাঁড়ানো অবস্থায় কাউসারকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা জিজ্ঞেস করেন, মনিরুল কেন রাস্তায় পড়ে আছেন। তখন কাউসার উত্তরে বলেন, ‌‘শালা নাটক করতাছে। এমনি রাস্তায় পড়ে আছে।’ এ কথা বলে কনস্টেবল কাউসার দূতাবাসের বিপরীত পাশের রোডে চলে যান। এরইমধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা বুঝতে পারেন যে মনিরুলকে কাউসার গুলি করেছে। পরে তাকে আটক করা হয়।

এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখকে ভর্তি করা হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতালে। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানা গেছে। তার হাতে ও পেটে গুলি লেগেছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

এদিকে রাতেই গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত মনিরুলের বড়ভাই মাহবুব। এই মামলায় কাউসারকে গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এমএস

Link copied!