ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভ, সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভ, সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ

ঢাকা : ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে মহাখালী, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ‘আটকে’ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রিকশাচালকরা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল থেকে তারা মহাখালী, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, নাখালপাড়া এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ফলে সেসব এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা সকাল ১০টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নেওয়ায় কমলাপুরের সঙ্গে সারাদেশের ‘ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন।

এই এলাকায় রেলক্রসিংয়ের দুই দিকে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

বনানী থানার ওসি রাসেল সারোয়ার বলেন, রিকশাচালকরা সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করছেন, ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, এখন পর্যন্ত মোহাম্মদপুর তিনরাস্তার মোড়, শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও এবং নাখালপাড়া এলাকায় সড়ক বন্ধ করার খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।

মিরপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বিভিন্ন সড়কে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন বলে জানিয়েছেন মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান।

তিনি বলেন, সকাল ১০ টার পরে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় কিছু রিকশাচালক জমায়েত হয়ে মিছিল নিয়ে চলে গেছে।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ২০-৩০ জন মিলে মিছিল করে চলে যাচ্ছেন। তবে সড়কে এখনও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে মিছিল বের করে অটোরিকশা চালকরা। এরপর ১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলেও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন।

মিরপুর ১২ নম্বরের দিক থেকে আরেকটি মিছিল নিয়ে রিকশাচালকরা সেখানকার সড়কে বসার চেষ্টা করলেও সেনাবিহনি ও পুলিশ তাদের সেখানে দাঁড়াতে দেয়নি। এরপর চালকরা মেট্রোরেল স্টেশনের নিচের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন।

উচ্চ আদালত থেকে ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ আসে মঙ্গলবার। প্যাডেল চালিত রিকশা সমিতি করা একটি রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।

আদালত বলে, ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এটা পুরোপুরি অবৈধ।

এর পরদিনই ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল অব্যাহত রাখার দাবিতে দয়াগঞ্জ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা।

রিকশা, ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন বুধবার এক বিবৃতিতে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

এর আগে গত মে মাসে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত কোনো রিকশা চলাচল করতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিদ্যুৎচালিত তিন চাকার যানগুলো অটো, ইজিবাইকসহ নানা নামে পরিচিত। দুর্ঘটনার জন্য সড়কে মোটরবাইক এবং ইজিবাইকের চলাচলকে দায়ী করেন তিনি। সে সময় ঢাকার সাবেক দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলামও শহরের মধ্যে এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছিলেন।

পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা ও গ্যারেজ মালিকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংক্ষুব্ধ চালকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।

পরে ‘জীবিকার’ বিষয়টি বিবেচনায় এনে ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করবে পারবে বলে ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকার পতনের পর গত অগাস্টে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধসহ কয়েকটি দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন পায়ে চালিত রিকশার চালকরা।

রিকশা চালকদের দাবি, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের পাশাপাশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মত উত্তরেও রিকশার নতুন লাইসেন্স দিতে হবে, পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।

তারা বলেছেন, সরকারের রাজস্ব বাড়ানো ও বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশা পেশাজীবীদের স্বার্থে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে চালকদের লাইসেন্স দিতে হবে।

এমটিআই

Link copied!