সাফা-মারওয়ার ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও শিক্ষা

  • ধর্মচিন্তা ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৫, ২০২৩, ০১:১৪ পিএম
সাফা-মারওয়ার ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও শিক্ষা

ঢাকা : মক্কা পাহাড়ের শহর। মক্কার উঁচু পাহাড় জাবালে নূরে উঠলে দেখা যায় পাহাড় আর পাহাড়। কাবা ঘরের তিন দিকেই পাহাড়। কাবা ঘর থেকে পূর্ব দিকে দুটি উঁচু পাহাড় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। পূর্বদিকে দাঁড়িয়ে কাবার দিকে তাকালে বামের পাহাড়টি সাফা পাহাড় আর ডানের পাহাড়টি মারওয়া পাহাড়।

হজরত হাজেরা (আ.) তার পুত্র হজরত ইসমাঈলকে (আ.) রেখে পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। সাফা থেকে একবার গিয়েছেন মারওয়ায়, আবার মারওয়া থেকে সাফায়। এভাবে সাতবার দৌড়েছেন। এ দৌড়ানো আল্লাহর খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আল্লাহর মেহমানদের জন্য দুই পাহাড়ের মধ্যে হাঁটা ও দৌড়ানো ওয়াজিব করে দিয়েছেন।

বর্তমানে সাফা ও মারওয়া পাহাড় কেটে হাজিদের চলাচলের পথ সহজ করে দেওয়া হয়েছে। তিন তলা পথ করে দেওয়া হয়েছে ভিড় কমানোর জন্য। সাফা-মারওয়া পাহাড়ের সামান্য চিহ্ন এখন দেখা যায়। সাফা পাহাড়কে কাচ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড়ের ওপর থেকে কাবা দেখা যেত। এ দুই পাহাড়ের ওপর দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

আল্লাহতায়ালার নির্দশনসমূহের মধ্যে সাফা-মারওয়া পাহাড় দুটি অন্যতম। আল্লাহতায়ালা হজরত ইবরাহিমকে (আ.) হজের যেসব আনুষ্ঠানিকতা শিখিয়েছিলেন, তার মধ্যে সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সাঈ করা বা দৌড়ানো ছিল অন্যতম। সাফা-মারওয়াকে হজের রোকন করার রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য ও শিক্ষা।

সাফা-মারাওয়া এই দুই পাহাড়ে হজরত হাজেরা (আ.) সাত বার প্রদক্ষিণ করেছিলেন। হজ-ওমরাপালনকারীদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো, হজরত হাজেরার দৌড়ানোই ছিল মূল উৎস। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন হজরত হাজেরা (আ.) ও তার শিশুপুত্রকে খাদ্যসামগ্রী ছাড়া জনমানবহীন মরুপ্রান্তরে রেখে গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে আনা খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে যায়। তখন খাদ্যাভাবে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর প্রাণ ওষ্ঠাগত। হজরত হাজেরা (আ.) অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জনমানবহীন মরু অঞ্চলের এ পবিত্র পাহাড় দুটির মধ্যে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন। এক পর্যায়ে মধ্যবর্তী স্থানে স্বীয় আঁচল ছড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।

অবশেষে মহান আল্লাহ হজরত হাজেরার (আ.) দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা, দুর্ভাবনা দূর করে দেন। জনমানবহীন অঞ্চলকে মানুষের জন্য আবাসযোগ্য করেছেন। খাদ্য ও পানীয় দিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। বিশ্ববাসীর জন্য শ্রেষ্ঠ ইবাদতের স্থান নির্বাচন করেছেন। যা ছিল মহান আল্লাহর অপার রহমত ও করুণা। হজরত হাজেরার (আ.) প্রার্থনার এ শিক্ষাকেই আল্লাহ সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেই হজের আনুষ্ঠানিকতায় সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। আর তার কাছে কাকুতি-মিনতির সঙ্গে দোয়া করার, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার শিক্ষাই হলো সাফা-মারওয়ার মূল তাৎপর্য। এ কারণে আলেমরা বলেন, অত্যন্ত আবেগ ও বিনয়ের সঙ্গে সাফা-মারওয়ায় সাঈ করতে। মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের অভাব-অনটন, প্রয়োজন এবং অসহায়তার কথা পেশ করতে।

মনের সব জটিলতা-কুটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে সুপথ প্রাপ্তির প্রার্থনা জানানো। জীবনের সব পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। হজরত হাজেরার (আ.) স্মৃতিবিজড়িত সাফা-মারওয়ার কার্যাবলির তাৎপর্য হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা এবং পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যেভাবে হজরত হাজেরাকে (আ.) তিনি বিপদমুক্ত করে সাহায্য করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা হজ-ওমরাপালনকারীসহ মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে মুক্ত করুন। আমিন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!