ঢাকা : মহররমের ১০ তারিখ আশুরা। আশুরার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। এ দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা মোকাররমায় ছিলেন তখনো আশুরার দিন রোজা রাখতেন।
এরপর যখন মদিনা মোনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোজা রাখতেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। তা ছাড়া রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই রোজা ফরজ ছিল।
যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো, তখন আশুরার রোজা শুধু নফল রোজা হিসেবে নির্ধারিত হলো। তবে সাধারণ নফল রোজার চেয়ে তার গুরুত্ব বেশি।
হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর কাছে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। নবী করিম (সা.) বললেন, আল্লাহর কাছে আমার আশা, তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। সহিহ মুসলিম : ১১৬২
উত্তম হলো ১০ মহররমের আগে বা পরে নয় বা এগারো তারিখে এক দিন অতিরিক্ত রোজা রাখা। ৯ তারিখে রাখতে পারলে ভালো। কারণ হাদিসে ৯ তারিখের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশুরার রোজা রাখছিলেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলেছিলেন তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ দিনকে তো ইহুদি-নাসারারা (খ্রিস্টানরা) সম্মান করে? তখন নবীজি (সা.) বললেন, তাহলে আগামী বছর আমরা ৯ তারিখেও রোজা রাখব ইনশা আল্লাহ। কিন্তু সেই আগামী বছর আসার আগেই নবীজির ইন্তেকাল হয়ে যায়। সহিহ মুসলিম : ১১৩৪
‘৯ তারিখ রোজা রাখব’ মানে ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে রাখব। এজন্য হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলতেন, ‘তোমরা ৯ তারিখ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো।’ জামে তিরমিজি : ৭৫৫
ইসলামি স্কলারদের মতে, সবচেয়ে উত্তম হয় ১০ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে আগে-পরে আরও দুটি রোজা রাখা। ৯, ১০ ও ১১ তারিখ তিনটি রোজা রাখা। কারণ, মহররম মাসব্যাপী রোজার কথা তো সহিহ হাদিসেই আছে। ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার (রহ.) : ৪/২৪৬
আশুরার রোজায় ৬০ বছর ইবাদতের সওয়াব : অনেকেই আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার রোজা রাখে সে ৬০ বছর দিনে রোজা, রাতে ইবাদত করার সওয়াব লাভ করে।’ কথাটি হাদিস হিসেবে লেখা হলেও এটি হাদিস নয়। এটি একটি জাল বর্ণনা, যা হাবিব ইবনে আবি হাবিব নামক এক হাদিস জালকারী থেকে বর্ণিত। ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে মওজু বর্ণনা।’
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, এটি একটি বাতিল ও ভিত্তিহীন বর্ণনা। এটা হাবিব ইবনে আবি হাবিব বর্ণনা করে। আর সে হাদিস জাল করত। আল মানারুল মুনিফ : ১/৪৭
আশুরার রোজার ফজিলত তো সহিহ হাদিসেই বর্ণিত হয়েছে, যা আমরা লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছি। সুতরাং সহিহ হাদিসে যে ফজিলত বর্ণিত হয়েছে শুধু তা-ই বলা। অতিরঞ্জিত বিষয় বলা থেকে বিরত থাকা।
আশুরার দিন কেয়ামত হওয়া প্রসঙ্গে : আশুরা দিবসের গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে অনেকে বলে থাকেন, ‘হাদিস শরিফে এসেছে, এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে।’ এ কথাটা ঠিক নয়। যে বর্ণনায় আশুরার দিন কেয়ামত হওয়ার কথা এসেছে তা হাদিস বিশারদদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিত্তিহীন, জাল।
আল্লামা আবুল ফরজ ইবনুল জাওজি ওই বর্ণনা সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘এটা নিঃসন্দেহে মওজু বর্ণনা...।’ হাফেজ সুয়ুতি (রহ.) ও আল্লামা ইবনুল আররাক (রহ.)ও তার ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। কিতাবুল মওজুআত : ২/২০২
তবে জুমার দিন কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে। জামে তিরমিজি : ২/৩৬২
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :