সফলতা অর্জনে সাত কাজ

  • মাওলানা রফিকুল ইসলাম | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
সফলতা অর্জনে সাত কাজ

ঢাকা : দুনিয়াতে সবাই সফল হতে চায়। সবাই সুখী হতে চায়। দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যক্তির সফলতা ও সুখের মানদণ্ড হচ্ছে নিজের সব ধরনের মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়া। নিজের মনোবাঞ্ছা অনেক সময় এমন হয় যে, শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তা গর্হিত কাজ। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে তা গর্হিত নয়। এমন মনোবাঞ্ছা পূরণ করে মানুষ দুনিয়াতে সুখী হতে পারে এবং নিজে সফল মনে করতে পারে। কিন্তু পরকাল বিবেচনায় তা মোটেও সফলতা নয়। বরং প্রকৃত সফলতা হচ্ছে পরকালের সফতা। আর পরকালের সফলতা অর্জনের জন্য কাজ করলে যেমন মৃত্যু পরবর্তী জীবন সুখের হয় তেমনি দুনিয়াতেও পাওয়া যায় আত্মিক প্রশান্তি। দুনিয়াতে প্রশান্তি এবং পরকালে সফলতা অর্জন করতে সাতটি কাজের গুরুত্ব অনেক। সেগুলো তোলে ধরা হলো।

এক : নামাজে খুশু-খুজু তথা বিনয়, নম্রতা ও স্থিরতা অর্জন করা। নামাজের অন্য রুকনগুলো হচ্ছে দেহের সমতুল্য, আর ইখলাস ও খুশু-খুজু হচ্ছে প্রাণতুল্য। তাই নামাজের খুশু-খুজুকে মুমিনের সফলতার সর্বপ্রথম শর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

দুই : অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। এ সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন অনর্থক কার্যকলাপ বর্জন করে তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। অনর্থক কার্যকলাপ বলতে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত নিদ্রা, প্রাসাদ নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কাপড়চোপড় তৈরি সবকিছুই বোঝানো হয়েছে। মনে রাখতে হবে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অমূল্য সম্পদ। যারা সফল হতে চায়, তারা কখনো অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করতে পারে না।

তিন : জাকাত প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। জাকাত মানুষের সস্পদকে পরিশুদ্ধ করে, মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, ‘যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফলকাম হয়েছে, যে নিজের আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’

চার : যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করা। নিজ স্ত্রী ছাড়া সব পরনারী থেকে নিজেকে হেফাজত করা। অতএব বৈধ ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক পন্থায় বা নিষিদ্ধ সময়ে কামবাসনা পূর্ণ করা হারাম।

পাঁচ : আমানতদারি রক্ষা করা। আমানত শব্দ দিয়ে ওই দায়িত্ব বোঝায়, যা এমন কোনো ব্যক্তি বহন করে যার ওপর আস্থা ও ভরসা করা হয়। আমানত শব্দটি বহুবচন ব্যবহৃত হওয়ায় সব ধরনের আমানতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। এই আমানত আল্লাহতায়ালার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন : ফরজ ও ওয়াজিব বিধিবিধানগুলো আদায় করা। হারাম ও মাকরুহ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। বান্দার হক সংক্রান্তও হতে পারে। যেমন : কেউ কারও কাছে অর্থ-সম্পদ আমানত রাখল। তাহলে এই আমানত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া পর্যন্ত হেফাজত করা আমানতদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ছাড়া কেউ কারও কাছে কোনো গোপন কথা বললেও কথাটি তার কাছে আমানত হিসাবে থাকে। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া কারও গোপন কথা ফাঁস করাও আমানাতের খেয়ানত।

ছয় : অঙ্গীকার পূর্ণ করা। অঙ্গীকার বলতে এমন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বোঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয়পক্ষ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নেয়। এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করা বিশ্বাস ঘাতকতা ও হারাম। একজন অন্যজনকে কিছু দেওয়ার কিংবা কোনো কাজ করে দেওয়ার এক তরফা যে অঙ্গীকার করে, তাও পূর্ণ করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওয়াদা হচ্ছে এক ধরনের ঋণ। ঋণ আদায় করা যেমন ওয়াজিব, ওয়াদা পূর্ণ করাও তেমনি ওয়াজিব।’

সাত : নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া। প্রতি নামাজ মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় করা। ‘সালাত’ শব্দটি বহুবচন ব্যবহার করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বোঝানো হয়েছে।

উল্লিখিত সাতটি কাজের গুণে গুণান্বিত লোকদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলা হয়েছে। তবে তাদের জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী বলে এই দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির সম্পদ যেমন উত্তরাধিকারীদের হাতে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত, অনুরূপ এই সাতটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদেরও জান্নাত লাভের বিষয়টি সুনিশ্চিত।

এমটিআই

Link copied!