ঢাকা : ইমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। বিচার দিবসে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ব্যক্তিকে সব ধরনের পাপকর্ম থেকে বিরত রাখে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত ৪৫) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা।’ (সহিহ বুখারি)
আদায়কৃত নামাজ আল্লাহতায়ালার কাছে অধিক পছন্দনীয় হওয়ার জন্য কিছু আদবের প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। এমন কতিপয় আদব উল্লেখ করা হলো।
একনিষ্ঠতা : শান্তশিষ্টভাবে একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। অলস ভঙ্গিতে কিংবা লোক-দেখানো মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়া মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সঙ্গে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায়, তখন দাঁড়ায় একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা ১৪২)
প্রস্তুতি গ্রহণ : নামাজ আদায়ের পূর্বে কিছু কাজের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। যেমন ভালো কাপড় পরা। সম্ভব হলে সুগন্ধি লাগানো। ফরজের আগে কিছু নফল পড়ে নেওয়া। মনোযোগে বিঘœতা আসে, এমন কিছু আশপাশে না রাখা।
জামাতে শরিক হওয়া : পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এজন্য তারা নামাজের সময় মসজিদে চলে যাবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসাবাড়িতে কিংবা একাকী নামাজ পড়বে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি ঘরে কিংবা বাজারে নামাজ আদায় করার চেয়ে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করলে পঁচিশ গুণ বেশি নেকি পাবে। তোমাদের কেউ যখন অতি উত্তমরূপে অজু করে শুধু নামাজের উদ্দেশে মসজিদে যায়, মসজিদে পৌঁছা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। একটি করে গুনাহ মাফ হয়। যতক্ষণ সে মসজিদে নামাজের অপেক্ষায় থাকে, তাকে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিরূপেই গণ্য করা হয়। নামাজ শেষে যতক্ষণ সে সেখানে (নামাজের জায়গায়) বসে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য এ দোয়া করতে থাকেন, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। তার প্রতি রহম করুন। তার তওবা কবুল করুন।’ (সহিহ মুসলিম)
সুন্নাহ অনুসরণ : সুন্নাহ হলো আমল কবুলের মানদণ্ড। এজন্য নামাজের ক্ষেত্রেও সুন্নাহকে পরিপূর্ণ গুরুত্ব দিতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখেছ, সেভাবে নামাজ পড়বে।’ (সহিহ বুখারি)
বিনীতভাবে নামাজে দাঁড়ানো : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় ইমানদাররা সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত।’ (সুরা মুমিনুন ১-২) নামাজে বিনীত হওয়ার অর্থ হলো, বাহ্যিকভাবে এদিক-ওদিক না তাকানো। পূর্ণ মনোযোগ নামাজের দিকেই নিবদ্ধ রাখা। ভিন্ন কোনো চিন্তা-ভাবনাকে হৃদয়ে জায়গা না দেওয়া।
আল্লাহ আমার নামাজ দেখছেন : নামাজের মধ্যে মনে মনে এই ভাবনা জাগ্রত রাখা যে, আল্লাহতায়ালা আমার নামাজ দেখছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত এমন নিষ্ঠার সঙ্গে করবে, যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও, তবে (মনে রেখো) তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি)
কোরআন তেলাওয়াত : নামাজে সুমিষ্ট আওয়াজে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি কোরআন তেলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে, স্পষ্ট উচ্চারণে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল ৪) হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) কর্র্তৃক বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে সুমিষ্ট আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াত করো।’ (সুনানে আবু দাউদ) আল্লাহতায়ালা সবাইকে নামাজি বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :