মহিলা সংস্থায় নিয়োগ জালিয়াতি

অভিযোগ উত্থাপন না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক:  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ০৮:৫২ পিএম
অভিযোগ উত্থাপন না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী

সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। ফাইল ছবি:

ঢাকা: জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নীহার বেগম। ২৯ বছর আগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটিতে নিয়োগ পান তিনি। এত বছর পর এসে তার সেই নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে। 

এরপর গত বছরের ১৫ মার্চ বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও সেটি এখনও শুরু হয়নি। উপরন্তু এই অভিযোগ উত্থাপন না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। 

গত বছরের ৪ এপ্রিল জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী কমিটি, পরিচালনা পরিষদ এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রধান কার্যালয় ও প্রকল্পে কর্মরত সকল কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভার কার্যবিবরণীতে এই সিদ্ধান্ত দেন তিনি।

কার্যবিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজ তাহমিনা সুলতানা বলেন, জাতীয় মহিলা সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নীহার বেগমের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি বেনামী দরখাস্তকে আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে সংস্থা কর্তৃক বিভাগীয় মামলা চালু হয়েছে। বেনামী অভিযোগটি ভিত্তিহীন বিবেচনা করে নীহার বেগমের বিভাগীয় মামলার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তিনি সভায় অনুরোধ জানান। তার এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

নীহার বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থার গ্রামীণ মহিলা প্রকল্পে ‘মাঠ সমন্বয়ক’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রেক্ষিতে চাকরির জন্য আবেদন করেন নীহার বেগম। ওই সময় গ্রামীণ মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প নামে জাতীয় মহিলা সংস্থার একটি প্রকল্প ছিল। নীহার বেগম তখন ওই প্রকল্পে নিয়োগ পেতে পরীক্ষা দিলেও পরবর্তী সময়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে মহিলা সংস্থার অফিস সহকারী হিসেবে রাজস্ব খাতে নিয়োগ পান। এর পর সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার মাধ্যমে পদোন্নতিও পেয়ে যান তিনি। দুবার পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে তিনি সংস্থাটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।

এই অভিযোগের বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নীহার বেগমের নিয়োগসংক্রান্ত তদন্ত শুরু করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার রায়ের করা তদন্ত প্রতিবেদনে এ নিয়োগ নিয়মবহির্ভূতভাবে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি একটি দৈনিক পত্রিকায় তিন বছর মেয়াদি গ্রামীণ মহিলা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৬৪টি ‘মাঠকর্মী’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এতে নীহার বেগম আবেদন করেন। একই বছর ১৮ মার্চ সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে মাঠকর্মী পদের পরিবর্তে নির্বাচনী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী থানা শাখার নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক রাজস্বভুক্ত পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যেখানে প্রকল্পভুক্ত পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, সেখানে রাজস্বভুক্ত পদের জন্য অবশ্যই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিসহ যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বিধিসম্মত হয়নি বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার রায়ের করা তদন্ত প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা হয়। এরপর এ তদন্তের বিষয়ে গত বছর ৫ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দিলীপ কুমার দেবনাথের স্বাক্ষরে নীহার বেগমের বিরুদ্ধে নিয়োগবিধি অনুসরণ করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী নীহার বেগমকে অভিযোগের বিষয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। তার জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় একই বছরের ১৫ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সায়রা পারভীনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ৪ এপ্রিল সভায় সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিভাগীয় মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়ায় এই মামলাটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ ও তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জাতীয় মহিলা সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সায়রা পারভীন বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে এজন্য আমার তদন্তের প্রয়োজন নেই।

এসআই/আইএ

Link copied!