স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনে

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২২, ০২:২৭ পিএম
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনে

ঢাকা : জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। তবে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই মানব স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ কারণে  বাতাস, মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। পরিবেশগত এ বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে।

এছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাজ্ঞের কারণে জলবায়ু অভিঘাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে।

বিশ্বে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ দূষিত বায়ুতে নিশ্বাস নেওয়ায় হূদরোগ, হাঁপানি এবং ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগও। এমস সব তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য গভীর সমুদ্র এমনকি সুউচ্চ পর্বত শৃঙ্গেও পাওয়া যাচ্ছে। যা আমাদের খাদ্যচক্রে মিশে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় স্থ্থলতা, ক্যানসার ও  হূদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চলতি বছর পরিবেশ দূষণ এবং এ সংশ্লিষ্ট রোগবালাই হতে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার প্রত্যয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও কল্যাণকর একটি সমাজ নির্মাণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সরকার।

এদিকে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববাসী করোনা মহামারি মোকাবিলা করছে। করোনার কারণে সমাজের দুর্বল ও ঝুঁকিপ্রবণ অংশের মানুষ যেভাবে উচ্চহারে সংক্রমিত হয়েছিল তা মূলত বিশ্ব সমাজব্যবস্থার বৈষম্যকেই তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া বর্তমান বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে বিশ্বে অনেক মানুষ আজো দরিদ্রসীমার মধ্যে বসবাস করছে। তাই সকল বৈষম্য দূর করে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ইটভাটা, দীর্ঘমেয়াদি অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ কার্যক্রম, ময়লা আবর্জনায় আগুন দেওয়া, সড়কের ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির কলো ধোঁয়া নির্গমন ইত্যাদি।

এ ছাড়া নির্বিচারে বন ধ্বংস ও গাছপালা কাটাও পরোক্ষভাবে বায়ুদূষণে ভূমিকা রাখছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস বিষয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশগত যে বিপর্যয় ঘটছে।

তিনি বলেন, বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জৈব জ্বালানির ব্যবহার। দ্রুতবেগে প্রসারিত হচ্ছে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চরম বৈরী আবহাওয়া, ভূমিধস ও সুপেয় পানির অভাবে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্লাটিক বর্জ্য গভীর সমুদ্র হতে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে যা আমাদের খাদ্যচক্রে মিশে নানা রকম ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এছাড়াও প্রক্রিয়াগত ও অস্বাস্থ্য খাবার এবং বিভিন্ন রকম কোমল পানীয় স্থ্থলতা, ক্যানসার ও হূদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে চলছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের সফলতার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্স এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি দেশের জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের এবারের আহ্বান সার্থক হবে বলে জাহিদ মালেক আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিশ্বব্যাপী বিশ্বস্বাস্থ্য বিদস পালন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব নেতাদের বদ্ধপরিকর হওয়া দাবি জানান।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নির্মল পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বায়ুদূষণ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে। বিশেষ করে শহরগুলো বায়ুদূষণের আধার। নগরগুলোতে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ পরিবহন জ্বালানি।

এ ছাড়া নগর উন্নয়ন ও এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো উন্নয়ন কার্যক্রমের সময় পরিবর্তন করা, এ ছাড়া বাতাসে কার্বন কমাতে ট্রাফিক জ্যাম দূর করতে হবে। স্বাস্থ্যহানি ক্ষেত্রে পানির দূষণও আরেকটি বড় কারণ। পানি ফুটাতে প্রচুর জ্বালানি ব্যয় করা হয়, যা বাতাসে কার্বনের মাত্রা বাড়াচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। এ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সর্বস্তরে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) সাহান আরা বানু জানান, বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য বেশি করে গাছ লাগানো, জলাধার সংরক্ষণ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা।

এছাড়া ছাদ বাগান তৈরি, নির্মাণ কাজের সময় মালামাল ঢেকে রাখা জরুরি। এছাড়াও নির্মল বায়ু আইনের বাস্তবায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে বাজেটের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, বায়ুদূষণের মতো শ্বাসতন্ত্র এবং হূদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়।

গ্লোবাল টোবাকো সার্ভে, ১০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে তামাক ব্যবহরের হার ৪৮ শতাংশ। আধুনিকতার নামে কম বয়সী ছেলে মেয়েদের মাঝে ই-সিগারেটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা দূর করা প্রয়োজন বলে সাহান আরা বানু সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!