ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘোষণা ছাড়া ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) এক ব্রিফিংয়ে তিনি দলের এই অবস্থান তুলে ধরেন। এর আগে ১২ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়। বৈঠকে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এক বক্তব্যে বলেছেন যে বিএনপি নির্বাচনে এলে সংলাপ হবে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি তো আগেই বলেছি যে আমরা কোনো ফরমেটেই সংলাপে যেতে চাই না। সরকারকে সবার আগে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। আর পদত্যাগ করেই সে ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া কোনো সংলাপের প্রশ্নই ওঠে না।’
মির্জা ফখরুলের এই প্রতিক্রিয়ায় এটা এক প্রকার স্পষ্ট যে নির্বাচনের আগে সরকার পতন আন্দোলনের পথেই হাটবে দলটি।
জানা গেছে, আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদফার ভিত্তিতে যৌথ ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করার কথা ভাবছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘জাতির সামনে কোনো বিকল্প নেই। একটাই লক্ষ্য, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। এর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার যেন আমরা প্রতিফলন ঘটাতে পারি, পূরণ করতে পারি।’
তিনি বলেছেন, ‘আমরা মূলত একদফার আন্দোলনেই আছি। এটা একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে, যা খুব শিগগিরই দেখতে পারবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন কোরবানি ঈদের পর দ্রুত ঢাকায় ফিরতে। তিনি বলেন, ‘সবাই যদি ঢাকায় একসঙ্গে আসেন, আর বাংলাদেশের মানুষ যদি ঢাকার দিকে আসা শুরু করে, তাহলে কী হবে বোঝেন! যদি এটা বোঝেন, তার জন্য প্রস্তুত থাকেন।’
দলটি বলছে, প্রাথমিকভাবে দাবি আদায়ে আগের কর্মসূচিগুলো আবারও দেওয়া হবে। এসব কর্মসূচিতে শোডাউন করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে কোনোভাবেই সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচিতে না-যাওয়ার চিন্তা রয়েছে দলটির। বিএনপি চায়, গতানুগতিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা ঘটিয়ে একপর্যায়ে সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে।
বিএনপি এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের ওয়ার্মআপ হিসেবে তার তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলকে দিয়ে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করাচ্ছে।
এরই মধ্যে তিনটি স্থান যথাক্রমে চট্টগ্রাম, বগুড়া ও বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশ হয়েছে। ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা ও ২২ জুলাই ঢাকায় এই সমাবেশ রয়েছে।
আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের যে সমাবেশ রয়েছে তাতে ব্যাপক উপস্থিতির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এখন পর্যন্ত তিনটি সমাবেশ হয়েছে। সেসব সমাবেশে তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি আমাদের আশান্বিত করেছে। সামনের সমাবেশগুলোতেও ব্যাপক উপস্থিতি আশা করছি। ঢাকার সমাবেশ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি এ সমাবেশে ব্যাপক উপস্থিতি ঘটবে।
তবে আন্দোলনে বিগত দিনের মতো ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে বাধা সৃষ্টি করা হতে পারে আশঙ্কা করছে বিএনপি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতির আলোকে পদক্ষেপও নিচ্ছে দলটি। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা, হামলা ও নেতাকর্মীদের নির্যাতনের ঘটনা এবং জড়িত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের তালিকা করতে গত ৩ জুন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি তথ্য সংগ্রহ কমিটি গঠন করে বিএনপি। এরই মধ্যে এই কমিটি বেশ কয়েকটি ঘটনায় ৩৩ পুলিশ সদস্য এবং ১০ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দায়ী করে বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে।
এবিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিটি ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও, ছবি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংযুক্ত করা হয়েছে।
দূতাবাসগুলোতে দেওয়া বিএনপির ওই চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে যেতে বাধা দেওয়ার এ ঘটনা ফৌজদারি অপরাধ। কারণ এতে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হয়েছে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বড় হুমকি।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :