নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু, কেমন ভোট চায় ইসি

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৩, ০১:২১ পিএম
নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু, কেমন ভোট চায় ইসি

ঢাকা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন তারিখ ঘোষণা করে তফসিল ঘোষণার আগে বাকি কেবল আর একটি আনুষ্ঠানিকতা, সেটি হলো নির্বাচন কমিশনের সভা আহ্বান।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বিরোধ সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন চাইছে একটি ‘উৎসবমুখর’ নির্বাচন যা হয়ে থাকবে উদাহরণ।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধী পক্ষের টানা অবরোধের কারণে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। তফসিল ঘোষণার আগে আগে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে আলোচনা করেছে, সেখানে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ১৮টিকেই পায়নি তারা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ও তার শরিক দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক ও বামপন্থী আরও কিছু দল অংশ নেয়নি।

বিএনপি তার জোট ভেঙে দিলেও সাবেক শরিকরাও তাদের মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে। বিএনপির সেই যুগপৎ আন্দোলনে নেই সিপিবিসহ বামপন্থী কয়েকটি দল। তবে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে তাদেরও। ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলনও জানিয়েছে তারা বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে যাবে না।

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব তাদের পালন করতেই হবে।

নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু

>> ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে।

সেই হিসাবে গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।

>> তফসিল ঘোষণার বিষয়ে ইসির পরিকল্পনার নভেম্বরের সেই দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে এখন।

এই ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব’ পালনে কমিশনের পক্ষ থেকে যা যা প্রস্তুতি নেওয়ার তা গুটিয়ে আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সারাদেশের মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে নির্বাচনী আইন-বিধি, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মত বিনিময়মূলক যে ‘প্রশিক্ষণসূচি’ চলছে, সেটি শেষ হচ্ছে শনিবার।

মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এরই মধ্যে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো, ‘যে কোনো মূল্যে নিরপেক্ষ থাকতে হবে, জনগণ যেন তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দিতে পারে, সে জন্য আইনে যে ক্ষমতা আছে, সেটির প্রয়োগ করতে হবে।’

নির্বাচন হবে হবে, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গত কয়েক দিন ধরেই। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহেই তা জানিয়ে দেওয়া হতে পারে।

কবে তফসিল : নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর যে কোনো দিন ডাকা হবে কমিশন সভা। সেখানে সব কিছু চূড়ান্ত করে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এতে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, বাছাইয়ের তারিখ (এক বা একাধিক), মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ও ভোটের জন্য তারিখ (এক বা একাধিক) থাকবে।

গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন। এখন কমিশন সভা করে আসবে তফসিলের ঘোষণা।

এরপর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অনুচ্ছেদ ১১ (১) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন দেবে। রিটার্নিং অফিসাররা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ করার পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দ্রুত আমরা তফসিল ঘোষণা করব। কারণ, সময় হয়ে গেছে। … আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে দেব।

এ নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান গত সপ্তাহে বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহেই হয়ত তফসিল হয়ে যাবে।

কারা হবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা : তফসিলের আগে কমিশন সভাতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন, সেই বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। 

প্রথা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার দিনই রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসকরাই রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ পেয়ে থাকেন, সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিভাগীয় কমিশনার।

>> সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ছিলেন ৬৬ জন (৬৪ জন ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনার ২ জন)।

>> সহকারী রিটার্নিং অফিসার ছিলেন- ৫৮১ জন (ইউএনও ৪৯২ জন, এসি ল্যান্ড ২৩ জন, এডিসি ১০ জন, জেডইও ৯ জন, জেলা নির্বাচন অফিসার ৮ জন, উপজেলা নির্বাচন অফিসার ৩০ জন। সিইও ৩ জন, সার্কেল অফিসার ১ জন, আইন কর্মকর্তা ১ জন ও ডিডিএলডি ৪ জন।

ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাননি। ২০০৯ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন সিটি করপোরেশন প্রথমবারের মতো উপনির্বাচনে এই নিয়োগ দেয়।

এরপর থেকে সিটি করপোরেশন ও সংসদীয় আসনের উপ নির্বাচনে উপসচিব পদমর্যাদার আঞ্চলিক ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দিয়ে আসছে ইসি।

সবশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপ নির্বাচনেও দায়িত্ব পালন করেছে ইসি কর্মকর্তা। কিন্তু লক্ষ্মীপুর ও পটুয়াখালী উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেন ডিসি।

নির্বাচন কর্মকর্তারা এবার জাতীয় নির্বাচনে তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার দাবি জানিয়ে আসছেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর অনুচ্ছেদ ৭ এ বলা হয়েছে, কমিশন প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে কোনো সদস্য নির্বাচনের উদ্দেশ্যে একজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করবে; এবং কোনো ব্যক্তিকে দুই বা ততধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যাবে।

কমিশন প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী রিটার্নিং নিয়োগ করতে পারবে তবে একজনকে একাধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য নিয়োগ করা যাবে না।

রিটার্নিং অফিসারদের প্রতি ইসির ‘বার্তা’ : শুক্রবার মাঠ প্রশাসনের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের মূল চাওয়াটা হচ্ছে-ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা যেন ব্যাহত না হয়। ভোটাররা ভোট যেন দিতে পারে-এ জিনিসটা আমরা দেখতে চাচ্ছি ভোটের দিন।

সুশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিবেশ বজায়ে ডিসি ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সমন্বয় করে সুন্দরভাবে নির্বাচনটাকে তুলে আনার চেষ্টা করবেন। দায়িত্ববোধ দিয়ে অনুধাবন করবেন, ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে নয়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আপনার ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হয় তখন ক্ষমতা ও শক্তি দেখাবেন।

নির্বাচন কমিশনের চাওয়া তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমাদের বার্তা হচ্ছে- নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ করবে, সুশৃঙ্খল করবেন। গতকাল মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, উনিও চেয়েছেন নির্বাচনটা যেন সুশৃঙ্খল হয়। সুশৃঙ্খল আমি করাতে পারব না, আপনাদেরকে করাতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেন, নির্বাচন একটা টিম ওয়ার্ক। এ টিম ওয়ার্কের মধ্যে আপনারাই হচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে বিশ্বস্ত প্রতিনিধি।

এ নির্বাচন কমিশনারের মতে, এখনকার ‘আগের মতো নেই’। এখন সব কিছু দৃশ্যমান। গণমাধ্যম এখন ‘চোখ’ হিসেবে কাজ করে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই।

তিনি বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটা যেন সুন্দর হয়, আমরা যেন প্রশংসিত হই, যেন জনগণ, ভোটার, প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারি। … অতীত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা সুন্দর, অবাধ, সুষ্ঠু, উৎসবমুখর এমন একটা নির্বাচন উপহার দেব, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের নিয়োগ দেবেন মূলত রিটার্নিং অফিসার। যিনি রিটার্নিং অফিসার থাকবেন তারই কাজ হবে উনাদের দিকে নজরদারি রাখা।

মাঠ প্রশাসন ও কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থাকার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, যখন আমরা নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলি তখনই একটা প্রশ্নের জন্ম হয়, জনগণ-প্রার্থী সবার মধ্যে একটা ক্ষোভ হয়। এই ক্ষোভের যেন সৃষ্টি না হয়, কোনোভাবেই যেন তার প্রকাশ না দেখি।

এমটিআই

Link copied!