এখন গরুর মাংস ৬০০ টাকাতেই মুনাফা

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩, ১১:৪১ এএম
এখন গরুর মাংস ৬০০ টাকাতেই মুনাফা

ঢাকা : উচ্চমূল্যে গরুর মাংসের চাহিদা কমে যাওয়ার পর এখন দ্রুত কমে আসছে দাম। যে বিক্রেতারা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন, হাজির করতেন নানা যুক্তি, সেই তারাই এখন ৬০০ টাকা বা তার চেয়ে কমে বিক্রি করে পোষাতে পারছেন।

ক্রেতারা বলছেন, ‘অতিরিক্ত মুনাফার ফাঁদে’ পড়েছেন বিক্রেতারা। চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন তারা দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে এখন ‘ক্রেতার ঐক্য’ চেয়ে জোর আলোচনা।

আহমেদ ফয়েজ নামের একজন মাংসের দোকানে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারির ছবি শেয়ার করে ফেইসবুকে লিখেছেন, আজ গরুর মাংসের দোকানগুলোতে খুব চাপ। কোথাও কোথাও লম্বা লাইন। দীর্ঘদিন পর মাংস খাবে বহু মানুষ।

মাংস ব্যবসায়ীদের সমিতির একজন নেতা স্বীকার করেছেন, অতিরিক্ত মুনাফা করতে গিয়ে চাহিদা কমে যায়, তাই বাধ্য হয়ে এখন দাম কমাতে হচ্ছে।

খামারিদের একজন নেতা জানান, গরুর মাংসের চাহিদা কমে যাওয়ার পর গত কয়েক মাসে গরুর খাবারের দামও অনেকটাই কমেছে। এ কারণে খামারিদের উৎপাদন খরচ কমায় তারা কম দামে বাজারে গরু ছাড়ছেন। এটাও মাংসের দাম কমার এক কারণ।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতির যে ধারা দেখা দিয়েছিল তাতে ভুগতে থাকা দেশবাসী চলতি নভেম্বর থেকে কিছুটা স্বস্তিতে আছে। মাছ, সবজি, ডিম ও মাংসের দাম কমে আসছে। এর মধ্যে গরুর মাংসের দরপতন নিয়ে এই মুহূর্তে তুমুল আলোচনা।

এখন রীতিমত দাম কমানোর ‘প্রতিযোগিতা’ চলছে। আটশ টাকা থেকে কমাতে কমাতে কোথাও এখন কেজি ৬০০ কোথাও ৫৯০, কোথাও ৫৮০। বিক্রেতারা সাইনবোর্ড টানাচ্ছেন, ব্যানার সাঁটিয়েছেন, ফেইসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।

তবে এখনও কোনো কোনো এলাকায় বাড়তি দরে বিক্রির চেষ্টা চোখে পড়ছে। সুপার শপগুলোতেও দাম অনেকটাই বেশি।

গরুর মাংসের চাহিদা বাংলাদেশে কখনও কম ছিল না। কিন্তু দাম ৭৫০ বা ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর স্বল্প আয়ের মানুষদের পক্ষে তা নিয়মিত কেনা সম্ভব ছিল না।

গণমাধ্যমেই প্রতিবেদন আসতে থাকে, যে দোকানে দিনে চারটি গরু বিক্রি হত, সেই তারাই একটি গরুর মাংস বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছিল। এখন দাম কমে আসার খবরে তারা আবার মাংসের বাজারে ভিড় করতে শুরু করছেন।

এখন দাম কমার পর বিক্রি বেড়েছে, তাই লাভ হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। এখন যারাই দাম কমিয়েছেন, তাদেরই বিক্রি ভালো হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, অবশ্যই লাভ হচ্ছে। লাভ সীমিত হচ্ছে, অনেক বেশি সেল হচ্ছে, সেজন্য পোষায়া যাচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, দাম আরও কমা সম্ভব।

তিনি বলেন, প্রকৃত অর্থে গরুর মাংসের দাম প্রতিকেজি ৫০০ টাকার নিচে হওয়া উচিত।

গরুর মাংসের দরপতনে কমছে খাশি ও মুরগির দামও। খাশির কেজি হাজারের নিচে নেমেছে, আর ব্রয়লার এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়।

মাছের দামও এখন পড়তি। সরকার দাম বেঁধে যে ডিমের ডজন ১৪৪ টাকায় বিক্রি নিশ্চিত করতে পারেনি, এখন তা নেমেছে ১২০ টাকার নিচে।

দাম যেভাবে বেড়েছিল : ২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এক নির্দেশনার পর সে দেশ থেকে বাংলাদেশে গবাদিপশু আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়।

‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক গরু বাণিজ্যের অর্থনীতি: পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের চিত্র’ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির এক গবেষণায় উঠে আসে, ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে গরু আমদানি হত ৫০ কোটি ডলারের। ডলার ও টাকার বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী তা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ভারতের ওই সিদ্ধন্তে দেশে গরুর মাংসের চাহিদা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষ করে কোরবানির সময় পশু পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।

তবে এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে গরুর খামার তৈরি হতে থাকে। ঢাকা শহরের চারপাশেও গড়ে ওঠে অনেক খামার। ধীরে ধীরে সারা বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।

কিন্তু উৎপাদন বাড়লেও এর সুফল ভোক্তারা পায়নি। ৯ বছরের মধ্যে দাম বেড়ে হয়ে যায় তিন গুণ।

সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে গরুর মাংসের কেজিপ্রতি গড় দাম ২৭৫ টাকা ছিল। তখন ব্রয়লার মুরগির গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৩৭ টাকা।

২০১৮ সালে গরুর মাংসের গড় দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৪৩০ টাকা হয়। আর ব্রয়লারের দাম কমে হয় কেজিপ্রতি ১৩১ টাকা।

২০২০ সালের মার্চেও ঢাকায় গরুর মাংস পাওয়া গেছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। ওই বছর প্রথমবারের মত রোজায় গরুর মাংসের দাম ঠিক করে দেয়নি ঢাকা সিটি করপোরেশন। পরে বাজার দর বেড়ে দাঁড়ায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।

২০২২ সালে দাম চড়ে ৭০০ টাকায়। ২০২৩ সালে আটশ টাকা ছুঁয়ে যায়।

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে খাবারের দাম বৃদ্ধি, হাটে খাজনা, চাঁদাবাজিসহ নানা যুক্তি তুলে ধরনের বিক্রেতারা। তবে অতিরিক্ত মুনাফা করার বিষয়টি সব সময় ছিল আলোচনায়।

গত ২৬ অগাস্ট ঢাকায় একটি বিতর্ক আয়োজনে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশে তা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা সম্ভব। তবে দেশীয় উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে গরুর মাংস আমদানি করা হচ্ছে না।

‘পথ দেখান’ বগুড়ার কালু কসাই : চলতি বছর রোজার আগে বগুড়ার গাবতলীর কালু কসাই নামে একজন বিক্রেতা ৫৮০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করে আলোচনায় আসেন।

প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়টি আর শুক্রবারে ১০টি গরু জবাই করার কথা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন তার ছেলে আবু হোসাইন মাহমুদ।

তিনি জানিয়েছিলেন, এই দামে বিক্রি করেও সব খরচ বাদ দিয়ে তাদের গরুপ্রতি এক হাজার টাকা মুনাফা থাকে, এতেই তারা খুশি।

‘কালু কসাই’কে নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রচার করার পর অন্য বিক্রেতারাও চাপে পড়েন, তারাও কমিয়ে আনেন দাম।

গত অগাস্টে চট্গ্রামে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া বাজারে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা দুই তরুণ রাফিউল হাসনাত ও সাজ্জাদুর রহমান ওরফে সাকিব ৬৮০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করা শুরু করেন। এখন দাম আরও কমে ৬৬৫ টাকা করা হয়েছে।

ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামে গরুর মাংসের চাহিদা যেমন বেশি, তেমনি দামও থাকে বেশি। বন্দরনগরীর কোথাও কোথায় এতদিন ৯০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হত এই মাংস।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই দুই জন কেবল শুক্র ও মঙ্গলবার মাংস বিক্রি করেন। দিনে ৪০ মণের মত মাংস বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে মুনাফা থাকে ৪০ হাজার টাকার মত।

এই দুই জন মিট বাজার নামে একটি ফেইসবুক পেইজও খুলেছেন। সেখানে কবে কখন কী দামে গরুর মাংস বিক্রি করা হবে, তার ঘোষণাও থাকে। অগ্রিম বুকিংয়ের ব্যবস্থাও থাকে সেখানে।

চলতি নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড স্ট্যান্ড মোড় এলাকায় জালু কসাইয়ের ‘বিসমিল্লাহ গোশত বিতানে’ ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি শুরু হয়। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে প্রচার চলতে থাকে।

যারা কম দামে বিক্রি করতে শুরু করেন, তারা জানাতে থাকেন বিপুল চাহিদার কথা। এক পর্যায়ে ‘কম মুনাফা, বেশি বিক্রি’ নীতিই মাংস বিক্রেতাদের পকেট ভারী করতে থাকে।

ধীরে ধীরে দাম কমতে থাকে ঢাকার প্রধান বাজার ও এলাকার দোকানগুলোতেও। পুরান ঢাকার লালবাগ কিল্লারমোড় বাজারে গরুর মাংসের দোকানে ‘৬০০ টাকা কেজি’ সাইন বোর্ড টাঙিয়ে মাংস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে।

শাহজাহানপুর বাজারে ‘খলিল গোস্ত বিতান, প্রতি কেজি ৫৯৫ টাকা’ লেখা ব্যানার ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

দোকানে লম্বা লাইন : শুক্রবার শাহজাহানপুর বাজারে ‘খলিল গোস্ত বিতান’ এ বেলা ১টার দিকেও মাংস কিনতে একশর বেশি মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্রেতাদের মাংস কেটে দেওয়ার মধ্যে কথা বলার ফুরসত ছিল না কারও।

ক্রেতারা বলছেন, কদিন আগে এই দোকানেই মাংসের কেজি ছিল ৮০০ টাকা, তখন দিনভর দোকান মোটামুটি ফাঁকাই থাকত।

পাশের ‘হালাল মিট’ নামে একটি দোকানেও একই চিত্র। এখানেও দাম প্রতিকেজি ৫৯৫ টাকা।

সেখানকার বিক্রয়কর্মী সাজু আহমেদ বলেন, আমরা সামান্য লাভে মাংস বিক্রি করছি। তবে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খচর পোষানো যাচ্ছে।

গত তিন দিন ধরে এই দামে বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, কতদিন এভাবে বিক্রি করা যাবে জানা নেই। এখন কমদামে গরু কিনতে পারছি তাই কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

শাহরিয়ার আহমেদ নামের একজন ক্রেতা বলেন, আমি তালতলার বাসা থেকে ৫০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এখানে মাংস কিনতে এসেছি। এটা খুবই ঐতিহ্যবাহী একটি দোকান। এখানে ভালো দামে ভালো মাংস পাওয়া যাচ্ছে।

সুপার শপে কী চিত্র : সুপারশপগুলো শুক্রবার কিছুটা ছাড়ে পণ্য বিক্রি করে।

সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিন স্বপ্ন ঢাকায় গরুর মাংস বিক্রি করেছে ৬৯৯ টাকা কেজি দরে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৭৫০ টাকার আশেপাশে।

তবে তাদের চট্টগ্রামের আউটলেটে গরুর মাংসের দাম এদিন ছিল ৭৮০ টাকা কেজি।

একই দিন মীনা বাজার আবার গরুর মাংস বিক্রি করেছে ৭২৯ টাকা কেজি দরে।

প্রাণের ডেইলি শপিং ঢাকায় ৭৩১ টাকায় এবং সাভার ও চট্টগ্রামে ৭৭৯ টাকা কেজি করে গরুর মাংস বিক্রি করেছে।

আরেক সুপার শপ ইউনিমার্ট ৭৫৫ টাকা ও আগোরা ৭৪৯ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করছে এখনও।

অর্থাৎ, বাজারদরের চেয়ে সুপারশপের দর ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি।

এতদিন বেশি লাভ : ঢাকা মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম স্বীকার করেছেন, বিক্রেতারা এতদিন বেশি মুনাফা করেছেন।

মানুষ গরুর মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে এখন দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছে বিক্রেতারা। এতদিন বেশি লাভ করলেও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে ব্যবসা ভালো হচ্ছিল না। এখন মানুষও মাংস খেতে পারবে, দোকানে বিক্রিও বাড়বে।

ভোক্তাদের পক্ষের সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যখন দাম ৮০০ টাকা ছিল তখনও অতি মুনাফা হত, এখন ৬০০ টাকা হয়েছে এখনও অতি মুনাফা অব্যাহত আছে। তবে দাম যে একটু কমেছে সেই বিষয়টা স্বস্তির।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দাম কমার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেন, গত কোরবানে কিছু গরু হাট থেকে খামারে ফেরত যাওয়া ও রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণে মাংসের চাহিদা কম।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে গত কোরবানের ঈদে ২৪ লাখ গবাদি পশু বিক্রি না হয়ে খামারে ফিরে গেছে।

তিনি বলেন, এই জায়গায় একটা প্রতিযোগিতার ব্যাপার আছে। একে খামারিরা কম দামে গরু দিচ্ছে, তার ওপর এই সময় অন্যান্য বছর পিকনিক, বিয়ের চাপ থাকে, যেটা এবার কম। সে কারণে চাহিদা কম, যোগান বেশি।

খামারিদের এই নেতার মতে, সরকার চাইলে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে মাংসের একটা দর নির্ধারণ করে দিতে পারে। তাহলে মাংসের বাজারে অস্থিরতাটা নাও থাকতে পারে।

অবশ্য সরকার দাম ঠিক করে দিলেই যে বাজারে তা কার্যকর হয়, তা ঠিক নয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চাল এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম সরকার বেঁধে দিলেও সেই দরে বিক্রি নিশ্চিত করা যায়নি।

২০২০ সালের আগ পর্যন্ত প্রতি রোজায় গরুর মাংসের যে দর বেঁধে দেওয়া হতো, সেই দরে মানুষ কিনতে পেরেছেন, বিষয়টি এমনও নয়।

বেশি মুনাফার চেষ্টা এখনও : শাহজাহানপুরের হালাল মিটে মাংস কিনতে আসা শাহরিয়ার আহমেদ জানান, তিনি খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটে গিয়ে ৭৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখে এসেছেন।

মগবাজারের দিলু রোডের মাথায় একটি দোকানেও গত মঙ্গলবারও বিক্রেতাকে ৮০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।

ঢাকার কোথাও কোথাও ৭০০, কোথাও ৬৫০, কোথাও ৭৫০ টাকা দর হাঁকতে দেখা যাচ্ছে বিক্রেতাদের।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, বেশি লাভ করতে করতে তাদের লোভ পেয়ে গেছে। এ কারণে অনেকেই এখনও দাম কমাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অন্যরাও দাম কমাতে বাধ্য হবে।

খাবারের দামও কমেছে : ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গো খাদ্যের চড়া দাম নিয়েও দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। দাম যাতে আর না বাড়তে পারে সেজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে।

খামারিদের নেতা ইমরান আহমেদ জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে গো-খাদ্যের দামও কিছুটা কমেছে।

ক্ষেত্র বিশেষ ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ দাম কমেছে। মাংসের দাম কমার এটাও একটা কারণ হতে পারে, বলেন তিনি।

এমটিআই

Link copied!