নাশকতা ঠেকাতে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা 

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩, ১০:০১ পিএম
নাশকতা ঠেকাতে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা 

ঢাকা: সরকার বিরোধী আন্দোলনে ডাকা হরতাল অবরোধে নাশকতার ঘটনা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ সচিব। সম্প্রতি বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন এই নির্দেশনা দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সভায় বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগ এবং মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৫৯টি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে গুরুতর অপরাধ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ১৫৪টি হ্রাস পেয়েছে। 

সভায় বিভাগীয় কমিশনারগণ জানান, কতিপয় রাজনৈতিক দলের হরতাল অবরোধ কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্ন কিছু নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যেমন রাস্তায় টায়ার জ্বালানো, বাস-ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ব্যতীত সকল বিভাগের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সবাইকে এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় কমিশনারগণকে নির্দেশ প্রদান করেন। 

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে নির্দেশনা দেয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের বলা হয়েছে।

চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৬৯৩টি টাস্ক ফোর্সের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে জেলা টাস্ক ফোর্স পরিচালিত চোরাচালানবিরোধী অভিযান ৪২টি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা প্রশাসকদের চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্স অভিযান জোরদারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অভিযান জোরদার করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে নির্দেশনা দিতে বিভাগীয় কমিশনারদের বলা হয়।

গত অক্টোবর মাসে ৫ হাজার ২৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে এবং ১০ হাজার ৯৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সংখ্যা ৭৭৩ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মামলার সংখ্যা ১৩৭০টি বৃদ্ধি পেয়েছে। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক প্রয়োগসিদ্ধভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখা এবং মোবাইল কোর্টের তথ্য ই-কোর্ট সিস্টেমে প্রত্যেক মাসের ৫ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে আপলোড করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।

ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮ এর আওতায় দায়েরকৃত মামলাগুলো পর্যালোচনা করা হয়। অক্টোবর মাসে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮ হাজার ১৩০টি  মামলা রজু হয়েছে এবং ৮ হাজার ৮৮৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে অনিষ্পন্ন পুঞ্জীভূত মামলার সংখ্যা ৩৮ হাজার ৪৪৭টি। 

সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৭৪৮টি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট আদালতে ৫ হাজার ৩৫৯ মামলা রজু হয়েছে এবং নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৮৮৩টি। বর্তমানে অনিষ্পন্ন পুঞ্জীভূত মামলার সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৩১টি।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর আওতায় ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়েরকৃত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলো এক হাজার ২৫০টি এবং এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬৩৬ মামলা অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব মামলা অতিদ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অক্টোবর মাসে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মোবাইল কোর্টের ৩৩টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩০টি মামলার ২১ জনকে ৪০ হাজার ১০০ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৭ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

সেপ্টম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে মোবাইল কোর্টের অভিযান ৩টি হ্রাস পেয়েছে, মামলার সংখ্যা ৩টি হ্রাস পেয়েছে। অর্থদণ্ডে দণ্ডিত আসামির সংখ্যা একজন বৃদ্ধি পেয়েছে। কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামির সংখ্যা ৪ জন হ্রাস পেয়েছে। অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড উভয় দণ্ডে দণ্ডিত আসামির সংখ্যা একই রয়েছে। আদায়কৃত জরিমানার পরিমাণ ২ হাজার ৯০০ টাকা হ্রাস পেয়েছে। এ জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সভায় বলা হয়, অক্টোবর মাসে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে।  মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৭টি অভিযোগের। বর্তমানে ৬২টি অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এসব তদন্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেরণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে এক মাসের ঊর্ধ্বে ঢাকা বিভাগে ৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ২টি, রাজশাহী বিভাগে একটি, খুলনা বিভাগে একটি, বরিশাল বিভাগে ২টি, সিলেট বিভাগে একটি, রংপুর ও ময়মনসিং বিভাগে একটি করে মোট ১৪টি অভিযোগ অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রেরণ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয় সভায়।

তিন মাসের ঊর্ধ্বে চট্টগ্রাম বিভাগে ১০টি, রাজশাহী বিভাগে দুটি, খুলনায় ২টি, বরিশাল বিভাগে ১৯টি করে, রংপুর বিভাগে ১টি,  ময়মনসিংহ বিভাগে একটি করে মোট ৩৬টি অভিযোগ অনিষ্পন্ন রয়েছে। তিন মাসের ঊর্ধ্বে অনিষ্পন্ন অভিযোগের প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দ্রুত প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়।

অক্টোবর মাসে ভূমি অধিগ্রহণে ৬ হাজার ২২৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে মামলার সংখ্যা ৩২টি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনিষ্পন্ন আবেদনের সংখ্যা ১ হাজার ২৪২টি বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির আবেদন নিষ্পত্তির সংখ্যা ৫১৩টি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংক্রান্ত কাজে জনগণ যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা এবং অধিগ্রহণ কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এমএস

Link copied!