পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধৈর্য ধরার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৪, ১০:২৯ এএম
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধৈর্য ধরার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার

ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মোড় নিয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন ধৈর্য ধরার নীতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সব পদক্ষেপেই ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হচ্ছে। আরও কয়েকটা দিন এই নীতি অনুসরণ করবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ধৈর্য ধরার এ কৌশলের অংশ হিসেবে পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টায় সরকারের বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তনও দেখা যেতে পারে। মন্ত্রিসভার দু-তিনজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া এবং দলের কাউকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টাসহ নতুন আরও কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয়ও পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। এসব রদবদলের অনেক কিছু কোটা আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে মিলে যেতে পারে।

সূত্র জানায়, ধৈর্য ধরার যে নীতি সরকার ও আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে দলীয় কর্মসূচি ও নেতাকর্মীদের ঘোষণা দিয়ে মাঠে না নামানো অন্যতম আরেকটি পদক্ষেপ।

আন্দোলনের সমন্বয়ক যারা আছেন, তাদের সঙ্গে দলের দক্ষ নেতাদের যোগাযোগ স্থাপন করা, সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরও সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টিও রয়েছে পরিকল্পনার মধ্যে।

সূত্র জানায়, কোটা আন্দোলন ঘিরে দলে ও সরকারে কিছু দুর্বলতা ইতিমধ্যে টের পাওয়া গেছে। এগুলো দূর করার সিদ্ধান্তও মাথায় রেখেছেন সরকারপ্রধান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পর দুর্বলতা দূর করার চিন্তা রাখা হলেও যেহেতু অনেক দুর্বলতার সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া না হওয়া যুক্ত হয়ে গেছে, তাই এখনই দলের ও সরকারের দুর্বলতা দূর করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদের কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে সেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ হতেই পারে। তবে হবেই, এমন কথা নয়। আমরা কোনো সংঘাতে যাব না। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব।’

সূত্রগুলো জানায়, কোটা আন্দোলনে দলের ও সরকারের একটি অংশ ছিল যারা সব ঠিক আছে, সব ঠিক আছে জানিয়ে প্রকৃত চিত্র সরকারের শীর্ষপর্যায়ে পৌঁছায়নি, বরং মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংকট ঘনীভূত করেছে, সেই অংশটিকে ছাঁটাই করা হবে।

ইতিমধ্যেই কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এমন আলোচনাও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের কেউ কেউ মনে করছেন, সমন্বয়কদের কাউকে কাউকে আন্দোলনের পরিণতি কী হতে পারে সে ব্যাপারে মগজ ধোলাই ও প্ররোচিত করেছে বিএনপি-জামায়াত এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে তাদের বোঝানোর জন্য কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে প্রকাশ্যে আনা হলেও অনেককে অপ্রকাশ্য কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা সংঘাত চায় দাবি করে শাজাহান খান বলেন, ‘ওরা তো চায় সংঘাত। তাই আমরা খুব হিসাব করে... আমরা দেখলাম বিএনপি-জামায়াত ছাত্রদের ওপর ভর করে সংঘাত চালিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে, এ ধরনের অযাচিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য কাজ করব।’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের হাতে আরও বেশ কিছু বিকল্প রয়েছে। ধৈর্য ধরার অনুসরণ করেও সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হলে বিকল্পগুলো কাজে লাগানো হবে। সেই ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার দিকেও যেতে পারে সরকার।

এ প্রসঙ্গে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র বলেন, প্রশ্ন থাকতে পারে, যেগুলো এখন বাস্তবায়ন করছে, সরকার সেগুলো আগে করেনি কেন? তার দাবি, আগে পূরণ করা হলেও যেগুলো ঘটছে, ঘটেছে, এগুলো ঘটতই। এ সংকট দাবি মানা বা না মানার জন্য মূলত সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিনের ছকের অংশই হলো আজকের সংকট।

এই সূত্রের দাবি, একটি দেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত গেমপ্ল্যান বানিয়ে দিয়েছে। সেই গেমই হলো আজকের সংকট।

সূত্র জানায়, পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তের দিকে যাবে না আওয়ামী লীগ ও সরকার। গ্রেপ্তার অভিযান, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনসহ কোটা আন্দোলন উসকে উঠতে পারে এমন সবকিছু থেকে বিরত থাকবে সরকার, তথা আওয়ামী লীগ।

ওই সূত্র আরও জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান আন্দোলনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে তারা মনে করছে। ফলে গ্রেপ্তার কন্ধ করা, গ্রেপ্তারকৃতদের ছেড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না। সেই সঙ্গে দলের ‘চালকের আসনে’ আপাতত কাউকে বসাতে পারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘সংঘাতে জড়ানোর কোনো মানসিকতা আমাদের নেই, সংঘাতে জড়ানোর কোনো যুক্তিও নেই। আমরা শান্তির পক্ষে কাজ করছি। তারা তাদের কাজ করবে। অসুবিধা কী? তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া তো ঠিক না।’

শিক্ষার্থীদের সরকার পতনের এক দফা দাবির বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘সরকার জনগণের ভোটে গঠিত হয়েছে। এখন তাদের কয়েকজনের মতামতের ভিত্তিতে পদত্যাগ করবে, তা ঠিক নয়। সরকার যথারীতি তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Link copied!