রাওয়ালপিন্ডিতে ব্যাটে-বলের লড়াই

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
রাওয়ালপিন্ডিতে ব্যাটে-বলের লড়াই

ঢাকা: গোটা দিনে দুই দল মিলিয়ে ৯১ ওভারের ৮৮টিই করলেন স্পিনাররা। উইকেটের চরিত্র বোঝার জন্য যথেষ্ট এটিই। মুলতানের পর রাওয়ালপিন্ডিতেও প্রথম দিন দাপট দেখালেন স্পিনাররা। ইংল্যান্ডকে তিনশর নিচে থামিয়ে স্বস্তিতে নেই পাকিস্তানও।

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিন ইংল্যান্ডকে ২৬৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে পাকিস্তান করেছে ৩ উইকেটে ৭৩ রান। এখনও ১৯৪ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা।

দুই দল মিলিয়ে বৃহস্পতিবার পতন হওয়া ১৩ উইকেটের ১২টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আশা জাগানিয়া শুরুর পর ধস নামে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। 

বিনা উইকেটে ৫৬ থেকে স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৯৮ ও ৬ উইকেটে ১১৮। এরপর কিপার-ব্যাটসম্যান জেমি স্মিথের ৬ ছক্কা ও ৫ চারে ৮৯ রানের আগ্রাসী ইনিংস ও গাস অ্যাটকিনসনের সঙ্গে শতরানের জুটির সৌজন্যে আড়াইশ ছাড়াতে পারে তারা।

মুলতানে দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেটের সবকটি ভাগ করে নেওয়া দুই স্পিনার সাজিদ খান ও নোমান আলি মিলে এবার প্রথম ইনিংসে নেন ৯ উইকেট। অফ স্পিনার সাজিদ ১২৮ রানে নেন ৬টি, বাঁহাতি নোমান ৮৮ রানে ৩টি। অন্যটি নেন লেগ স্পিনার জাহিদ মাহমুদ।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার আমির জামালকে এদিন বোলিং দেননি পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ। সাজিদ, নোমান, জাহিদ ও অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার সালমান আলি আগা মিলে করেন ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৬৮.২ ওভারের সবকটি।

১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে পেসারদের বোলিং না করার স্রেফ দ্বিতীয় ঘটনা এটি। প্রথমটি ছিল ১৮৮২ সালে, সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১১৫ ওভারের (৪ বলের ওভার) সবকটি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই স্পিনার জোয়ি পালমার ও এডউইন ইভান্স মিলে।

সাজিদ ও নোমানের বোলিং শুরু করার মধ্যে দিয়ে আরেকটি বিরল ঘটনার দেখাও মেলে। পাকিস্তানের মাটিতে কোনো টেস্টের প্রথম দুই ওভার দুই স্পিনারের করার প্রথম ঘটনা এটি। এর আগে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টে, ২০১৮ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্টে ও ১৯৬৪ সালে কানপুরে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট দেখা গিয়েছিল এমন ঘটনা।

দুই স্পিনারকে সামলে সতর্ক শুরু করেন বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি। প্রথম ১৩ ওভার তারা নিরাপদে কাটিয়ে দেন ৫৪ রান তুলে। পরের ওভারে নোমানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করে পয়েন্টে ধরা পড়েন ক্রলি (৪৩ বলে ২৯)।

অলি পোপ ও জো রুট টিকতে পারেননি। পরপর দুই ওভারে এই দুজনকে এলবিডব্লিউ করে দেন সাজিদ।

ডাকেট ফিফটি পূর্ণ করেন ৭৩ বলে। এরপর তিনিও আর বেশিক্ষণ টেকেননি। নোমানের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ওপেনার। ৮৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় তিনি করেন ৫২ রান।

শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা হ্যারি ব্রুক বোল্ড হন সাজিদকে সুইপ করার চেষ্টায়। প্রথম সেশনে একশর আগে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।

লাঞ্চের পর দ্রুত বিদায় নেন বেন স্টোকসও। সাজিদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করে স্লিপে ধরা পড়েন ইংলিশ অধিনায়ক। তখন ১১৮ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড অল্পে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে উদ্ধার করে স্মিথ ও অ্যাটকিনসনের জুটি।

স্মিথ শুরুতে এগিয়ে যান দেখেশুনে খেলে। ফিফটি করেন তিনি ৯৪ বলে। এরপর বাড়ান রানের গতি। পরের ২৪ বলে করেন ৩৯ রান। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে তুলে বিদায় নেন তিনি। তখন স্কোরবোর্ডে তার রান দেখাচ্ছিল ১১৯ বলে ৯১। আধা ঘন্টা পর সংশোধন করে তার রান করা হয় ৮৯। মূলত ৫৯তম ওভারে তার একটি চারকে ছক্কা হিসাবে গণনা করা হয়েছিল।

তার আগে অ্যাটকিনসন ৭১ বলে ৩৯ করে ফিরলে ভাঙে ১০৫ রানের জুটি। রেহান আহমেদকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করা সাজিদ পরের ওভারে জ্যাক লিচকে থামিয়ে গুটিয়ে দেন ইংল্যান্ডের ইনিংস।

১০ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে তিনবার ইনিংসে পাঁচ বা এর বেশি উইকেট নিলেন তিনি। জবাবে পাকিস্তানের দুই ওপেনার প্রথম ৯ ওভারে তোলেন ৩৩ রান। পরের ওভারে আবদুল্লাহ শাফিককে এলবিডব্লিউ করে শুরুর জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার শোয়েব বাশির।

দুই ওভার পর আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার লিচ। শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে কামরান গুলামকে বোল্ড করে দেন পেসার অ্যাটকিনসন। আগের ম্যাচে অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ৩ রানে।

বিনা উইকেটে ৩৫ থেকে দ্রুতই পাকিস্তানের স্কোর হয়ে যায় ৩ উইকেটে ৪৬। সেখান থেকে দিনের বাকি সময়টা নিরাপদে কাটিয়ে দেন মাসুদ ও সাউদ শাকিল।

তৃতীয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে এই ম্যাচে ফেরানো রেহানকে দিয়ে শুধু দিনের শেষ ওভারটি করান অধিনায়ক স্টোকস।

এআর

Link copied!