ঢাকা : প্রথম দিন শেষ বিকেলে দ্বিতীয় নতুন বলে প্রথম ওভারটি করেছিলেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় দিন সকালে প্রথম ওভারটি করলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
আরেক প্রান্তে অবশ্য নতুন বলে শুরু করলেন পেসার হাসান মাহমুদ। প্রথম বলে একটু মুভমেন্টও পেলেন তিনি।
টস জিতে যে লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রথম দিনে তা পূরণ হয়েছে ভালোভাবেই। এখন এই ভিতকে কাজে লাগিয়ে রানের পাহাড় গড়ে তোলার চেষ্টা করবে তারা।
১৪১ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করা টনি ডি জর্জি চেষ্টা করবেন তার প্রথম সেঞ্চুরিটিকে দ্বিশতকে রূপ দিতে। তার সঙ্গী ডেভিড বেডিংহ্যাম দিন শুরু করবেন ১৮ রান নিয়ে। আগের দিন বেশ ইতিবাচক শুরু করেছেন তিনি। দুটি ছক্কা মেরে ফেলেছেন এর মধ্যেই।
আপাতত দুই ব্যাটসম্যানের প্রথম লক্ষ্য থাকবে সকালে দ্বিতীয় নতুন বল নির্বিঘ্নে পার করে দেওয়া।
টস হেরে বোলিংয়ে নেমে প্রথম দিনে মোটেও সুবিধে করতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলারদের কাজটা ছিল এমনিতেই কঠিন। বাংলাদেশের পেস ও স্পিনে ছিল না ততটা ধার। দুই সেঞ্চুরিয়ান ডনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবসকে দ্রুত ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন অভিষিক্ত কিপার মাহিদুল ইসলাম। সব মিলিয়ে প্রথম দিনে বড় স্কোরের ভিত গড়ে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা।
দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বড় ভরসা এখানে দ্বিতীয় নতুন বল। প্রথম দিন শেষ বিকেলে পাওয়া সেই বলে স্রেফ একটি ওভার খেলা হয়েছে। সকালে যদি কিছুটা আর্দ্রতা থাকে উইকেটে এবং পেসাররা যদি কাজে লাগাতে পারেন দ্বিতীয় নতুন বল, নতুন কিছু হতেও পারে!
দক্ষিণ আফ্রিকার দুই সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের দুই উইকেট আর দুটি আক্ষেপ : জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শক এমনিই ছিল কম। রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে যারা আশা নিয়ে বসে থাকলেন, সারা দিনে আনন্দের উপলক্ষ পেলেন তারা মোটে দুবার! উইকেটে বোলারদের জন্য সহায়তা এমনিতেই তেমন একটা ছিল না। বাংলাদেশের বোলাররাও পারল না দারুণ কিছু করতে। এর মধ্যে আবার দুটি সুযোগও হাতছাড়া হলো। দিনজুড়ে ২২ গজে তাই দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট।
চট্টগ্রামে স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবস। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩০৭ রান।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে রোদ ঝলমলে দিনের শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। টস ভাগ্যকে পাশে পেয়ে আগে ব্যাটিং নেন এইডেন মার্করাম। পরে তিনি থিতু হয়ে ফিরে গেলেও বাংলাদেশকে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর দিনের ভোগান্তি পোহাতে হয় ডি জর্জি ও স্টাবসের ব্যাটে।
১০ চার ও ৩ ছক্কায় ১৪১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করে ডি জর্জি। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির পরিচিত মুখ স্টাবস প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফেরেন ১০৬ রানে।
দুই সেঞ্চুরিয়ানকেই অবশ্য অল্প রানে ফেরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু একটিও কাজে লাগাতে পারেননি মাহিদুল ইসলাম। সপ্তম ওভারে ৬ রানে ডি জর্জির ক্যাচ নিতে পারেননি অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক। পরে ২৫ রানে স্টাবসকে স্টাম্পিং করতে পারেননি তিনি।
তিনি ম্যাচটি খেলার সুযোগ পেয়েছে লিটন কুমার দাসের অসুস্থতায়। আগের রাতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরদিন বাংলাদেশের ১০৬ নম্বর টেস্ট ক্যাপ পেয়ে যান মাহিদুল।
মাহিদুলের দুটি ছাড়াও টুকটাক সুযোগ এসেছে। কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। বেঁচে গিয়ে দুইশ ছোঁয়া জুটি গড়েন ডি জর্জি ও স্টাবস। দিনের শেষ দিকে স্টাবস ফেরাতে পারলেও ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন ডি জর্জি।
ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে বোলারদের তেমন সহায়তা দেখা যায়নি প্রথম দিন। তাইজুলের কিছু ডেলিভারি টার্ন করলেও তা ছিল মন্থর। যা ব্যাটসম্যানদের মনে সংশয় জাগাতে পারেনি।
পুরো দিনে অবশ্য তেমন নিয়ন্ত্রিত বোলিংও করতে পারেনি বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৮১ ওভারের মধ্যে মেডেন মাত্র ৫টি।
তিন পরিবর্তনের একাদশে দুই পেসার নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবে দুই ওভার পরই বোলিং থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় দলে আসা নাহিদ রানাকে। ষষ্ঠ ওভার থেকে শুরু হয় স্পিন আক্রমণ। তাতেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।
অনায়াসেই প্রথম ঘণ্টা পার করে দেন মার্করাম ও ডি জর্জি। এর মাঝেই সপ্তম ওভারে ডি জর্জির ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল বাম দিকে ঝাঁপিয়ে গ্লাভসে জমাতে পারেননি মাহিদুল।
দুই ওপেনারের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ১১তম ওভারে জুটির পঞ্চাশ পূর্ণ হয়। এর কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশকে একরকম উপহারই দেন মার্করাম। তাইজুলের বলে ক্রিজ ছেড়ে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে মুমিনুল হকের হাতে সহজ ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
২ চারে ৩৩ রান করে ফেরেন মার্করাম। ১৮তম ওভারে জুটি ভাঙে ৬৯ রানে।
এরপর শুরু দ্বিতীয় উইকেটের বিশাল জুটি। ডি জর্জি ও স্টাবস মিলে ৩৪২ বলে যোগ করেন ২০১ রান। মিরপুর টেস্টের মতো এই ইনিংসেও বাংলাদেশের স্পিনের বিপক্ষে বেশ সফলভাবে সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা।
প্রথম সেশনের ২৮ ওভারে ১০৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মধ্যাহ্ন বিরতির পর রানের গতি কিছুটা কমাতে পারেন তাইজুল, হাসান মাহমুদ, নাহিদরা। মাঝে প্রায় ১৬ ওভার কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি ডি জর্জি ও স্টাবস।
ওই সময়েই আসে দ্বিতীয় সুযোগ। ৩২তম ওভারে তাইজুলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসে স্টাবসের পা। কিন্তু বল ঠিকঠাক গ্লাভসেই নিতে পারেননি মাহিদুল।
কয়েক ওভার পর তাইজুলের বলে প্যাডেল সুইপ করেন স্টাবস। ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচের মতো ওঠে বল। কিন্তু সীমানার অনেক ভেতরে থাকায় সেটির নাগাল পাননি বদলি ফিল্ডার হাসান মুরাদ। আরেকবার হতাশায় পোড়েন তাইজুল।
দুই ওভার পর হাসানের বলে ডি জর্জির ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। কিন্তু প্রথম স্লিপে থাকা সাদমানের হাতের আগেই ড্রপ পড়ে যায় বল। তাই আরও একবার কোনো বিপদের মুখে না পড়েই এগিয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার।
জীবন পেয়ে ধীরে ধীরে জুটির শতরান পূর্ণ করেন দুই ব্যাটসম্যান। মূল বোলাররা জুটি ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ায় চা বিরতির আগে পশ্চিম গ্যালারি থেকে দর্শকরা বলতে থাকেন, 'মুমিনুল ভাইকে বোলিংয়ে আনেন।'
কিছুক্ষণ পর সেটিই করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাতেও কাজ হয়নি। বিরতিতে যাওয়ার আগে সুইপ শটে বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কের জাদুকরী স্পর্শ পান ডি জর্জি। প্রথম সেঞ্চুরি হওয়ায় উদযাপনটাও হয় বিশেষ। শুরুতে দুই হাত মেলে দিয়ে পরে বুকের কাছে এনে চেলসির ইংলিশ উইঙ্গার কোল পালমারের গোল উদযাপনের মতোই সেঞ্চুরির উদযাপন করেন ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় সেশনের পুরোটা নির্বিঘ্নে কাটান ডি জর্জি ও স্টাবস। চা বিরতির পর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ে আরও। রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন স্টাবস। সুযোগ পেলেই ক্রিজ ছেড়ে বড় শট খেলতে থাকেন তিনি।
এর মাঝেই ৬৭তম ওভারে আসে রান আউটের সুযোগ। হাসানের বল পুল করে রানের জন্য ছোটেন ডি জর্জি। স্কয়ার লেগের ফিল্ডার সীমানার অনেক ভেতরে থাকায় আগেভাগেই বল থামিয়ে দেন। ফলে নন স্ট্রাইকে তাড়াহুড়ায় পড়ে যান বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয়ের লক্ষ্যভ্রষ্ট থ্রোয়ে এ দফায়ও বিপদ ঘটেনি প্রোটিয়াদের।
দিনের শেষ ঘণ্টায় সেঞ্চুরিতে পৌঁছান স্টাবস।
ডি জর্জির পর স্টাবসের সৌজন্যে প্রায় পাঁচ বছর পর একই ইনিংসে দুই সেঞ্চুরির দেখা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে আটটি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসের ছয়টিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দিলেন স্টাবস।
এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্টাবস। দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাইজুলের কিছুটা নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় করেন ১৯৮ বলে ১০৬ রান।
দিনের বাকি আধঘণ্টায় বিপদ ঘটতে দেননি ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩৭ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন তারা। প্রথম সেঞ্চুরিকে আরও বড় কিছুতে রূপ দেওয়ার আশা জাগিয়ে দেড়শ কাছে গিয়ে দিন শেষ করেন ডি জর্জি।
আলোকস্বল্পতায় ৯ ওভার বাকি থাকতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৮১ ওভারে ৩০৭/২ (মার্করাম ৩৩, ডি জর্জি ১৪১*, স্টাবস ১০৬, বেডিংহ্যাম ১৮*; হাসান ১৩-০-৪৭-০, নাহিদ ১৩-২-৩৪-০, তাইজুল ৩০-২-১১০-২, মিরাজ ২১-১-৯৫-০, মুমিনুল ৪-০-১৫-০)
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :