ঢাকা: শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সিরাজের প্যাডে লাগতেই এলবিডব্লিউয়ের জোরাল আবেদন করলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা।
আঙুল তুলে দিতে সময় লাগল না আম্পায়ারের। উল্লাসে মেতে উঠলেন লায়ন-কামিন্সরা। ব্যাটসম্যান রিভিউ নেওয়ায় একটু অবশ্য থামতে হলো তাদের। খানিক পরই আবার শুরু হলো উদযাপন। দারুণ এক জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল তারা।
অথচ চা-বিরতি পর্যন্তও স্বস্তিতে ছিল ভারত। ৩৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ১১২।
দ্বিতীয় সেশনে উইকেট পড়তে দেননি যশস্বী জয়সোয়াল-ঋষভ প্যান্ট। ৭৯ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের চোখেমুখে হতাশাটা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তারা। কিন্তু চা-বিরতির পর শেষ সেশনে সেই অস্ট্রেলিয়াই ভারতের ড্রয়ের ভাবনা ছিনিয়ে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ম্যাচটা জিতে নিল!
পার্টটাইম স্পিনার ট্রাভিস হেডকে শেষ সেশনে নিয়ে এসে চমকে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। শেষ সেশনে পঞ্চম ওভারে সেই হেডেরই খাটো লেংথের বল অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে টেনে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন প্যান্ট। ১০৪ বলে তার ৩০ রানের ইনিংস শেষ হওয়ায় চতুর্থ উইকেটে ৮৮ রানের জুটিও ভাঙায় খুলে যায় দুয়ার।
১২১ রান থেকে ভারত মাত্র ৩৪ রানে হারিয়েছে বাকি ৭ উইকেট। সফরকারীদের ১৫৫ রানে অলআউট করে ১৮৪ রানের দারুণ জয় তুলে নেয় কামিন্সের দল। মেলবোর্নে এই জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট সিডনিতে আগামী ৩ জানুয়ারি শুরু।
প্যান্ট আউট হওয়ার তিন ওভার পরই মাত্র সাত বলের মধ্যে আরও ২টি উইকেট হারায় ভারত। চা-বিরতির পর মাত্র ৯.২ ওভারের মধ্যে ১৮ রানে সব মিলিয়ে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন মহাবিপদে। তবু আশা টিকে ছিল জয়সোয়ালে। এক পাশে ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো ব্যাট করছিলেন এই ওপেনার।
২০৮ বলে ৮৪ রান করা সেই ‘ঋষি’কে ফিরতে হয়েছে তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের শরফুদ্দৌলার সাহসী এক সিদ্ধান্তে। প্রযুক্তিকে তোয়াক্কা না করে শরফুদ্দৌলার সেই আউট ঘোষণা তখনই আলোচনার জন্ম দেয়। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া মাঠে জয়ের সুবাস পেয়ে ফিল্ডারদের দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ঘিরে ফেলে চেপে ধরে।
১৭ বল খেলা আকাশ দীপ বোল্যান্ডের বলে সেই চাপেই ফেঁসেছেন শর্ট লেগে হেডকে ক্যাচ দিয়ে। এক ওভার পর বুমরাও (৮ বলে ০) ফেরেন স্লিপে স্টিভেন স্মিথকে ক্যাচ দিয়ে। ডাইভ দিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন, সেই বোল্যান্ডের বলেই!
সে সময় এবং তার আগে লায়ন বোলিংয়ে আসা মাত্রই সব ফিল্ডারকে দুই পাশেই ছাতার মতো সাজিয়ে ব্যাটসম্যানদের ঘিরে ধরে অস্ট্রেলিয়া। তবে শেষ উইকেট মোহাম্মদ সিরাজ ক্রিজের আশপাশে ক্যাচ দেননি। ৭৯.১ ওভারে লায়নের বলে এলবিডব্লু হন।
৯ উইকেটে ২২৮ রান নিয়ে আজ দিনের খেলা শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই লায়নকে বোল্ড করে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩৪ রানে অলআউটের পাশাপাশি ৫ উইকেটও নেন ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরাহ।
এরপর জয়ের জন্য ৩৪০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম সেশনেই ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। ৪০ বলে ৯ রান করা রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলকে (০) ফেরান কামিন্স। ২৯ বলে ৫ রান করা কোহলিকে আবারও কল্পিত ফোর্থ-ফিফথ স্টাম্পে স্লিপে ক্যাচ বানান আরেক পেসার মিচেল স্টার্ক।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ১২৭ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় সেশনে জমাট ব্যাটিং করেন প্যান্ট ও জয়সোয়াল। শেষ সেশনে ২৫.১ ওভারে ৪৩ রান তুলে মোট ৭ উইকেট হারিয়েছে ভারত।
এর মধ্যে জয়সোয়ালের আউটটি নিঃসন্দেহে আলোচনার জন্ম দেবে। অস্ট্রেলিয়ার জয় ও ভারতের ড্রয়ের আশায় নির্ধারক হতে একমাত্র তিনিই দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিজে। ৭০.৫ ওভারে কামিন্সের বাউন্সার পুল করার চেষ্টা করেছিলেন জয়সোয়াল। শুরুতে মনে হয়েছিল বল ব্যাটে কিংবা গ্লাভসে লাগেনি। কামিন্সদের আবেদনে মাঠের আম্পায়ারও তাই সাড়া দেননি।
কামিন্স রিভিউ নেওয়ার পর তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলাও স্নিকোতে বল ব্যাটে কিংবা গ্লাভসে লাগার ‘লাইন’ উঠতে দেখেননি। কিন্তু খুব কাছ থেকে নেওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট বোঝা গেছে, বল ব্যাটের কানা ও গ্লাভসে লেগে গতিপথ পাল্টেছে। শরফুদ্দৌলা মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টে জয়সোয়ালকে আউট ঘোষণা করেন। তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এই বাঁহাতি। মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্কও করেন। তবে ধারাভাষ্যকারেরা শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তকে সাহসী বলেছেন এবং সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন কামিন্স ও বোল্যান্ড। ম্যাচসেরা কামিন্স বলেছেন, ‘দারুণ এক ম্যাচ। আমার খেলা অন্যতম সেরা।’ হারের পর ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘খুব হতাশার। ব্যাপারটা এটা নয় যে আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়তে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা পারিনি।’
এআর
আপনার মতামত লিখুন :