ঢাকা: স্বপ্নের ফাইনালে মুখোমুখি দুই ফুটবল পরাশক্তি, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। যারা কিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই বেশি পরিচিত। সারাবিশ্বই এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে, এই দুই দলের ফাইনালের লড়াই দেখার জন্য। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর আর ফুটবলের বৈশ্বিক মঞ্চে শিরোপা জেতেনি আর্জেন্টিনা। সবশেষ কোপা আমেরিকার শিরোপা তারা জিতেছে ১৯৯৩ সালে। এরপর একে একে ২৮টি বছর কেটে গেলো। কতবার শিরোপার নাগালে গিয়েও 'তীরে এসে তরী' ডোবার কারণে ট্রফিটা আর ছোঁয়া হয়নি।
এদিকে ৩৪ বছর পার হয়ে গেছে মেসির। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন ধরা হয় তাকে। যিনি কিনা পেলে এবং ম্যারাডোনাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। কিন্তু আক্ষেপ হলো, ক্লাব ফুটবলে ভুরিভুরি সাফল্য থাকলেও মেসির নামের পাশে একটিও বড় কোনো শিরোপা নেই। মেসি এবার সেই আক্ষেপ ঘুচাবেন এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবল বিশ্বের। অন্যদিকে ব্রাজিলও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের উদ্দেশ্য, ধ্যান, জ্ঞান একটাই। সেটা হচ্ছে শিরোপা পুনরুদ্ধার করা। এরইমধ্যে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার মার্কুইনহোস তো বলেই দিয়েছেন, বড় কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিততে না পারা মেসিকে আরো একবার হতাশ করতে চান তারা।
যাই হোক এই দুই দলের ফাইনালের লড়াই নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলারদের সঙ্গে। সোনালী নিউজকে তারা জানিয়েছেন তাদের ভাবনার কথা।
প্রথমে কথা হয় বাংলাদেশের সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলামের সঙ্গে। যিনি কিনা একসময় বাংলাদেশের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথমেই জানতে চেয়েছিলাম ফুটবলে তিনি কোন দলকে সমর্থন করেন? উত্তরে এককভাবে কোনো দলের কথা না বললেও আর্জেন্টিনার প্রতি তার সফট কর্ণার কাজ করে এমন মতই প্রকাশ করেন। সেটির কারণটা না হয় সাবেক এই ফুটবলারের ভাবনা থেকেই জানবেন।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিয়ে শুরুতেই তিনি বলেন, সারা বিশ্বের কাছেই এই দুটি দেশ সমর্থন এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে। আমি মনে করি এটা স্বপ্নের ফাইনাল। সবাই আশা করেছিল, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলুক। ফুটবল ভক্তদের সেই আশা পূরণ হয়েছে, সবাই এই খেলার অপেক্ষায় আছেন। দুই দলেরই দুজন এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলোয়াড় আছেন। তারা মেসি ও নেইমার। দুজনের লড়াইও উপভোগ করার অপেক্ষায় আছি।
আরও পড়ুন<<>>ইউরো ফাইনাল নিয়ে কী ভাবছেন দেশের সাবেক তারকা ফুটবলাররা
ব্রাজিল এডভান্টেজটা হলো মারাকানা স্টেডিয়ামে খেলা হবে। সব মিলিয়ে আমি আশা করি দুই দলই একটি সুন্দর খেলা উপহার দিবে। দুটাই লাতিন আমেরিকার দল। শক্তি মত্তার দিক থেকেও কেউ কাউকে তাচ্ছিল্য করার সুযোগ নেই। এজন্য আমি মনে করি দুই দলেরই সমান সুযোগ থাকছে। তবে রেজাল্ট কী হবে, সেটা নিয়ে আগাম কিছু বলা যাবে না। যদিও আমি মনে করি, সর্বকালের সেরা একজন ফুটবলার হিসেবে মেসি এবারের শিরোপা জিতুক। একক কোনো দল সাপোর্ট না করলেও একথা বলার অন্যতম কারণ, ২০১১ সালে মেসি যখন বাংলাদেশে আসেন তখন প্রায় ২৪ ঘন্টাই তার সঙ্গে ছিলাম। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তার প্রতি আমার আলাদা একটা টান এবং ভালোবাসা অনুভব করি।
এরপর কথা হয় বাংলাদেশের আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুল গাফফারের সঙ্গে। তিনি সোনালী নিউজকে বলেন, এককভাবে তিনিও কোনো দল সমর্থন করেন না। যেহেতু ফুটবল একটা শিল্প তাই যারা নান্দনিক ফুটবল খেলে তাদেরকেই তিনি সমর্থন করেন। এক্ষেত্রে ধরুন, স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, উরুগুয়ে, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এ সবগুলো দলকেই ভালো লাগে।
কোপা আমেরিকার ফাইনাল নিয়ে তিনি বলেন, এটা একটা স্বপ্নের ফাইনাল। আমি মনে করি কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। দারুণ এক খেলা উপভোগ করার অপেক্ষায় আছি। আর্জেন্টিনা চাইবে তাদের ২৮ বছরের শিরোপা খরা ঘুচাতে। অন্যদিকে ব্রাজিল চাইবে শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে। সেক্ষেত্রে দুইদলের সেরা দুই খেলোয়াড় মেসি এবং নেইমারের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ কাজ করবে। তাই আমার মতে এটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নয় মেসি-নেইমারের লড়াইও। অনেকে ভাবছে মেসির দিকে তাকিয়ে ব্রাজিল হয়তো আর্জেন্টিনাকে ছাড় দিতে পারে। আমি সেরকম সুযোগ দেখছি না। কারণ ব্রাজিলের কাছে সহানুভূতির চেয়ে তাদের দেশ আগে। আর খেলায় এমনটা ভাবারও কোনো সুযোগ নেই। তাই রেজাল্ট আগাম বলা যাচ্ছে না। দুই দলেরই শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা আছে।
কথা হয় আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদের সঙ্গে। যিনি বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় ছিলেন। ফুটবলে কোন দলকে সমর্থন করেন এমন প্রশ্নে তিনি একবাক্যে বলেন, আমি আগে থেকে ব্রাজিলের সমর্থক।
ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে সোনালী নিউজকে তিনি বলেন, আমি যেহেতু ব্রাজিলের সমর্থক। আমি অবশ্যই চাই ব্রাজিল শিরোপা জিতুক। তবে ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে বলা মুশকিল। দুই দলই চমৎকার ফুটবল খেলেই ফাইনালে এসেছে। আর্জেন্টিনা দলে যেখানে মেসির মতো একজন তুখোড় খেলোয়াড় আছেন, যে কিনা একক নৈপুণ্যে যেকোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এদিকে ব্রাজিলেরও নেইমার আছে। সেক্ষেত্রে বাঘে-সিংহে লড়াই হবে বলে আমি মনে করি। তবে কে জিতবে কে হারবে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
যেহেতু আর্জেন্টিনা ২৮ বছর ধরে কোনো শিরোপা জিততে পারছে না, কিংবা একজন বিশ্বসেরা ফুটবলার হিসেবে মেসিও বৈশ্বিক কোনো শিরোপা জেতেননি, এজন্য ব্রাজিল সমর্থকরাও চাচ্ছে এবারের শিরোপাটা আর্জেন্টিনা জিতুক। এ বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তরে তিনি বলেন, জেতার ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনাকে চেষ্টা করতে হবে। আবার তারা জিততে পারছে না দেখে যে এবার জিতবে সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই বলে আমি মনে করি। অনেকে হয়তো মেসির জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন। কিন্তু এটা দিয়ে তো আর খেলা চলে না। যেমন ধরেন মোহামেডান গত ২০ বছর ট্রফি পায় না, লীগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না, সহানুভূতি দিয়ে তো আসলে কাজ হবে না। মোহামেডান টিমকে ভালো খেলতে হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই তাদেরকে খেলতে হবে। ঠিক তেমনি আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম।
সবশেষ কথা হয় বাংলাদেশের আরেক সাবেক ফুটবলার সত্যজিত দাস রুপুর সঙ্গে। যিনি দেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ। ঘরোয়া ফুটবল ও জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। তিনিও ব্রাজিলের সমর্থক। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে তিনি সোনালী নিউজকে বলেন, আমিও সমর্থক হিসেবে চাই ব্রাজিল শিরোপা জিতুক। তারপরেও বলছি, আমি মেসির অনেক ভক্ত। আমার কাছে মনে হচ্ছে সে তার ক্যারিয়ারের অনেকটা শেষ প্রান্তে। এমনও হতে পারে এটাই তার সবশেষ কোপা টুর্নামেন্ট। যেহেতু কোপা আমেরিকার শিরোপার একদম কাছাকাছিই আছেন, তাই এটা তার জন্য বড় সুযোগ। সেই হিসেবে তার জন্য একটা সফট কর্নার কাজ করছে। যেন সে অন্তত একটা শিরোপা জিততে পারে। আমি মনে করি, দুই দলই নান্দনিক ফুটবল উপহার দেবে। যে দলই জয় লাভ করুক, এতে ফুটবলেরই জয় হবে। আমি দেখেছি, অনেক ব্রাজিল সমর্থকদের মধ্যেও মেসি ভক্ত আছেন। সেক্ষেত্রে মেসির হাতে যদি শিরোপা ওঠে তারা যে খুব বেশি হতাশ হবে এমনটা ভাবা যাবে না।
সোনালীনিউজ/এআর/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :