বিশ্বকাপের বছরে বিবর্ণ বাংলাদেশের ব্যাটিং

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩, ০২:১৩ পিএম
বিশ্বকাপের বছরে বিবর্ণ বাংলাদেশের ব্যাটিং

ঢাকা : এক মাস পর অক্টোবরের ৭ তারিখে হিমাচলের ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২০২৩ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নামবে বাংলাদেশ। অথচ এখন পর্যন্ত ঠিক হয়নি বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল। তামিম ইকবালকে নিয়ে অনিশ্চয়তা তো আছেই, নতুন শঙ্কার নাম নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের গোড়াপত্তনে কে বা কারা এই প্রশ্নের হয়নি মীমাংসা।

এই বছর এখন পর্যন্ত ১৫ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, যার ভেতর ৫ ম্যাচে ২০০’র কম রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। যদিও এই বছরই নিজেদের সর্বোচ্চ ওয়ানডে সংগ্রহ গড়ার রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ, তবে প্রতিপক্ষ বিচারে ভালো দলের সঙ্গেই বাংলাদেশ বেশি ভুগছে ব্যাটিং ব্যর্থতায়।

আগে ব্যাটিং করে চলতি বছরে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ১৬৪, পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে এই রানেই অলআউট হয়েছিল সাকিব আল হাসানের দল। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে সবশেষ ম্যাচে, অর্থাৎ আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে ১৬৯ বছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান।

পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ১৯৩ বাংলাদেশের আগে ব্যাট করে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ইনিংস। এই ইনিংসে মাত্র ৩৮.৪ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৪ রানেও অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ, সিরিজের আরেক ম্যাচে অলআউট হয়েছিল ২০৯ রানে। এ বছর বাংলাদেশের ইনিংস প্রতি গড় রান ২৩০.৪।

গড়টা স্ফীত দেখাচ্ছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টা ম্যাচে ৩০০-এর বেশি রান করায়। যদি আসন্ন বিশ্বকাপের প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস গড় পরিমাপ করা হয়, তাহলে সেটা আরও কমে যাবে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের গড়ে ইনিংস প্রতি রান ২০৩। এই ব্যাটিং ব্যর্থতার শুরুটা গোড়া থেকেই।

২০২২ সালটা ব্যাট হাতে দারুণ কেটেছিল লিটন দাসের, সব সংস্করণ মিলিয়ে লিটন ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। চলতি বছর বাংলাদেশ খেলেছেই দুটো টেস্ট, তাতে খুব বেশি কিছু করার ছিল না লিটনের। কিন্তু ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত চলতি বছরে লিটন বড্ড বিবর্ণ। ১৩ ম্যাচে সমান ইনিংসে ৩১৭ রান, তিনটা হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি ৩ বার শূন্য রানে আউট হওয়ার লজ্জাও আছে। গড় ২৮.৮১ আর স্ট্রাইক রেট ৯২.৪১।

অবসর-নাটক, চোটের গল্প- এসব করে দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া তামিমেরও চলতি বছরে রান খুব একটা সুবিধের নয়। ১০ ম্যাচ খেলেছেন তামিম যার ৬টাই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, তবুও রান করেছেন মোটে ২৩৯। এক বছরে ১০টা ম্যাচে তিনি ছয় মেরেছেন মাত্র দুটো! গড় সাড়ে ২৬ আর স্ট্রাইক রেট প্রায় ৭৫।

বিশ্বকাপের দুই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরিসংখ্যানগুলো আরও কমবে। এই বছর ফের জাতীয় দলে ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়েছেন প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাঈম শেখ। এই বছর খেলা ৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৭৩ রান, সর্বোচ্চ ২৮ আর গড় সাড়ে ১৪।

মিডল অর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা রানের দেখা পেয়েছেন। কিন্তু ভুগিয়েছে লোয়ার মিডল অর্ডার ও টেল-এন্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৪ রানে পতন হয় শেষ ৪ উইকেটের, পরের ম্যাচে শেষ ৫ উইকেটের পতন ৩৪ রানে।

আর এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তো ২ রানে পড়েছিল শেষ ৪ উইকেট, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ রানে। ইনিংসের গোড়ায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানরা দ্রুত সাজঘরে ফিরে আসছেন, আর শেষদিকে ব্যাটসম্যানরা দ্রুত আউট হয়ে যাচ্ছেন। তাই কাক্সিক্ষত জায়গায় যাচ্ছে না সংগ্রহটা। এই বছর খেলা ১৫টা ম্যাচের ১০টায় আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ যার ৬টা ম্যাচেই বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর সাকিব বলেছেন, ‘আমাদের ব্যাটিং এই গরম তো এই ঠাণ্ডা।’ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিপক্ষ নরম হলেই গরম হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে আগে ব্যাট করে দুই ইনিংসেই ৩০০ ছাড়ানো সংগ্রহে রেকর্ড গড়েছেন। দেশের মাটিতে না পারলেও লাহোরের ব্যাটিং স্বর্গে আফগানদের পেয়ে তেড়ে মেরে ডাণ্ডা চালিয়েছেন।

কিন্তু প্রতিপক্ষে কুশলী স্পিনার বা মানসম্মত পেসার এলেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কুঁকড়ে গেছেন। চলতি বছরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা ৬ ওয়ানডেতে পরিসংখ্যানের পাতা ভরিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু আইরিশদের গোমর ফাঁস হয়ে গেছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। এখানে তারা হেরেছে ওমান, স্কটল্যান্ডের মতো দলের কাছেও।

চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে বেশ মজায় ছিলেন ব্যাটিং কোচ নিক পোথাস। কারণ দল যে ভালো করছিল! এশিয়া কাপে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর লাহোরে পরশু রাতের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ব্যাটসম্যানরা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছে। কন্ডিশন অনুযায়ী আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাওয়া একটা দলের মধ্যে এসব থাকবেই।’

কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, কারও দলে ফেরার প্রধান উপায় হচ্ছে রান। কিন্তু কেউ কেউ কেন রান না করেই দলে আসছেন, বদলি হিসেবে এসে কেন দলের সঙ্গে কেউ আছেন অথচ খেলছেন না এসব সিদ্ধান্ত কোথায় নেওয়া হচ্ছে এসব নিয়ে তিনি বোধহয় এখনো অন্ধকারে।

বিশ্বকাপের ১০ দলের অর্ধেকই যেখানে দল ঘোষণা করে দিয়েছে, পোথাস জানেন না বিশ্বকাপে কোন দুজন সবার আগে ব্যাট করবেন। অথচ এই আসরকে ঘিরেই না কত আশা করে আছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা!

এমটিআই

Link copied!