সিরিজ জয়ের লক্ষ্য বাংলাদেশের

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৩, ০৯:৫৪ এএম
সিরিজ জয়ের লক্ষ্য বাংলাদেশের

ঢাকা : ‘আত্মতুষ্টি’, ‘প্রত্যাশার চাপ’, ‘পরিপূর্ণ ম্যাচ’- এই ধরনের নানা শব্দ শোনা গেল চান্দিকা হাথুরুসিংহের সংবাদ সম্মেলনে। সিরিজ শুরুর আগের বাস্তবতার সঙ্গে এখনকার কী অদ্ভুত পার্থক্য! তখন প্রত্যাশার জায়গা তেমন কিছু ছিল না, হারানোর ভয় ছিল না। সিলেট টেস্টে অসাধারণ এক জয়ের পর বদলে গেছে সবকিছু। আত্মতুষ্টির ছোঁয়া এড়িয়ে শূন্য থেকে শুরু করার কথা এখন বলতে হচ্ছে বাংলাদেশ কোচকে।

যে সিরিজকে ঘিরে আশার পরিধি খুব বড় ছিল না, সেই সিরিজেই এখন স্মরণীয় অর্জনের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। সিলেট টেস্টে দারুণ জয়ে এখন সিরিজে এগিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তরা। মিরপুরে জিতলে বা হার এড়াতে পারলেই ধরা দেবে সিরিজ জয়।

টেস্ট ক্রিকেটে ২৩ বছরের পথচলায় জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দলের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একটি করে টেস্ট জিতলেও আরেকটি ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সিরিজ ড্র হওয়াই ছিল প্রাপ্তি। নতুন কিছু অর্জনের সুযোগ তাই এবার এসেছে।

এই সম্ভাবনা, এই যে প্রত্যাশা, এটির সঙ্গে বয়ে আসছে চাপও। সিলেট টেস্টে যতটা নির্ভার থেকে মাঠে নামতে পেরেছিলেন ক্রিকেটাররা, মিরপুর টেস্টের প্রেক্ষাপট সেখানে একটু আলাদা। জয়ের আশার যে উত্তাপ, সেই আঁচ কম বেশি লাগবে সবার গায়েই।

হাথুরুসিংহে অবশ্য ভরসা রাখছেন এই দলের তারুণ্য ও প্রাণচাঞ্চল্যে। সিলেটে ক্রিকেটাররা যেভাবে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে মেলে ধরেছিলেন নিজেদের, মিরপুরেও তাদেরকে একই মানসিকতায় ডানা মেলতে দেখতে চান কোচ।

বার্তাটি একই থাকবে। ব্যাপারটি হলো নিজেদের যা আছে, সেসবকে সঙ্গী করে সামনে এগিয়ে যাওয়া, নিজেদের শক্তির জায়গা বোঝা এবং প্রতিটি সেশনে লড়াইয়ের চেষ্টা করা। এই দলটা অভিজ্ঞতার দিক থেকে তরুণ, কিন্তু স্কিলের দিক থেকে তারা খুবই ভালো। যেভাবে তারা সাধারণত জাতীয় লিগে খেলে, তাদেরকে যখন সেরকম স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তারা ভালো খেলে।

আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেরও এটা ভালো বিজ্ঞাপন। (সিলেট টেস্টের) একাদশের সাতজনই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছে সম্প্রতি। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাঠে তাদের প্রাণশক্তি দেখেছেন আপনারা। আমি স্রেফ ফলাফলের কথা বলছি না। এটা বিভিন্নরকম হতে পারে। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন বড় জুটি গড়েছে, তখনও এই ছেলেরা হাল ছাড়েনি। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলি দেখি আমি। এই তরুণ দল তাদের সবটুকু ঢেলে দিয়েছে। ওদের জন্য বার্তা হলো, একই কাজের পুনরাবৃত্তি করা।

নিউ জিল্যান্ডের মতো পেশাদার ও লড়িয়ে একটি দলের বিপক্ষে অবশ্য প্রতি ম্যাচেই একইরকম দাপট দেখানো কঠিন। সিলেট টেস্টে ১৫০ রানে হারার পর তাদের হৃদয়ে চোট লাগার কথা তীব্রভাবেই। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া থাকবেন তারা।

তবে হাথুরুসিংহের বিশ্বাস, সিলেটের মতোই নিজেদের প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারলে ফলাফল পক্ষে আসবে এবারও।

আমাদের দল ও দলীয় সংস্কৃতির জন্য যা উপযুক্ত, সেসব কাজগুলো যদি আমরা ঠিকঠাক করে যেতে পারি, ফলাফল তো আপনাআপনি পাওয়া যাবে। আমরা অবশ্যই সব ম্যাচ জিততে পারব না। আমরা চেষ্টা করব। তবে সিলেটে যেরকম পরিপূর্ণ ম্যাচ আমরা খেলেছি, ভালো একটি দলের বিপক্ষে তা বারবার করা খুব কঠিন।

আমাদেরকে তাই আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। সিলেটের ম্যাচটি আমরা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ঠিক একইভাবে এই ম্যাচটিও আমরা শুরু করতে চাই। সেই একই তীব্রতা, একই উদ্বেগ, একই আশা ও লক্ষ্য নিয়ে শুরু করতে চাই। প্রতিটি দিন আমাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

সেই লড়াই হবে যে উইকেটে, সেই ২২ গজের সম্ভাব্য চরিত্র নিয়ে অবশ্য সংশয়ে আছেন হাথুরুসিংহে। মিরপুরের উইকেটের চেহারা দেখে যা ধারণা করা হয়, ম্যাচ শুরুর পর তা উল্টে যায় অনেক সময়ই। এবারও বাংলাদেশ কোচ নিশ্চিত করে বলতে পাচ্ছেন না উইকেট কতটা কেমন হবে। দলীয় সমন্বয় নিয়েও তাই বেশি কিছু বলেননি তিনি। তবে বলেছেন, খুব বেশি পরিবর্তন হবে না।

পরিবর্তনের জায়গা অবশ্য এমনিতেও খুব একটা নেই। সিলেটে এক পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে সাজানো হয়েছিল বাংলাদেশ একাদশ। তারা সবাই ভালো পারফর্ম করেছেন। ব্যাটসম্যান একজন কমিয়ে বাড়তি আরেকজন বোলার খেলানোর সুযোগ অবশ্য আছে। তবে বাংলাদেশ দলের যা বরাবরের বাস্তবতা, তাতে বাড়তি বোলার খেলানোর সম্ভাবনা কমই। বিশেষ করে, ড্র করলেও যেখানে সিরিজ জয়ের সুযোগ আছে।

মিরপুরে অবশ্য গত ১২ টেস্টই জয়-পরাজয় দেখেছে। সবশেষ ড্র ছিল ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট, যেটি মূলত ড্র হয়েছিল বৃষ্টির কারণে। ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে ড্র সবশেষ হয়েছে সেই ২০১৩ সালে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই। আবহাওয়া বাগড়া না দিলে এবারও ড্রয়ের বাস্তব সম্ভাবনা কমই।

উইকেট নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি বলেছেন, স্পিন-বান্ধব উইকেটই হতে যাচ্ছে এটি। সিলেট টেস্টে মিচেল স্যান্টনার ও রাচিন রবীন্দ্র একাদশের বাইরে ছিলেন। বাঁহাতি এই দুই স্পিনিং অলরাউন্ডারের একজনকে অন্তত এবার একাদশে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্র তাদের দলীয় সমন্বয়ও এবার ভিন্ন হবে।

বাংলাদেশের জন্য অবশ্য প্রতিপক্ষের চেয়েও বড় শঙ্কা হতে পারে নিজেরাই। প্রথম টেস্টের জয় এতটাই অভাবনীয় এক প্রাপ্তি যে, সেই জোয়ারে নিজেদের হারিয়ে ফেলাটা অস্বাভাবিক নয়। অতীতেও তা দেখা গেছে। গত বছরই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের সামনে স্রেফ বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও প্রথম টেস্টে স্মরণীয় এক জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে হারতে হয়েছে বাজেভাবে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজে কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহেই। তবে এবারের দলের মধ্যে অন্যরকম তেজ ও তাড়না দেখতে পাচ্ছেন বলেই দাবি কোচের।

আমি তো দলে কোনো আত্মতুষ্টি দেখছি না। কারও মাঝে এটা চোখে পড়লে তার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলব। এমনিতে গতকাল ড্রেসিং রুমে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে আমাদের। শক্ত মানসিকতার ও অভিজ্ঞ নেতা আছে আমাদের… মুশি ও মুমিনুলরা যেভাবে বলেছে… কী বলব, খুব ‘ইমোশনালি’ বলেছে…। তবে ড্রেসিং রুমে অতি উৎসাহী কিছু আমার চোখে পড়েনি।

এই ইমোশনের মানে ‘আবেগ’ হতে পারে, ‘তেতে থাকা’ হতে পারে, ‘প্রেরণা’ হতে পারে কিংবা হতে পারে এই ধরনের অনেক কিছুই। তবে যেটা হোক, মূল চ্যালেঞ্জ তো মাঠে করে দেখানোর। নিউ জিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে কাজটা কঠিন। খুব কঠিন।

তবে টেস্ট ক্রিকেট ব্যাপারটাই তো কঠিন। এখানে বড় কিছু অর্জনের তৃপ্তিও তাই বেশি।

এমটিআই

Link copied!