ঢাকা : মারিও জাগালোকে হারানোর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দিল আরেকটি দুঃসংবাদ। নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন আরেকজন ফুটবল কিংবদন্তি- ফ্রানৎস বেকেনবাউয়ার।
জার্মানির হয়ে খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় দুটি বিশ্বকাপ জেতা ‘ডের কাইজার’ এর মৃত্যুর কথা শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই ডিফেন্ডারের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
১৯৭৪ সালে সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বেকেনবাউয়ার। পরে কোচ হিসেবে ১৯৯০ সালে জেতেন শিরোপা। অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা প্রথম ফুটবল ব্যক্তিত্ব তিনিই।
ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবে। পরে দারুণ সাফল্য পান ডিফেন্ডার হিসেবে। ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার দারুণ চৌকষ ও কার্যকর ফুটবলার। পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন নিখুঁত। অনেকেই মনে করেন, আধুনিক ‘অ্যাটাকিং সুইপার’ পজিশন ফুটবলে এসেছিল তার হাত ধরেই। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হয়েও নিপুণ পাস আর লম্বা দৌড়ে ভূমিকা রাখতেন আক্রমণে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির কিছু দিন পর ১৯৪৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মিউনিখে জন্ম বেকেনবাউয়ারের। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে জার্মানির ফুটবলে ছিল তারই রাজত্ব। অনেকের চোখে তিনিই দেশটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়।
১৯৫৮ সালে বায়ার্নে যোগ দেন বেকেনবাউয়ার, পাঁচ বছর পর মূল দলে হয় অভিষেক। ১৯৭১ সালে পান নেতৃত্ব। সেই সময়ে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দলের একটি হয়ে ওঠে বায়ার্ন। টানা তিন মৌসুমে ১৯৭৩-৭৪, ১৯৭৪-৭৫ ও ১৯৭৫-৭৬ জেতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ক্লাবস কাপ শিরোপা। ঘরে তোলে চারটি ঘরোয়া লিগ শিরোপাও। জার্মানির সফলতম ক্লাবটির হয়ে তিনি খেলেন ৫৮২ ম্যাচ।
১৯৭১ সালে পশ্চিম জার্মানি জাতীয় দলের নেতৃত্বও পান বেকেনবাউয়ার। পরের বছর জেতেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৭৪ সালে ধরা দেয় আরও বড় অর্জন, বিশ্বকাপ। দেশের হয়ে সব মিলিয়ে খেলেন ১০৩ ম্যাচ।
১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে ব্যালন দ’র জেতেন বেকেনবাউয়ার। ১৯৭৪ ও পরের বছর হন রানার্সআপ। এর আগে ১৯৬৬ সালে হন তৃতীয়; সেবার বিশ্বকাপে আলো ছড়ান তিনি। ২০ বছর বয়সে চার গোল করে জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরে যাওয়া ফাইনালে মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে ছিলেন ববি চার্লটনের পাহারার দায়িত্বে।
দুই দফায় খেলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে। প্রথমবার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত, পরেরবার ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে। মাঝে হামবুর্গের হয়ে খেলেন ১৯৮০-৮২ মৌসুমে।
১৯৮৪ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনে যোগ দেন কোচিংয়ে। শুরুটা করেন পশ্চিম জার্মানি জাতীয় দল দিয়ে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। দিয়েগো মারাদোনার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে হন রানার্সআপ। চার বছর পর একই দলকে হারিয়ে জেতেন শিরোপা।
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জাগালোর পর খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম জন তিনি। পরে এই তালিকায় নাম লেখান ফ্রান্সের দিদিয়ে দেশম।
বিশ্বকাপের পর ১৯৯০-৯১ মৌসুমে ফ্রান্সের দল অলিম্পিক মার্সেইয়ের কোচ ছিলেন বেকেনবাউয়ার। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম ও ১৯৯৬ সালে দুই দফায় ছিলেন বায়ার্নের কোচ। ক্লাবটির হয়েও তিনি জার্মানির শীর্ষ লিগের শিরোপা জেতেন খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায়।
১৯৯৮ সালে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ২০০৬ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের সফল আয়োজনেও ছিল তার অবদান। বায়ার্ন ও ফিফার হয়েও বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করেন তিনি।
সাফল্যের পাশাপাশি এসেছে বিতর্কও। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে সহযোগিতা না করায় ২০১৬ সালে ফিফার এথিক্স কমিটি জরিমানা করে তাকে। এরপর থেকে একরকম আড়ালেই ছিলেন তিনি। এবার চলে গেলেন চিরদিনের জন্য, রেখে গেলেন কীর্তিময় এক জীবন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :