ঢাকা: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকতে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে জিততেই হবে। কোনোরকমে জয়ই না, জিততে হবে বড় ব্যবধানেও। এমন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। তাতে মোটামুটি সফলই যুবা টাইগাররা। ৫ উইকেট ও ১৪৮ বল হাতে রেখে পাওয়া জয়ে রানরেটও বাড়লো একটু। তাতে টিকে রইল সেমিফাইনালের আশা।
নেপালের দেওয়া ১৭০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ওপেনিংয়েই ৬৭ রান তুলে শুভসূচনা করে বাংলাদেশ। আশিকুর রহমান শিবলি একটু রক্ষণাত্মক থাকলেও জিশান আলম ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। ৬৭ রানে ফেরেন আশিকুর। বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ৯২ রানের মাথায় ফেরেন ঝড় তোলো জিশান। তার আগে খেলেন ৪৩ বলে ৫৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
৩ উইকেট পড়লেও দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিতে থাকেন আরিফুল ইসলাম ও আহরার আমিন। ১৩৭ রানের মাথায় আহরার ফিরলে ভাঙে ৪৫ রানের জুটি। দলের জয় নিশ্চিত হওয়ার আগে আরও ১ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন আরিফুল ইসলাম। ৩৮ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ১৬৯ রানে অলআউট হয় নেপাল। টস জিতে এদিন প্রথমে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় তারা। ২৯ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট তুলে নিয়ে শুরুটা দুর্দান্তই করে বাংলাদেশ। উইকেট তিনটি নেন মারুফ মৃধা, ইকবাল হোসাইন ইমন ও রোহানাত দৌলা বর্ষণ। তবে চতুর্থ উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে নেপাল। অধিনায়ক দেব খানাল ও বিশাল বিক্রম কেসি মিলে গড়েন ৬২ রানের জুটি। দলীয় ৯১ রানের মাথায় জিশান আলম দেবকে (৩৫) ফেরালে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে।
জুটি ভাঙার পর কড়া আক্রমণ শানাতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ১৪২ রানের মধ্যেই ৯ উইকেট হারিয়ে বসে দলটি। এরই মাঝে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন বিশাল। তবে শেষ উইকেটে বাংলাদেশকে বেশ ভোগায় নেপাল। ৯ উইকেটে ১৪২ থেকে দলের রান নিয়ে যায় ১৬৯-এ। ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন সুভাস ভান্ডারি।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সবচেয়ে সফল রোহানাত দৌলা বর্ষণ। ১৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। ৩৪ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন তিনি। একটি করে উইকেট নেন জিশান আলম, মারুফ মৃধা ও ইকবাল হোসেন ইমন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের এবারের সমীকরণটা বেশ জটিল। এবারের আসরে মোট ১৬ দল অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে সুপার সিক্সে ১২ দলের জায়গা হয়েছে । দুটি গ্রুপ করা হয়েছে ৬টি দল নিয়ে। গ্রুপ–ওয়ানে আছে বাংলাদেশ। কিন্তু গ্রুপে মোট ৬টি দল থাকলেও প্রতিটি দলের ম্যাচ ২টি। পাকিস্তান ও নেপালকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ।
‘এ’ গ্রুপে ভারতের কাছে হারলেও আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয় বাংলাদেশ। আর গ্রুপে ভারত প্রথম এবং আয়ারল্যান্ড তৃতীয় হয়। সুপার সিক্সে ‘এ’ গ্রুপের তিন দলের সঙ্গী হয়েছে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে আসা পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও নেপাল। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় হয়ে আসা বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে অপর গ্রুপের প্রথম ও তৃতীয় দলকে।
ছয় দল দুটি করে ম্যাচ খেলবে। পরে শীর্ষ দুটি দল সেমিফাইনালে উঠবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম পর্বের পয়েন্টের বিশেষ ভূমিকা আছে। একই গ্রুপ থেকে উঠে আসা দলের বিপক্ষে পাওয়া পয়েন্ট ও নেট রান রেট সুপার সিক্সে বহাল থাকছে। অর্থ্যাৎ, ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ দল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জেতায় দুটি পয়েন্ট থাকছে সুপার সিক্সে। আর ভারত বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড উভয় দলকে হারানোয় ৪ পয়েন্ট নিয়ে এসেছে সুপার সিক্সে। একই গ্রুপে থাকা পাকিস্তান গ্রুপপর্বে নিউজিল্যান্ড ও নেপালকে হারানোয় ৪ পয়েন্ট নিয়ে আসে সুপার সিক্স খেলতে। এই পর্বে পাকিস্তান আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ও ভারত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়ায় তাদের পয়েন্ট এখন ৬। রানরেটে যদিও প্রথমে ভারত।
নেপালের বিপক্ষে এই ম্যাচে জয়ের পর বাংলাদেশের পয়েন্ট ৪। বড় জয়ে রান রেটও একটু বাড়িয়ে নিয়েছে যুবারা। তাদের সামনে আছে আর পাকিস্তানের ম্যাচ। সেমিফাইনালে উঠতে সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে অবশ্যই হারাতে হবে। আজকে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের মতো সেই ম্যাচেও তাকিয়ে থাকতে হবে নেট রানরেটের দিকে। কারণ, বাংলাদেশের রানরেট এখনো মাইনাসে আর পাকিস্তানের প্লাসে। তাই পাকিস্তানকেও ভালো ব্যবধানে হারাতে হবে। ভারতের বিপক্ষে হেরে এখন ২ পয়েন্ট নিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড এরই মধ্যে টুর্নামেন্ট থেকে ছিঁটকে পড়েছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :