ঢাকা : সংবাদ সম্মেলনের তখন ১৫ মিনিট পেরিয়ে গেছে। অনেক কথার মালা গাঁথা হয়েছে ততক্ষণে। এবার প্রশ্ন হলো, আপনার নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে… আপনার কি মনে হয়, আর কিছুদিন থেকে যাবেন…? প্রশ্ন শুনে চেয়ারে হেলান দিয়ে হাসছিলেন রোহিত শার্মা। একটু সময় নিলেন। হাসি আরও চওড়া হলো। একটু দম নিয়ে বললেন, না… না, আমারও শেষ ম্যাচ এটি…।
‘আমারও’ বলার কারণ, তার আগেই ঘোষণাটি দিয়ে ফেলেছেন ভিরাট কোহলি। ফাইনালের ম্যাচ-সেরা হওয়ার পর পুরস্কার বিতরণী আয়োজনেই ভারতের ব্যাটিং গ্রেট জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের জার্সিতে এটিই ছিল তার শেষ টি-টোয়েন্টি। পরে একই পথের পথিক হলেন রোহিতও। সংবাদ সম্মেলনে সেই ঘোষণা দিয়ে রাখলেন ভারতীয় অধিনায়ক।
সত্যি বলতে… এই সংস্করণ খেলার শুরু থেকেই আমি উপভোগ করেছি। এই সংস্করণকে বিদায় বলে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ভারতের হয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল এই সংস্করণ দিয়েই। এটিই আমার চাওয়া ছিল। চেয়েছিলাম বিশ্বকাপ জিতে এরপর… (ইশারায় বিদায় বলার ভঙ্গি)…।
এটুকু বলে আবারও হাসলেন রোহিত। সংবাদকর্মীরা তাকে অভিবাদন জানালেন করতালিতে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য তবু আরেকবার প্রশ্ন করা হলো, শুধু টি-টোয়েন্টি থেকেই কি না এই বিদায়। রোহিতও সেটি পরিষ্কার করলেন। টেস্ট ও ওয়ানডে চালিয়ে যাবেন ৩৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
বিদায় বেলায় রোহিত অবশ্য একটু গোলমাল পাকিয়েছেন স্মৃতির ভেলায় ভাসতে গিয়ে। টি-টোয়েন্টি নয়, ভারতের হয়ে তার শুরুটা ছিল ওয়ানডে দিয়ে। ২০০৭ সালের জুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক। মাস তিনেক পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই সংস্করণে। প্রথম অভিযানে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বাদ পান। শেষটাও করলেন সেই একই উচ্চতায়।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে সফল দুই ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে এই দুই মহীরূহ। ১৫৯ ম্যাচ খেলে ৩২.০৫ গড় ও ১৪০.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ৪ হাজার ২৩১ রান রোহিতের। তার ৫ সেঞ্চুরিও বিশ্বরেকর্ড এই সংস্করণে। ফিফটি করেছেন ৩২টি।
দেড়শ ম্যাচ খেলা একমাত্র ক্রিকেটারও তিনিই। ছক্কা মেরেছেন রেকর্ড ২০৫টি। এখানে তার ধারেকাছে নেই কেউ।
১২৫ ম্যাচে ৪৮.৬৯ গড় ও ১৩৭.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৪ হাজার ১৮৮ রান কোহলির। তার সেঞ্চুরি একটি, ফিফটি রেকর্ড ৩৮টি।
শিগগিরই হয়তো এই দুজনকে টপকে রানের রেকর্ডটি আবার নিজের করে নেবেন বাবর আজম (৪ হাজার ১৪৫)। তবে বিদায় বেলায় অন্তত দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যানই ওপরে।
রোহিত ও কোহলির এই বিদায় খুব একটা অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর নয়। বিশ্বকাপ না জিতলেও হয়তো তারা বিদায় বলতেনই। সেক্ষেত্রে ঘোষণাটি এরকম তাৎক্ষনিক নয়, পরে আসতে পারত। দুই বছর পর আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের থাকার সম্ভাবনা এমনিতেই ছিল না খুব একটা। বিশ্বকাপ জয় তাদের বিদায়টা মধুর করে তুলল ও পূর্ণতায় ভরিয়ে দিল।
২০২২ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হারার পর এমনিতেও দীর্ঘ সময় এই সংস্করণ থেকে দূরে ছিলেন দুজনই। বিশ্বকাপ শিরোপায় চোখ রেখেই এই বছরের জানুয়ারিতে আবার ফেরেন দুজন। অভিযান সম্পূর্ণ করেই চূড়ান্ত বিদায় নিলেন তারা। রোহিত আবারও বললেন, কতটা তীব্রভাবে এই শিরোপা তিনি চাইছিলেন।
এটা (ট্রফি) প্রবলভাবে চাইছিলাম আমি। (অনুভূতি) ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার জন্য খুবই আবেগময় মুহূর্ত। আমার জীবনে এই ট্রফিটির জন্যই খুব মরিয়া ছিলাম। খুবই খুশি যে শেষ পর্যন্ত আমরা বৈতরণী পার হতে পারলাম।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :