ঢাকা : প্রকৃতির বাধায় খেলায় ছেদ পড়ল, বেশ কিছুক্ষণ বন্ধও থাকল। তবে জার্মানির পারফরম্যান্সে কোনো ছন্দপতন হলো না। আক্রমণাত্মক ফুটবলে ম্যাচের অধিকাংশ সময় ডেনমার্কের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল ইউলিয়ান নাগেলসমানের দল।
ডর্টমুন্ডে শনিবার (২৯ জুন) রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে স্বাগতিক দল। কাই হাভার্টজ দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জামাল মুসিয়ালা।
৫৫ শতাংশের বেশি সময় পজেশন রেখে গোলের জন্য ১৫টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখে জার্মানি। ডেনিশদের ১১ শটের দুইটি ছিল লক্ষ্যে। তাদের আরও কিছু আক্রমণ জার্মান রক্ষণে ভেস্তে যায়। আর ঘর সামলানোয় অসাধারণ অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হন জার্মান ডিফেন্ডার আন্টোনিও রুডিগার; দুই দিন আগে ঊরুর সমস্যায় যার খেলা নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা।
ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হতে পারত জার্মানির। চতুর্থ মিনিটেই হেডে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠান নিকো শ্লটারবেক। কিন্তু মুহূর্ত আগে ডেনমার্কের আন্দ্রেস ওলসের ফাউলের শিকার হওয়ায় মেলেনি গোল।
পরের কয়েক মিনিটে ডেনিশদের ওপর আক্রমণের ঝড় বইয়ে যায়। ছয় থেকে দশ মিনিটের মধ্যে পরিষ্কার তিনটি সুযোগ তৈরি করে জার্মানরা। জসুয়া কিমিখের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বুলেট গতির শট কোনোমতে একহাত দিয়ে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান গোলরক্ষক।
ওই কর্নার থেকেও গোল পেতে পারত জার্মানি। শ্লটারবেকের আরেকটি হেডও কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন কাসপের স্মাইকেল। দুই মিনিট পর হাভার্টজের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফেরান গোলরক্ষক।
প্রথম ১৫ মিনিটে জার্মানদের একচেটিয়া আধিপত্যের পর একটু একটু করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ডেনমার্ক। পরিষ্কার কোনো সুযোগ যদিও তারা তৈরি করতে পারছিল না, কিন্তু লড়াই জমে ওঠার আভাস মেলে।
ম্যাচের ঘড়িতে যখন ৩৬ মিনিটের খেলা চলে, তখন প্রকৃতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রবল বৃষ্টি আর বজ্রপাতে খেলা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন রেফারি। দুই দলের কোচ-খেলোয়াড় এবং ম্যাচ অফিসিয়ালরা মাঠ ছেড়ে যান। প্রায় ২৫ মিনিটের বিরতির পর, প্রকৃতি শান্ত হলে ফের মাঠে গড়ায় ফুটবল।
বিরতিতে যেন শুরুর উদ্যম ফিরে পায় জার্মানি। মাঠে নেমেই পরপর দুটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে তারা। তবে এ যাত্রায়ও কাটেনি হতাশা; হাভার্টজের হেড গোলরক্ষক ফেরানোর পর শ্লটারবেকের প্রচেষ্টা একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
বিরতির আগে নিজেদের সেরা সুযোগটি পায় ডেনমার্ক। কিন্তু বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও একরাশ হতাশাই উপহার দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড গাসমুস হয়লুন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ডেনমার্কের জন্য কাটে আরও খারাপ, বিশেষ করে ইওয়াখিম আন্দেরসনের। ৪৮তম মিনিটে জটলার মধ্যে থেকে জালে বল পাঠিয়েও গোল পাননি তিনি। তিন মিনিট পর উল্টো তাদের বক্সে ডিফেন্ডার আন্দেরসনের হাতে বল লাগলে পেনাল্টি পায় জার্মানি।
দারুণ স্পট কিকে ডেডলক ভাঙেন হাভার্টজ। নিচু শটে বল পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়।
৫৯তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি হাভার্টজ। মাঝমাঠে দারুণ এক ছোঁয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এক ছুটে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, সামনে একমাত্র বাধা ছিলেন গোলরক্ষক; কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার।
সাত মিনিট পর আবারও ভীতি ছড়ান হয়লুন। কিন্তু হতাশা পেছনে ফেলতে পারেননি তিনি, এবার শট নেন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার বরাবর।
এরপরই দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান বাড়ান মুসিয়ালা, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় জার্মানি। নিজেদের ডি-বক্সের সামনে থেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে লম্বা থ্রু বল বাড়ান শ্লটারবেক। সবাইকে পেছনে ফেলে, বলের পেছনে ছুটে প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে বল ঠিকানায় পাঠান বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড। আসরে ২১ বছর বয়সী ফুটবলারের গোল হলো তিনটি।
বাকি সময়ে বেশ কিছু ভালো আক্রমণ শাণায় ডেনমার্ক, ভীতিও ছড়ায় তারা; কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু আর করতে পারেনি গতবারের সেমি-ফাইনালিস্টরা।
সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জার্মানি খেলবে স্পেন-জর্জিয়া ম্যাচের বিজয়ীর বিপক্ষে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :