ঢাকা : ম্যাচের শুরুতেই নিজেদের জাল থেকে বল কুড়িয়ে আনার ধাক্কা দ্রুত সামলে নিল ইংল্যান্ড। পাল্টা জবাব দেওয়ার পর গতিময় ফুটবল আর ধারাল আক্রমণে বারবার ভীতি ছড়াল দলটি। সেই তারাই আবার দ্বিতীয়ার্ধে ছন্দ হারিয়ে ধুকতে থাকল।
দলকে পথে ফেরাতে দারুণ দুটি পরিবর্তন আনলেন গ্যারেথ সাউথগেট এবং কাজে লেগে গেল সেটাই। শেষ সময়ে দারুণ এক গোলে ব্যবধান গড়ে দিলেন ওলি ওয়াটকিন্স। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল গতবারের রানার্সআপরা।
ডর্টমুন্ডে বুধবার (১০ জুলাই) রাতে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে ইংল্যান্ড। শাভি সিমন্সের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানেন হ্যারি কেইন। আর শেষ দিকে ইংলিশদের উচ্ছ্বাসে ভাসান ওয়াটকিন্স।
শিরোপা লড়াইয়ে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ স্পেন। আগের দিন প্রথম সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারায় লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। বার্লিনে আগামী রোববার হবে ফাইনাল।
তরুণ মিডফিল্ডার সিমন্সের অসাধারণ নৈপুণ্যে শুরুটা দুর্দান্ত হয় ডাচদের। ডেকলান রাইসের থেকে বল কেড়ে নিয়ে, কিছুটা এগিয়ে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন তিনি। বুলেট গতির ওই শট ঠেকানোর কোনো সুযোগই পাননি গোলরক্ষক।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২১ বছর বয়সী সিমন্সের এটা দ্বিতীয় গোল।
পাঁচ মিনিট পর দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেন কেইন। ঝাঁপিয়ে সেটা ঠেকিয়ে দেন বার্ট ভেরব্রুখেন। দুই মিনিটের মাথায় বক্সে বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি।
তবে, তার এই প্রচেষ্টা ঘিরেই সমতায় ফেরার পথ খুলে যায় ইংল্যান্ডের। কেইন শট নিতে যাচ্ছে দেখে পা বাড়িয়ে দেন ডেনজেল ডামফ্রিস, শট নেওয়ার পরমুহূর্তে তার পায়ে লেগে প্রচণ্ড ব্যথা পান ইংলিশ অধিনায়ক। ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ডাচ ডিফেন্ডারকে দেখান হলুদ কার্ডও।
পেনাল্টির সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে কেইন কোনো ভুল করেননি সুযোগ কাজে লাগাতে। নিখুঁত স্পট কিকে সমতা টানেন তিনি। চলতি আসরে এই নিয়ে তিনটি গোল করলেন কেইন।
এদিন ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্সে শুরু থেকেই পুরনো ছন্দের ঝলক দেখা যায়। গোল পেয়ে তারা যেন আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ২৩তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো দলটি; বক্সে প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে গোলমুখে এগিয়ে গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে শট নেন ফিল ফোডেন, একবারে গোললাইন থেকে আটকান ডামফ্রিস।
পরপর দুই মিনিটে দুই দলই ভাগ্যের ফেরে গোলবঞ্চিত হয়। ডামফ্রিসের হেড ক্রসবারে বাধা পাওয়ার পর, ফোডেনের দূর থেকে নেওয়া শট পোস্ট কাঁপায়।
প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় ফোডেন ৩৯তম মিনিটে ফের বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। এবার তার নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ভেরব্রুখেন।
বিরতির পর খেলার গতি কমে আসে অনেকটাই। প্রথমার্ধে গোলের জন্য মাত্র তিন শটের একটি লক্ষ্যে রাখতে পারা নেদারল্যান্ডস ৬৪তম মিনিটে দ্বিতীয়বার গোলরক্ষকের পরীক্ষা নিতে পারে। এবার অবশ্য পরাস্ত হননি জর্ডান পিকফোর্ড; ভার্জিল ফন ডাইকের হাফ ভলি ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
আর প্রথম ৪৫ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে সাতটি শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখা ইংল্যান্ড দ্বিতীয়ার্ধে তেমন কোনো আক্রমণ শাণাতেই পারছিল না। অবশ্য ৭৯তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে জালে বল পাঠান বুকায়ো সাকা, কিন্তু অফসাইডের বাঁশি বাজে।
এর পরপরই খেলায় গতি ফেরাতে একসঙ্গে কেইন ও ফোডেনকে তুলে নেন ইংল্যান্ড কোচ, বদলি নামেন দুই ফরোয়ার্ড পালমার ও ওয়াটকিন্স।
এই দুই জনের নৈপুণ্যেই নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত গোলটি পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। ডান দিক থেকে পালমারের পাস বক্সে ধরে, শরীর ঘুরিয়ে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে কোনাকুনি শট নেন ওয়াটকিন্স। গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে, ১০ মিনিটের একটু বেশি সময় খেলেই ম্যাচ সেরা হয়ে যান ওয়াটকিন্স।
দুই মিনিট যোগ করা সময় শেষে, ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে সাউথগেটের দল। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে কোনো মেজর টুর্নামেন্টের (বিশ্বকাপ ও ইউরো) ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :