বিসিবিতেও পরিবর্তন চান নাজমুল আবেদীন

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
বিসিবিতেও পরিবর্তন চান নাজমুল আবেদীন

ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যখন সব জায়গায় পরিবর্তনের দাবি উঠেছে তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিয়েও সরব অনেকে। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থায়ও যে সংস্কারের দরকার সেই কথা মনে করিয়ে দিলেন বরেণ্য কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন।

বিগত কয়েক দিনের অনিশ্চয়তা ও অস্থির অবস্থা পেরিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক রূপে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে সেটি কেবল মাঠের ক্রিকেটে। বিসিবির সাংগঠনিক কাজে বিরাজ করছে শূন্যতা। সরকার পতনের পর বিসিবিতে দেখা যায়নি কোনো পরিচালককে।

অভিভাবকশূন্য বিসিবি প্রাঙ্গনে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় বহিরাগত মানুষের আনাগোনা। মঙ্গলবার ‘ক্রিকেট সংগঠকবৃন্দ’ ব্যানারে প্রাঙ্গনে হয় মিছিল, সমাবেশ। পরে অন্তত দুই দিন বোর্ডের সাবেক প্রধান আরাফাত রহমান, বিএনপির নেতা তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিয়ে মিছিলও দেখা যায়।

সব কিছু মিলিয়ে বিসিবির সাংগঠনিক পর্যায়ের অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবি বা অন্য কোনো ফেডারেশন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এই অবস্থার মাঝেই বোর্ডে সংস্কার জরুরি বলে মত জানিয়েছেন নাজমুল আবেদীন।

বিসিবির হাইপারফরম্যান্স বিভাগ, ক্রিকেট একাডেমি, বয়সভিত্তিক দল এবং নারী বিভাগে কাজ করেছেন নাজমুল আবেদীন। সবশেষ বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটাগরি-৩ থেকে লড়েছিলেন তিনি। বোর্ডের অনেক কিছুই তাই কাছ থেকে দেখা জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ক্রিকেট কোচের।

সেই আলোকে শনিবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সংস্কারের জোর দাবি তোলেন তিনি।

'আমি যেহেতু খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় না, বিসিবি খুব সুশৃঙ্খল একটা সংগঠন। বাইরে থেকে অনেকেই হয়তো চাকচিক্য দেখে মনে করে, বিসিবি দারুণ একটা সংগঠন। এদের যে সুযোগ ছিল, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার মোটেও হয়নি। সেটা অনেকগুলো কারণেই হয়নি। অনেকের ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণেই হয়নি। তাই আমার মনে হয় এখানে পরিবর্তন আনা দরকার।'

'এখানে কাজের যে ধরন, ভেতরে ভেতরে বিশৃঙ্খল কাজ হয়। সেটা পরিবর্তন আনা দরকার। এগুলো সোজা করতে পারলে আমার মনে হয় অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। একটা প্রক্রিয়া যদি ঠিকমতো চলে, ক্রিকেটে ভালো করতে না পারার কোনো কারণ নেই। আমাদের তো অবস্থা এমন হওয়ার কথা না যে নেপালের সঙ্গে জিতব আর খুশি হয়ে যাব। কিন্ত এমন হয়েছে। তাই আমার মনে হয় এখানে সুযোগ আছে৷ ভালো কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।'

বিসিবিতে পরিবর্তন ঠিক কোথায় প্রয়োজন সেই রূপরেখাও নিজের মনে সাজিয়ে রেখেছেন নাজমুল আবেদীন। এখনই সেটি খোলাসা না করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডাকা হলে আলোচনা করার কথা বলেছেন তিনি।

তবে কিছু ধারণা দিয়েছেন দেশের তারকা ক্রিকেটারদের অনেকেরই মেন্টর এই কোচ। তার মতে, বোর্ডের নেতৃত্বস্থানীয় জায়গা থেকেই পরিবর্তন আসা জরুরি।

আমার মনে হয়, দায়টা সবচেয়ে বেশি লিডারশিপের। তাই লিডারশিপে পরিবর্তন আনা খুব দরকার। লিডারশিপ ঠিক থাকলে বাকি জিনিসগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক হয়ে যায়। এখন তো আইসিসির অনেক ব্যাপার আছে। সংস্কারের কথা যদি আমরা বলি, (বোর্ডে) অনেক জায়গায় সমস্যা আছে।

দিন শেষে আমরা অবশ্যই এমন একটা বোর্ড চাইব যেখানে ভালো লিডার থাকবে। যার বড় স্বপ্ন থাকবে। যে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক ওপরে নিয়ে যেতে চাইবে। সেজন্য যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার যে ব্যাপারগুলো থাকা দরকার, সেগুলো থাকবে। সেরকম অনেক মানুষ কিন্তু আমাদের দেশে আছে। কিন্তু অনেকদিন ধরে তারা কোনো সুযোগ পায়নি কাজ করার।

বোর্ডপ্রধান ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তা এবং পরিচালকদেরও দায় দেখেন নাজমুল আবেদীন। তাই তাদেরকে পদত্যাগের পরামর্শও দিয়ে রাখলেন তিনি।

'আমরা এরই মধ্যে দেখেছি বোর্ড কিন্তু খালি। এখন কিন্তু অনেক কার্যক্রম চলছে। একটা দল অস্ট্রেলিয়ায়। পাকিস্তান গেল ‘এ’ দল, জাতীয় দল যাবে। সামনে মেয়েদের বিশ্বকাপ আছে। কিন্তু তাদের কিন্তু আমরা সেভাবে দেখছি না। তারা যদি সত্যিই দায়িত্বশীল হতেন, ক্রিকেটকে ভালোবেসে থাকেন... অনেক সংগঠন থেকেই কিন্তু মানুষ পদত্যাগ করছে। তারাও চাইলে করতে পারে। কারণ একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেটা হলে হতে পারে।'

এসময় নাজমুল আবেদীন জানান, প্রস্তাব এলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বসে নিজের ধারণা ও পরিকল্পনাগুলো জানাতে প্রস্তুত তিনি।

'অবশ্যই! ওখানে যদি ইনপুট দেওয়ার সুযোগ থাকে, অংশগ্রহণ করব। আমার মনে হয়, শুধু আমার কথা বললেই হবে না। যারা এসব বিষয়ে অবগত আছে, ধারণা আছে তাদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া দরকার। বর্তমান অবস্থা কী বা কেমন হতে পারে সেই ধারণা নিলে তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব সহজ হয়।'

'আমি এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরই মধ্যে তারা কিন্তু বলেছেন, তারা সিস্টেমটা ঠিক করবেন। একই মানুষ রেখে যদি সিস্টেম ঠিক করা যায়, তাতে কোনো ভুল নেই। সিস্টেম ঠিক হলেই ক্রিকেট ভালো থাকবে।'

এআর

Link copied!