ঢাকা: সরকার পতনের পর প্রায় সব জায়গায়ই পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে ঢেলে সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও।
পদত্যাগ করেছেন খোদ নাজমুল হাসান পাপনও। কিন্তু কোনোভাবেই বাফুফে সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। এই পদটি যে ছাড়তে রাজি নন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী বিক্ষুব্ধ সময়ে সালাহউদ্দিন আর বাফুফেতেও আসেননি। অসুস্থতার কারণে গত ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত মাঝে তিন মাস আসা হয়নি। এর বাইরে গত ১৬ বছরে সপ্তাহে ৪-৫ দিনই বাফুফেতে আসতেন।
শনিবার যানজট কম থাকায় অনেক কর্মসূচি রাখতেন। অনেক সময় শুক্রবারসহ ছুটির দিনগুলোতেও ভবনে তাকে পাওয়া যেত। সালাহউদ্দিন বাফুফে ভবনে এলেই তার কক্ষে ভিড় জমাতেন বাফুফের অন্য পদাধিকারীরা। সালাউদ্দিন আসেন না বলে এখন তাদেরও ভিড় নেই।
সালাহউদ্দিনের বাফুফেতে না আসার বেশ কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ, সরকার বদল। দ্বিতীয় কারণ, কিছু ফুটবল-সমর্থকের আন্দোলন ও পদত্যাগের সময় বেঁধে দেওয়া। এই দলে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলও (বিএনপি)। সংগঠনটির ক্রীড়া সম্পাদক জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের নেতৃত্বে সেই জমায়েত থেকে সালাহউদ্দিনকে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানে শারীরিক হেনস্তারও হুমকি আসে। একদল নারী খেলোয়াড় ও সংগঠকও সালাহউদ্দিন ও নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের পদত্যাগের দাবিতে বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে।
এ ছাড়া আরও ৪৯ জনের সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে মতিঝিল থানায়। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সালাহউদ্দিন আপাতত বাফুফে ভবনে আসা এড়িয়ে চলছেন। তবে আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় এখনো অটল আছেন তিনি।
কিন্তু বাফুফে থেকে সরে গেছেন বাফুফের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ১৬ বছরের টানা সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিন দিন পরই তিনি পদত্যাগ করেছেন। ফলে পদটি শূন্য হয়ে আছে। সিনিয়র সহসভাপতি বাদে বাফুফেতে চারজন সহসভাপতি আছেন।
তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ। আরেক সহসভাপতি বাফুফের উন্নয়ন কমিটির প্রধান আতাউর রহমান ভূঁইয়া কানাডায়।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলাম। দেখি, কবে ফেরা যায় দেশে।’ এই ফাঁকে বাফুফের আগামী নির্বাচনের খোঁজখবরও নিলেন এই ব্যবসায়ী।
বাফুফের একমাত্র সহসভাপতি হিসেবে সক্রিয় আছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। তবে সভাপতি তো বটেই, চার সহসভাপতির কেউই ৫ আগস্টের পর আর বাফুফেতে আসেননি। সবার কক্ষই বন্ধ। ফলে নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সাংবাদিকদের আড্ডাটাও হারিয়ে গেছে। ভবনের চারতলায় যথারীতি মেয়েরা থাকেন। সকালে অনুশীলন আর দুপুরে জিম করেন তারা। কঠোর নিরাপত্তাবলয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যার কাজে ব্যস্ত।
এরই মধ্যেই একটা সমস্যার উদয় হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বাফুফের যেকোনো চেকে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি কাজী নাবিল-এই তিনজনের মধ্যে অন্তত দুজনের স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু সালামের পদত্যাগ ও নাবিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চেকে স্বাক্ষর করা নিয়ে বড়সড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সমস্যা সমাধানে ৩১ আগস্ট নির্বাহী কমিটির জরুরি অনলাইন সভা হয়েছে। যেটিতে কাজী সালাহউদ্দিন বাসা থেকে অংশ নিয়েছেন। চার সহসভাপতির মধ্যে ছিলেন শুধু ইমরুল হাসান। ইমরুলকে অর্থ কমিটির প্রধান করার পাশাপাশি চেকে সই করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে সেই সভায়।
২১ সদস্যের বাফুফের নির্বাহী কমিটিতে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি বাদে সদস্য ১৫ জন। তার মধ্যে আগেই সদস্যপদ ছেড়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক নীলফামারীর আরিফ হোসেন মুন। সরকার বদলের হাওয়ায় নিখোঁজ ঢাকার সংগঠক মহিদুর রহমান, নোয়াখালীর সাইফুল ইসলাম, সিলেটের মহিউদ্দিন আহমেদ।
সদস্যদের বাকি ১১ জনের মধ্যে নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার, মিডিয়াপ্রধান জাকির হোসেন চৌধুরী, সাবেক ফুটবলার ইলিয়াস হোসেন, সত্যজিৎ দাশ রুপু, আমের খান, সংগঠক টিপু সুলতান, ইমতিয়াজ সুবজ বাফুফেতে মাঝেমধ্যে ঢুঁ মারেন।
দৈনন্দিন কাজ ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন বেতনভুক্ত কর্মীরাই। ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটিসহ বাফুফের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী ৭০ জনের বেশি। তারা সবাই অফিস করছেন নিয়মিত। ফলে কোনো কাজই থেমে নেই।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :