রাজশাহী ক্রীড়াঙ্গণের জীর্ণদশা

স্টেডিয়াম থেকে খুলে নেওয়া কয়েকশ ফ্লাডলাইট প্রতিস্থাপন হয়নি আজও

  • জনাব আলী, রাজশাহী | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম
স্টেডিয়াম থেকে খুলে নেওয়া কয়েকশ ফ্লাডলাইট প্রতিস্থাপন হয়নি আজও

রাজশাহী: রাজশাহীর সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহরের তকমা রয়েছে দেশজুড়ে। নির্মল বায়ুর শহর হিসাবে রাজশাহী শহর ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অফ দ্যা ইয়ার-২০২০’ অ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত হয়। শহরে রয়েছে দুটি স্টেডিয়াম। তার একটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম (পূর্বের নাম রাজশাহী জেলা স্টেডিয়াম) আর অন্যটি বিভাগীয় স্টেডিয়াম। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আরও একটি স্টেডিয়াম। অনেক আগে থেকেই রাজশাহী শহরের ক্রিকেট প্লেয়ারদের দেশজুড়ে রয়েছে খ্যাতি। শহরটির প্রতিটি পাড়ামহল্লায় বছরজুড়েই চলে ছোট-বড় ও মাঝারি ধরনের ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট। স্থানীয়দের মাঝেও রয়েছে খেলাধুলার প্রতি চরম আগ্রহ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে ২০০৪ সালে নির্মিত হয় রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম। যার দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজারের বেশি। অন্যদিকে, জেলা স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু ১৯৬০ সালে। এখানে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২০ হাজারের বেশি।

বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের তিনটি এবং ২০১০ সালে দক্ষিণ এশীয় গেমসের চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ইন্দো-বাংলা গেমসে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটিও রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার বাইরে দেশে প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল রাজশাহীতে। ১৯৭৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের এমসিসি ক্রিকেট একাদশ বনাম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল দুইদিনের একটি টেস্ট ম্যাচে অংশ নেয়। এটিই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাজশাহীর পরিচিতি ওঠে আসে ওই ক্রিকেট ম্যাচের মধ্য দিয়েই। এরপরও এমসিসি ক্রিকেট দলটি চার বার রাজশাহী সফর করেন। ১৯৯৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ ক্রিকেট দল এবং বাংলাদেশ জাতীয় দল এবং ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড ‘এ’ দল রাজশাহী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলেন এই রাজশাহীর মাটিতে।

রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম ও বিভাগীয় স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তুতি হিসাবে বিসিবির উদ্যোগে ২০০৪ সালে বসানো হয় ফ্লাডলাইট। চলতি (২০২৪) বছরের ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শেষ দফায় বিভাগীয় স্টেডিয়াম থেকে খুলে নেয়া হয় ১৬০টি ফ্লাডলাইট। বিসিবি কর্তৃপক্ষ সেগুলো খুলে নিয়ে স্থাপন করে সিলেট স্টেডিয়ামে। রাজশাহী ক্রীড়াঙ্গণের সাথে যুক্তরা বলেন, কথা ছিল, ওই সময় সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য ‘বিপিএল’ টুর্নামেন্ট শেষ হবার পরে সেগুলো আবারো প্রতিস্থাপন করা হবে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু দশ মাস অতিবাহিত হলেও আজও ফিরে আসেনি ফ্লাডলাইটগুলো। কয়েক বছর আগে রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট খুলে নিয়ে লাগানো হয়েছিল খুলনা স্টেডিয়ামে। তারও আগে ২০১২ সালে একদফা ও ২০১৫ সালে আরেক দফা এই স্টেডিয়াম থেকে ফ্লাডলাইটের বাল্ব খুলে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে লাগানো হয়। একযুগ পরেও সেই বাল্বগুলো রাজশাহীর স্টেডিয়ামে ফিরে আসেনি। বাকি যেগুলো আছে সেগুলোরও ঠিকভাবে নেই রক্ষণাবেক্ষণ। গুদামজাত করে রাখা হয়েছে বাল্বগুলো।

বিভিন্ন অজুহাতে দুটো স্টেডিয়াম থেকে কয়েক দফায় খুলে নেয়া হয়েছে অধিকাংশ ফ্লাডলাইট। বর্তমানে ছন্নছাড়াভাবে যেগুলো এখনো শোভা পাচ্ছে, সেগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে নেই তেমন কোন নড়াচড়া। ফ্লাডলাইটগুলো নিজ শহরের স্টেডিয়ামগুলোতে পুণঃস্থাপনের ক্ষেত্রে রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ও নির্বাহী বডির সদস্য সহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলাকেই দোষারোপ করছে নগরীর ক্রীড়ানুরাগী ও সচেতনরা। ক্রীড়ামোদী ও সামাজিক সংগঠণের ব্যক্তিরা বলছেন, রাজশাহীর দুটি স্টেডিয়াম থেকে ফ্লাডলাইট সরিয়ে নেওয়ায় এখানে আগামীতে ডে-নাইট ম্যাচ খেলার সুযোগ আর থাকলো না।

এই ধরনের কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করেছে রাজশাহীর ক্রীড়ানুরাগী ও স্থানীয়রা। বিভাগীয় স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, রাজশাহী শহরের স্টেডিয়ামগুলোকে রাত্রিকালীন খেলাধুলার আয়োজন থেকে চিরতরে বঞ্চিত করার অভিপ্রায় থেকেই হয়তো এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

রাজশাহীর বিভাগীয় এই স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃক পরিচালিত।  জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন আহ্বায়ক কমিটির একাধিক সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘রাজশাহীর দুটো স্টেডিয়াম থেকে কয়েকদফায় যে ফ্লাডলাইটগুলো খুলে নেয়া হয়েছে, সেগুলো ফেরত এনে প্রতিস্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা? প্রতুত্ত্বরে অধিকাংশ সদস্যই সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে নিজ নিজ বক্তব্যে যোগ করেন নানা যৌতিকতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন সদস্য বলেন, এই মুহুর্তে এবিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবেনা। 

ফ্ল্যাডলাইট সম্পর্কে জানতে চাইলে, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা ও উক্ত কমিটির সদস্য সচিব গৌতম কুমার সরকার বলেন, ফ্ল্যাডলাইটগুলো পুনঃস্থাপনের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করা হবে। আমরা এবিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবো।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর রাজশাহী জেলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল ও শ্রীলংকা জাতীয় ফুটবল দলের মধ্যে ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের ১৪ ও ১৭ জুলাই বিভাগীয় এই স্টেডিয়ামে সাউথ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সাথে বাংলাদেশের যুবারা খেলেছিল দুটো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। তারও আগে পাকিস্তানের যুবাদের সাথে দেশের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই স্টেডিয়ামেই। সর্বশেষ এশিয়া গেমস অনুর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০০৯ অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে। এরপর আর কোনো খেলা রাজশাহীতে হয়নি। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে রাজশাহীর খেলাধুলা।

এসএস

Link copied!