ঢাকা : স্কোরকার্ড মাঝেমধ্যে কতটা ভুল বোঝাতে পারে, সেটির প্রমাণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। উইকেট হারিয়েছে তারা কেবল একটি। প্রশ্ন এখানেই যে, হারাতে পারত আরও কতটি! কতবার যে পরাস্ত হলেন তাদের ব্যাটসম্যানরা, কতবার যে একটুর জন্য ব্যাটের কানা স্পর্শ করল না বল, উইকেটের পেছন থেকে ‘আহা-উহু’ ধরনের শব্দ কতবার যে করলেন কিপার লিটন কুমার দাস! তবে এসবের জন্য তো আর পুরস্কার নেই। বাংলাদেশের জন্যও তাই দিনটি শেষ পর্যন্ত হতাশাময়।
হতাশার শুরু ব্যাটিং দিয়ে। আগের দিন কিছুটা আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ল আবার। পরে বোলিংয়ে সবাই দুর্দান্ত করলেও উইকেট ধরা দিল না যথেষ্ট। জ্যামাইকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে তাই সব মিলিয়ে ভালো অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজই।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৬৪ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ রোববার ৩৭ ওভার ব্যাট করে দিন শেষ করে ১ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে।
মন্থর সারা দিনে দুই দল মিলিয়ে ৭৮.৫ ওভারে রান উঠেছে কেবল ১৬৫।
সকালে শামার জোসেফের দুর্দান্ত একটি স্পেল ভেঙে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। ইনিংসজুড়ে অসাধারণ বোলিং করে বাংলাদেশকে চাপে রাখেন জেডেন সিলস। ইনিংস শেষে তার বোলিং ফিগার অবিশ্বাস্য, ১৫.৫-১০-৫-৪!
এক ইনিংসে অন্তত ১৫ ওভার বোলিং করা পেসারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং এটিই।
স্যাবানাইনা পার্কের উইকেটে মুভমেন্ট মিলিছে দিনজুড়েই। শামার-সিলসদের পথ ধরে বাংলাদেশের পেসাররাও দারুণ বোলিং করেন। বিশেষ করে, একাদশে ফেরা নাহিদ রানা গতির ঝড় তুলে ১৫০ কিলোমিটার ছাড়ান বেশ কয়েক দফায়। পরে নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে টার্ন আদায় করে ক্যারিবিয়ানদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু উইকেট একটির বেশি পড়েনি।
ম্যাচের প্রথম দিনে ভেজা মাঠের কারণে খেলা হয়েছিল স্রেফ ৩০ ওভার। দ্বিতীয় দিনে ২ উইকেটে ৬৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দুই দফার দুটি ধসে বাকি ৮ উইকেট হারায় তারা। প্রথম দফায় ৪ উইকেট পড়ে ১৫ রানের মধ্যে। এরপর শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা ২৫ রানের মধ্যে।
দুই ধসের মধ্যে দারুণ দৃঢ়চেতা ও ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। ১১৬ বলে ৪১ রানের জুটি গড়েন তারা।
আগের দিন দুইবার জীবন পেয়ে ফিফটি করা সাদমান ইসলাম ও একবার জীবন পেয়ে অপরাজিত থাকা শাহাদাত হোসেন দ্বিতীয় দিনেও একইরকম ব্যাটিংয়ে শুরু করেন। খুব স্বস্তিতে খেলতে না পারলেও জুটি আরেকটু এগিয়ে নেন দুজন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা এই জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন শামার জোসেফ। দুর্দান্ত ডেলিভারিতে শাহাদাতকে বোল্ড করে দেন তিনি। জুটি থামে ১৯৩ বলে ৭৩ রানে।
১৪০ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে শাহাদাত ২২ রান করতে পারেন ৮৯ বল খেলে।
বাঁধ ভাঙার পর বানের জালে ভেসে যায় যেন আরও গোটা তিনেক উইকেট। অভিজ্ঞ লিটন কুমার দাস ও নবীন জাকের আলি, দুজনই আউট হন আলগা শটে।
পানি পানের বিরতির ঠিক পর আসে আরেকটি বড় ধাক্কা। সাদমানের ২০৭ মিনিটের লড়াই থামিয়ে দেন শামার জোসেফ। ১৩৭ বলে ৬৪ রান করে ফেরেন এই ওপেনার।
৯৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের হয়ে লড়াই করেন মিরাজ ও তাইজুল। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উইকেটে পড়ে থাকেন দুজন। প্রায় ২০ ওভার কোনো উইকেট পড়তে দেননি তারা।
লাঞ্চের পর শর্ট বলে তাইজুল ইসলামকে (৬৬ বলে ১৬) ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ। একটু পর সিলসের শর্ট বলে পুল করে ক্যাচ দেন তিন ঘণ্টার বেশি লড়াই করা মিরাজ (৭৫ বলে ৩৬)। লোয়ার অর্ডারকেও দাঁড়াতে দেননি সিলস।
ক্যারিবিয়ান দুই ওপেনার ব্যাটিংয়ে নামার পর খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। নতুন বলে তাদেরকে চেপে ধরেন হাসান মাহমুদ ও তাসকিন আহমেদ। এরপর নাহিদ রানা আক্রমণে এসে গতিতে নাড়িয়ে দেন মিকাইল লুইকে।
আগের টেস্টে ৯৭ রানের ইনিংস খেলা ওপেনার এবার নাহিদের বলে নড়বড়ে হয়েই শেষ পর্যন্ত আউট হয়ে যান ৪৭ বলে ১২ রান করে।
পরের সময়টায় ব্র্যাথওয়েট ও কেসি কার্টির চরম পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। বিশেষ করে নাহিদ ও তাইজুল উইকেটের সম্ভাবনা জাগান বারবার। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে রক্ষা পেয়ে যান দুই ব্যাটসম্যান। ব্র্যাথওয়েট ২৬ রানে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন তাইজুলের বলে। কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি মিরাজ।
দুই ব্যাটসম্যানই অস্বস্তিতে পড়েছেন আরও অনেকবার। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে গেছেন দুজনই। ২৪ ওভার খেলে অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৪৫।
১১৫ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত ব্র্যাথওয়েট ইনিংসটির পথে বাংলাদেশের বিপক্ষে হাজার রান ছুঁয়েছেন প্রথম ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে। কার্টি ৬০ বল খেলে অপরাজিত থাকেন ১৯ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭১.৫ ওভারে ১৬৪ (আগের দিন ৬৯/২)(সাদমান ৬৪, শাহাদাত ২২, লিটন ১, জাকের ১, মিরাজ ৩৬, তাইজুল ১৬, তাসকিন ৮, হাসান ৫*, নাহিদ ০; রোচ ১৫-২-৪৫-২, সিলস ১৫.৫-১০-৫-৪, শামার জোসেফ ১৫-৩-৪৯-৩, আলজারি জোসেফ ১৪-৩-২৯-১, গ্রেভস ৭-২-১৪-০, হজ ৪-০-১৪-০, ব্র্যাথওয়েট ১-০-১-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিস ১ম ইনিংস: ৩৭ ওভারে ৭০/১ (ব্র্যাথওয়েট ৩৩*, লুই ১২, কার্টি ১৯* ; হাসান ৭-২-১৬-০, তাসকিন ৮-৫-১১-০, নাহিদ ৯-০-২৮-১, তাইজুল ১০-৭-৭-০, মিরাজ ৩-১-২-০)।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :