বিজয়ের দিনে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪, ১০:০৩ এএম
বিজয়ের দিনে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়

ঢাকা: বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল যখন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে তখন দেশটির সেইন্ট ভিনসেন্টে সময়টা ১৫ ডিসেম্বরের শেষ প্রহর। তবে বাংলাদেশে ঘড়ির কাঁটায় তখন সময় ১৬ ডিসেম্বর ভোর ছয়টা। বাংলাদেশ দল যে সময়টায় ব্যাটিংয়ে নেমেছিল সেই সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত হয়ে ছিলেন হাজারও মানুষ। 

স্মৃতিসৌধে উপস্থিত জনতা যখন বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা করে ফিরছিলেন তখনই সূদূর ক্যারিবিয়ান দ্বীপ সেন্ট ভিনসেন্টে থেকে ভেসে এলো শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ের সংবাদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়ে ১-০ তে এগিয়ে গেল।

 

বাংলাদেশের ইনিংসের বড় একটা সময় জুড়ে ঘিরে ধরেছিল হতাশা। শামিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভারে ৫১ রান এনে দিলে ১৪৭ রানের সংগ্রহ পায় সফরকারীরা। তখন কিছুটা আশা জেগে ওঠে। কিংসটাউনের সেন্ট ভিনসেন্টে যে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র একটি!

এই রান তাড়া করতে গিয়ে বিশাল ব্যবধানে হারার উপক্রম হয়েছিল উইন্ডিজের। রোভমান পাওয়েল একাই ম্যাচ বদলে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত শেষ ওভার ৭ রানের জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত। প্রথম ওভারে হাসান মাহমুদ দিয়েছেন মাত্র এক রান। তাসকিন আহমেদ এসেই নিয়ে নিয়েছেন ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট। সে ওভারে এসেছে মাত্র ১ রান। শেখ মেহেদী হাসানের পরের ওভারেও মাত্র ১ রানের বিনিময়ে এসেছে ১ উইকেট।

৩ ওভার শেষে ৩ রান উইন্ডিজের। এমন অবস্থায় তানজিম হাসান সাকিব বোলিংয়ে এসে দিয়েছেন ২৫ রান! ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারত। কিন্তু মেহেদী আবার এসে জনসন চার্লসকে ফিরিয়ে দিলেন। ১২ বলে ২০ রান করে বিদায় চার্লসের। তখন কে বুঝতে পেরেছিল তাকে পেরোতেই কষ্ট হয়ে যাবে বাকিদের!

সপ্তম ওভারে আন্দ্রে ফ্লেচারকে শূন্য হাতে ফিরিয়েছেন মেহেদী, ২ বল পর তাকে রিভার্স করতে গিয়ে আউট রোস্টন চেজ। সপ্তম ওভারে ৩৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় স্বাগতিক দল। ১০ ওভারে ৫৭ রান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মেহেদী ১৩ রানে পেয়েছেন ৪ উইকেট।

শেষ ১০ ওভারে ৯১ রান দরকার ছিল উইন্ডিজের। তানজিম তার দ্বিতীয় ওভার করতে এসে মাত্র ২ রান দিয়েছেন এবং ফিরিয়েছেন গুড়াকেশ মোতিকে। পরের ওভারে আকিল হোসেনও বিদায় নিলে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা নেমে আসে ৩ উইকেটে। উইন্ডিজ তখনো লক্ষ্য থেকে ৮৭ রান দূরে।

কিন্তু রোভমান পাওয়েল তখনো ছিলেন, আর মাত্রই নেমেছেন রোমারিও শেপার্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কোনো ফিফটি না থাকলেও ১৪৩ স্ট্রাইকরেটে নিয়মিত ম্যাচ বদলে দেওয়া ক্যামিও খেলতে পারেন তিনি।

১৩তম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে একটি চার মেরে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন পাওয়েল। রিশাদ হোসেনের পরের ওভারে পাওয়েল ও শেপার্ড ৩ চারে তুলে নিলেন ১৫ রান। তবে পাওয়েল যেন নিজের সেরাটা তাসকিনের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন। সে ওভার শুরু হলো ডিপ কাভারে ছক্কা দিয়ে, শেষ হলো একদম তাসকিনের মাথার ওপর দিয়ে ছকায়। মাঝে আরেক ছক্কায় এসেছে ২৩ রান।

১৬তম ওভারের শুরুটা ভালো করেছিলেন তানজিম। প্রথম তিন বলে দিয়েছেন মাত্র ২ রান। চতুর্থ বলে ওয়াইড দিলেন, পরের বলটা মিস হিট। কিন্তু উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চার হয়ে গেল। পরের বলে আবার চার। ওভার থেকে এল ১২ রান। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ২৮। রিশাদকে শেপার্ড এক ছক্কা মারলেও এসেছে ৮ রান।

১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোমারিও শেপার্ড (২২)। তাসকিনের ওভার থেকে ২ রান আসায় শেষ ২ ওভারে ১৮ রান দরকার ছিল উইন্ডিজের।  প্রথমে বলে স্ট্রাইক বদলেছেন পাওয়েল। পরের বলটা আলজারি জোসেফের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গেল, কিন্তু স্লিপ না থাকায় চার। পরের চার বলে মাত্র ৩ রান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শেষ বলে রান নিয়ে স্ট্রাইকে চলে গেলেন জোসেফ। ডাগ আউটে কোচ ড্যারেন স্যামি ও রেইফারের বিরক্তি ছিল দেখার মতো।

কিন্তু বাংলাদেশের ফিল্ড সেটআপের বোকামি কাজে লাগিয়ে প্রথম বলেই স্ট্রাইক বদলে ফেললেন জোসেফ। ৫ বলে ৯ রানের দায়িত্ব পেলেন পাওয়েল। হাসানের পরের বল ডট। পরের বলটি ওয়াইডেরও বাইরে ছিল, সেটাই মারতে গিয়ে লিটনের হতে ক্যাচ দিলেন ৩৫ বলে ৬০ রান করা পাওয়েল।

লিটনের ভুলে পরের বলে বাই রান এল ১টি। কিন্তু পরের বলে জোসেফের স্টাম্প ভেঙে দিয়ে ঝামেলা মেটালেন হাসান মাহমুদ। 

এসএস

Link copied!