ঢাকা : বাংলাদেশ ফুটবলা ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেও বিদ্রোহী ফুটবলারদের মাঠে ফেরাতে পারেননি। রোববার পর্যন্ত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ১৮ ফুটবলার ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে যোগ দেননি। কোচ ও খেলোয়াড়দের দ্ব›দ্ব ঘিরে বেশ বিপাকের মধ্যেই পড়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফে।
অবস্থাদৃষ্টে যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে ফুটবল ফেডারেশন। মাঠে ফেরা না ফেরার বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিদ্রোহী ফুটবলারদেরই। বর্তমান নারী ফুটবলের সংকট নিয়ে কথা বলেছেন বাফুফে সহ-সভাপতি সাব্বির আহমেদ আরেফ।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাফুফে ভবনে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানালেন, সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ায় আছে বাফুফে। সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে দ্রুতই। সভাপতি খুবই ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখছেন। আগামী বুধবার কিংবা বৃহস্পতিবার আবারো যুক্তরাজ্যে যাবেন বাফুফে সভাপতি। এর আগে নারী ফুটবলের সংকট নিরসনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আরেফ জানান, নারী ফুটবলের চলমান সমস্যা সমাধান হওয়ার খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করবে বাফুফে।
ফুটবলার ও কোচ দ্বদ্বের প্রসঙ্গে আরেফ বলেন, ‘যার যার ভালো, তার তার বুঝতে হবে। এই মেয়েরা আমাদের জাতীয় অহংকার। তারাও তাদেরকে ভাবতে হবে। কোচ কোচের জায়গায় থাকবে। খেলোয়াড় খেলোয়াড়ের জায়গায় থাকবে। কোচের দায়িত্ব হলো প্রশিক্ষণ নেওয়া। খেলোয়াড়ের দায়িত্ব হলো প্রশিক্ষণ নেওয়া। যার যার ইমেজ তাকেই ধরে রাখতে হবে। আমার মনে হয়, এটার সমাধান খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।’
কোচ বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটলারদের সমস্যাটা গত অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই হয়ে আসছিল। কোচ ও খেলোয়াড় দ্বন্দ্বের মধ্যেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
গত জানুয়ারিতে যখন নতুন করে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করেন কোচ বাটলার, তখনই বিপত্তি বাধে। এই কোচের অধীনে অনুুশীলন বয়কট করেন সাবিনারা। ফলে নতুন করে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আবারো সামনে আসল।
গত ৩০ জানুয়ারি সাফজয়ী কোচ বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ চেয়ে বাফুুফের কাছে চিঠি দেয় বিদ্রোহী ১৮ নারী ফুটবলার।
‘হয় কোচ থাকবে, নতুবা আমরা’- সাবিনাদের এমন শক্ত অবস্থানে ফুটবলে অঢ়লাবস্থা তৈরি হলে ৭ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বাফুফে। এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাফুফে সভাপতির দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই দিন গভীর রাতে বাফুফেতে ছুটে যান তাবিথ আউয়াল। সাবিনাদের সঙ্গে আলোচনা বসেন। তাদের মাঠে ফেরার অনুরোধ করেন বাফুফে প্রধান।
কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনঢ় থাকেন তারা। ফলে বিদ্রোহী ফুটবলারদের বাদ দিয়েই সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচের দল নিয়ে ভাবছে বাফুফে। নতুন ফুটবলারদের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন কোচ বাটলার। বিশেষ কমিটির কাজ চলাকালীন কোচ বাটলার বিস্ফোরক মন্তব্য করেন যে, ‘হয় সাবিনারা থাকবেন, না হয় তিনি থাকবেন।’
গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নিজের শক্ত অবস্থান থেকে সরে এসে ইংলিশ কোচ বলেছেন, সাবিনারা অনুশীলনে যোগ দিলে তাদের স্বাগত জানাবেন তিনি। কিন্তু বিদ্রোহী ফুটবলাররা অনড় অবস্থানেই আছেন।
গত অক্টোবরে নারী ফুটবলারদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছি গিয়েছিল।
জানা যায়, এবার নতুন করে আগামী মঙ্গলবারের (১১ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নতুন করে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি করবে বাফুফে। এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পে থাকা ৩০ ফুটবলারের মধ্যে বিদ্রোহী ছাড়া বাকি ১২ জনের সঙ্গে চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। এই ১২ ফুটবলারসহ বর্তমানে কোচ বাটলারের ক্যাম্পে আছেন ৩৭ নারী ফুটবলার। তারা বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়। ভবিষ্যতের জন্য নতুনদের তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন কোচ বাটলার।
বিদ্রোহী ফুটবলারদের বিবেচনায় না রেখে নতুনদের মধ্য থেকে ফুটবলার বাছাই করে আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য দল গঠন করা হবে জানা গেছে। সিনিয়র ফুটবলার সাবিনা খাতুনদের ছাড়া কী দল গঠন হচ্ছে?
এ ব্যাপারে বাফুফে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না।’
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :