ঢাকা: রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মারা গেছেন তরুণ সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তিনি সর্বশেষ মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে কর্মরত ছিলেন।
শুক্রবার (১ মার্চ) অভিশ্রুতির মরদেহ শনাক্ত করেন তার সাবেক সহকর্মী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের প্রধান প্রতিবেদক গোলাম রাব্বানী।
এদিকে মুসলিম নাকি হিন্দুধর্মাবলম্বী; এই বিতর্কে মর্গে পড়ে আছে নিহত এই তরুণীর মরদেহ। বাবা দাবি করা ব্যক্তি বলছেন, তার নাম বৃষ্টি খাতুন। তিনি ও তার মেয়েসহ পরিবার মুসলিম ধর্মাবলম্বী। সেই অনুযায়ী দেখান বৃষ্টির জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কপিও। তবে সহকর্মী ও পরিচতরা বলছেন, মরদেহটি অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর।
আরও পড়ুন<<>>মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ফোনে মায়ের সঙ্গে কালেমা পড়ে নেন রকি
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে ছুটে ঢাকায় এসেছেন বৃষ্টি খাতুনের বাবা সবুজ শেখ। রাত থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে পড়ে থাকা মেয়ের মরদেহ দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করেন। তবে এরপরই বাধে বিপত্তি। মরদেহটি দেখে তার সহকর্মী ও পরিচিতরা দাবি করেন, নিহত তরুণীর নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। সনাতন ধর্মের অনুসারি তিনি। তবে তাদের এই দাবি কোনোভাবেই মানতে নারাজ বাবা পরিচয় দেয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী সবুজ শেখ।
সবুজ শেখ ও স্বজনরা তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করছিলেন, ঠিক তখন সনাতন ধর্মের কয়েকজন তার ফেসবুক আইডি ও সিভি দেখাচ্ছিলেন সাংবাদিকদের। তাদের চাওয়া, পূজার্চনা করা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল বাবা- মাকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হোক।
আরও পড়ুন<<>>লাশ পুড়ে অঙ্গার, হাতঘড়ি দেখে প্রকৌশলী মিনহাজকে শনাক্ত করল পরিবার
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব দে সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ওই তরুণীর নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। সনাতন ধর্মের অনুসারি তিনি। পূজার্চনায় নিয়মিত অংশ নিতেন রমনা কালী মন্দির ও ঢাকেশ্বরীতে।
রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা যান এই তরুণীসহ ১০ জন। তাদের মধ্যে ৯ জনের মরদেহ ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়ে গেলেও মর্গেই পড়ে রয়েছে এই তরুণীর মরদেহ।
আরও পড়ুন<<>>অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে যা বললেন কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার
অভিশ্রুতির গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। সদ্য ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। ঢাকার মৌচাকের সিআইডি অফিসের বিপরীতে একটি মেসে থাকতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। কর্মক্ষেত্রে উদ্যম ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সবার সাথে সহজেই মিশে যেতে পারতেন।
অভিশ্রুতির বান্ধবী জশোয়া জানান, অভিশ্রুতি লিখতে ভালোবাসতেন। এর পাশাপাশি ঘুরে বেড়ানো ছিল তার শখ। বেইলি রোডে গিয়েছিলেন হয়ত সুন্দর এক সময় কাটাতে। তবে কে জানত সময়টা এতটাই ভয়ংকর হবে! শেষ জানিয়েছিলেন সুস্থ হলে আবার ফিরবেন কাজে, তবে তা আর হয়ে উঠল না।
মাসখানেক আগে অসুস্থতার কারণে চাকরি ছেড়েছিলেন অভিশ্রুতি। গতকাল আগুনের ঘটনার পর দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের চিফ রির্পোটার খোঁজ পান সাবেক আরেক সহকর্মী তুষার হাওলাদারের সঙ্গে যিনি ছিলেন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন জানা যায়, অভিশ্রুতি ছিলেন তুষারের সাথে। সহকর্মীরা অভিশ্রুতির মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে তার পরিবারকে জানানো হয়।
আইএ
আপনার মতামত লিখুন :