ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের জন্য দুটি ইসলামী দলের দাবির বিষয়ে সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে পরিস্থিতি জটিল করার চেষ্টা হলে তা প্রতিহত করা হবে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বিষয়ে তারা এখনই দল বা সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে চান না। তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ বলছেন কে, কী বলল সেটাকে গুরুত্ব দেওয়ার যৌক্তিকতা নেই।
রাজধানীর ধোলাইপাড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণ ও নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে দুটি ইসলামী রাজনৈতিক দল।
গত শুক্রবার চরমোনাইর পীর ও ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম ভাস্কর্য নির্মাণের স্থল ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় এক সমাবেশে বলেন, ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের চক্রান্ত তৌহিদি জনতা রুখে দেবে। রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে মূর্তি স্থাপনের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে। যদি সরে না আসে, তাহলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
একই দিনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মূর্তি তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন করা হলে তা হবে তার আত্মার সঙ্গে বেইমানি।
গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকরা।
এ সময় সেতুমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনো করোনা আক্রান্ত। তিনি এখন সামনে আসবেন না। উনি সুস্থ হলে এটা নিয়ে হয়তো আপনাদের সঙ্গে কথা বলবেন বা ওনার সঙ্গে আপনারা আলাপ করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ভাস্কর্যকে তারা মূর্তি বলছে। দুটি এক জিনিস না। অনেক মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে। এ বিষয়টাকে নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে যারা মিলিয়ে বিরোধিতা করতে চায়, তাদের ভেবে দেখা উচিত। অন্যায় দাবি নিয়ে সমস্যা করলে জনগণ বিচার করবে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভাস্কর্য কী জিনিস এটা তারা জানেন না। তাদের শিক্ষার অভাব আছে। শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য তারা বোঝে না। স্বাধীনতা সংগ্রামেও এরা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতা কি ঠেকাতে পেরেছে। তাই এদের কথা আমলে নেওয়া দরকার নেই। তবে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করা দুরভিসন্ধিমূলক। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান দেখানোর যে নাগরিক দায়িত্ব তাতে অন্তরায় সৃষ্টি করা সহ্য করা হবে না। যে কোনো বাধা প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো সব সময় প্রস্তুত। এরা দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদের প্রতিহত করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাস্কর্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিরই অংশ। কারো বিরোধিতায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ ফুট উচ্চতার আরেকটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এ লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের বহু স্থানে বঙ্গবন্ধুর এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ভাস্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্য আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বর্তমান সরকার অত্যন্ত সক্ষম সরকার। কারো বিরোধিতায় ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ হবে না।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :