• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

রণাঙ্গনে বিজয়ের গন্ধ, উত্তপ্ত জাতিসংঘ


নিউজ ডেস্ক: ডিসেম্বর ৪, ২০২০, ১০:৪১ এএম
রণাঙ্গনে বিজয়ের গন্ধ, উত্তপ্ত জাতিসংঘ

ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধ এক ভিন্ন মাত্রা পেতে শুরু করে। বর্ষা, শরত আর হেমন্ত পেরিয়ে শুরু হয় শীতের মৌসুম। গ্রাম-বাংলাজুড়ে শীত নামে। কিন্তু শীত নেই মুক্তিকামী বীর বাঙালির। হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করতে দেহের রক্ত যেন টগবগিয়ে ফুটছে। একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে চারিদিকে বীর বাঙালির বিজয়, আর পাকহানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর। দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যুদস্ত হতে থাকে উর্দুভাষী হানাদাররা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে আকাশে, বাতাসে- সর্বত্র। সেই বিজয়ের বার্তা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের করে তোলে আরো দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য।

এদিন শত্রুমুক্ত হয়-লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার দেবীদ্বার, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, জামালপুরের ধানুয়াকামালপুরসহ আরও কিছু এলাকা।এ এলাকার মানুষেরা এদিন প্রথম মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের বাতাস বুক ভরে টেনে নেন।

এদিন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে: কর্নেল সি আর দত্ত এবং জেড ফোর্সের মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সিলেটের কানাইঘাট দখলের পর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেন। ৩ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী শমশের নগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করে। ৮ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর দখল করে যশোরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ১১ নং সেক্টরে যৌথ বাহিনী বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়ে পাকিদের শক্ত ঘাটি কামালপুর বিওপি দখল করে। পাকবাহিনী দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া রেল স্টেশন দখলে রাখার সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস গাজী বিশাখাপত্তম বন্দরের কাছে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ভারতীয় বিমান এবং নৌবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বার বার ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনা প্রভৃতি এলাকায় সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। 

এদিকে রণাঙ্গনে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আরেক যুদ্ধ চলছিল জাতিসংঘে।জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও তখন চরম উত্কণ্ঠায়। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পত্রে তারা উল্লেখ করেন, আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।

পাকিদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধীরা অবশ্য তখনো হাল ছাড়েনি। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছে। 

এদিন দুপুরে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। এখন শত্রুর প্রতি চরম ধ্বংসাত্মক প্রত্যাঘাত হানার সময় এসেছে। রাওয়ালপিণ্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশে যুদ্ধ চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় চাপ মোকাবিলা করা হচ্ছে। মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেবে বলে চীন ওয়াদা করেছে। 

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!