• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নিতে আগ্রহ মালদ্বীপের


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৬, ২০২১, ০৩:২৪ পিএম
বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নিতে আগ্রহ মালদ্বীপের

ফাইল ছবি

ঢাকা : বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালদ্বীপ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লা শহিদ গত নভেম্বরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে ফোন করে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। সে সময় তিনি পলিমাটি নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলের বিষয়েও সম্মতি দেন। খবর বিবিসি। 

মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান বলেন, খুব শিগগিরই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে সরাসরি বৈঠক হবে। আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি নেওয়া এবং সরাসরি জাহাজ চলাচলের মতো বিষয়গুলোও থাকবে। ঢাকায় পররাষ্ট্র ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে মালদ্বীপকে বালু ও পলিমাটি নেওয়ার এ প্রস্তাব বাংলাদেশই প্রথম দিয়েছিল অন্তত চার বছর আগে।

বাংলাদেশে তখন বিশেষ করে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজ শুরুর সময়ে এটি আলোচনায় এসেছিল। কারণ ওই বন্দরের জন্য পটুয়াখালীর রামনাবাদ চ্যানেলে ব্যাপক ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়। ড্রেজিং ডিস্পোজাল অর্থাৎ ড্রেজিং করে যে বালু ও পলি সরানো হয় সেগুলো রাখা বা সরানোটা ড্রেজিংকে ব্যয়বহুল করে তোলায় বিশেষজ্ঞরা এগুলো রপ্তানির পরামর্শ দেন।
 
হাইকমিশনার নাজমুল হাসানও জানান, কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ এমন প্রস্তাব মালদ্বীপকে দিয়েছিল। কিন্তু পরে নানা কারণে তা নিয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। গত বছর আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যদিও করোনার কারণে খুব বেশি অগ্রসর হওয়া যায়নি। তবে সম্ভাবনাটি অত্যন্ত উজ্জ্বল। কিছু সমস্যার সমাধান করা গেলে এটি বাংলাদেশের জন্য দারুণ বিষয় হবে বলে আশা করছি। আমরা বর্তমানে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্ভাব্য সফর নিয়ে কাজ করছি। ওই সফরের সময় এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। আশা করি এরপর টেকনিক্যাল লেভেলে কাজ হবে এবং আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি হবে। আর তখনই আমরা বলতে পারব যে, আসলে কী পরিমাণ পলিমাটি রপ্তানি করা সম্ভব এবং কী প্রক্রিয়ায় সেটা হবে।

২০১২ সালে মালদ্বীপ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এরপর থেকে দেশটিতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু মালদ্বীপের সাগর থেকে আহরিত বালু দিয়ে নির্মাণকাজ বা মাটি ভরাটের কাজ করা যায় না বলে দেশটিকে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পলিমাটি ও বালু আমদানি করতে হয়। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা অগ্রসর না হওয়ায় এক পর্যায়ে এ বিষয়ে ভারত থেকে এসব নিতে  চুক্তি করে মালদ্বীপ।

পলিমাটি ও বালু নিয়ে ভারতের একটি নীতিমালাও আছে এবং দেশটি মালদ্বীপে রপ্তানির জন্য একটি কোটাও সংরক্ষিত করে রেখেছে। নাজমুল হাসান বলছেন দেশটি দ্বীপভিত্তিক। সেখানে অনেক দ্বীপের ব্যাপক উন্নয়ন করা হচ্ছে। আর আইল্যান্ড বা দ্বীপ তৈরির জন্যই উপরিভাগে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি দিতে হয়। কৃষির জন্যও মালদ্বীপ পলিমাটি ব্যবহার করে। তাই কৃষি ও আইল্যান্ড উন্নয়নের জন্য পলিমাটি যেমন দরকার, তেমনি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তাদের দরকার প্রচুর বালু। বাংলাদেশের সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার বালুর মান উন্নত হওয়ার এগুলো নিয়ে তাদের আগ্রহ আছে।

বুয়েটের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে মালদ্বীপে বালু ও পলিমাটি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো পরিবহন সমস্যা। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল চুক্তি না থাকায় বাংলাদেশ থেকে জাহাজকে সিঙ্গাপুর হয়ে মালদ্বীপ যেতে হয় বলে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যায়। অথচ ভারত বা শ্রীলঙ্কা থেকে সরাসরি জাহাজ মালদ্বীপ যেতে পারে বলে তাদের পরিবহন খরচ অনেক কম। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দ্বীপগুলোতে ব্যাপক ভূমি উন্নয়নকাজ করতে হবে মালদ্বীপকে। এজন্য তাদের প্রচুর পলিমাটি ও বালু প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!